ছাত্ররাজনীতির গৌরব ফিরিয়ে আনতে ডাকসু নির্বাচন অবশ্যই দরকার: রাষ্ট্রপতি

0
437
blank
blank

ঢাবি: ছাত্ররাজনীতির গৌরব ফিরিয়ে আনতে ডাকসু নির্বাচন অবশ্যই দরকার বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন মাস্ট। না হলে দেশ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যাবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প নেই। এ সময় তিনি বর্তমান ছাত্ররাজনীতিতে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের প্রাধান্য বেশি বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের সময়ের রাজনীতি আর আজকের ছাত্ররাজনীতির মধ্যে তফাৎ অনেক বেশি। ষাটের দশকে আমরা যারা ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দেশ ও জাতির কল্যাণ। দেশের মানুষকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের কোন স্থান ছিল না। ছাত্ররাই ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব দিতো। লেজুড়বৃত্তি বা পরনির্ভরতার কোনো জায়গা ছিল না। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির বর্তমান হালচাল দেখে মনে হয় এখানে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের প্রাধান্য বেশি।
বর্তমান ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে ছাত্রদের বয়সের পার্থক্য অনেক বেশি হওয়ায় সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, কিছু কিছু ছাত্রনেতাদের বয়স হয় চল্লিশোর্ধ্ব। এই বয়সে তাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে-মেয়েই থাকার কথা। কিছু ক্ষেত্রে অছাত্ররাই ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব দেয়, নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে ছাত্ররাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষ এমনকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা, সমর্থন ও সম্মান ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। এটি একটি দেশ ও জাতির জন্য শুভ নয়। তাই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে ছাত্ররাজনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আদর্শভিত্তিক ও কল্যাণমুখী ছাত্ররাজনীতির নিরবচ্ছিন্ন চলার পথ নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেও আজকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, মনে অনেক খায়েশ ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব। কিন্তু ভর্তি তো দূরের কথা আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমটাও তুলতে পারিনি। আশ্চর্যের বিষয় হল যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিই হতে পারিনি আজ আমি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে ছিলেন, কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যাঞ্চেলর অধ্যাপক অমিত চাকমা। সমাবর্তনে তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি দেয়া হয়। রাসায়নিক প্রকৌশলী ও পেট্রোলিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছেন অধ্যাপক অমিত চাকমা। সমাবর্তনে বক্তা করায় বাংলাদেশে জন্ম নেয়া অমিত চাকমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার জন্মভূমির শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আমার কর্মজীবনে সফলতার কারণ, আমি মেধাবী না হলেও মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করেছি।
সমাবর্তনের মাধ্যমে ডিগ্রি নেয়াই শেখার জগতের সমাপ্তি নয়, বরং একটি মাইলফলক বলে মনে করেন অমিত চাকমা। তিনি বলেন, এই ডিগ্রি ও মেধাকে যেভাবে কাজে লাগাবেন, আপনার জীবন সেভাবেই চলবে। ভাল-মন্দের বিবেচনা শুরু করেন নিজেকে দিয়ে। যে যত জ্ঞান অর্জন করবেন, তার ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা তত বেশি থাকবে। নীতির ওপর তত বেশি অটল থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
নিজের নীতিতে অটল থাকতে প্রয়োজনে একলা চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিবেন না। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে দিবেন না। এতে যদি আপনার পাশে কেউ না থাকে তবে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে’ অনুসরণ করুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সমাবর্তন পাওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধু সার্টিফিকেট অর্জন বা পরীক্ষায় ভালো ফল করে দেশের কল্যাণ সাধন করা সম্ভব নয়। এ জন্য ভালো মানুষ হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানই তোমাদের জীবনসংগ্রামের মূলমন্ত্র ও সম্বল।
তিনি বলেন, সকল শিক্ষার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ। ধৈর্য, তিতিক্ষা ও সাধনা বাদ দিয়ে জ্ঞানের দীপশিখা জ্বলে না- এ কথা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। আমরা যদি বিজ্ঞানে, শিল্পে, কাব্যে ও সাহিত্যে গভীর রেখাপাত করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে চাই তবে যেন শ্রম, সাধনা, অধ্যবসায় ও ঐকান্তিতার সঙ্গে জ্ঞানার্জনে ব্রতী হই।