জগন্নাথপুরে ইট সলিং সড়কে ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ চলছে

0
520
blank
blank

জগন্নাথপুরে একটি গ্রামের ইট সলিং সড়কে এবার ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ চলছে। এ বাঁধের নির্মাণ কাজ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পিআইসি’র (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সভাপতি। কারণ বাঁধের আশপাশে ঘরবাড়ি থাকায় মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। ওই বাঁধের জন্য মাটি আনতে হচ্ছে পাশের গ্রামের ছোট হাওর থেকে। শুক্রবার এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
এদিকে এ বাঁধের কাজ সাতদিনের মধ্যে শেষ করা হবে বলে উপজেলা কাবিটা কমিটি সভাপতি জগন্নাথপুরের ইউএনও নিকট মুচলেখা প্রদান করেছেন প্রকল্পের সভাপতি। এরই মধ্যে দুইদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। কাজ হয়েছে মাত্র দুই শতাংশের মতো।
জানা যায়, উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের গয়াসপুর গ্রামস্থ টাঙ্গুয়া হাওরে গয়াসপুর গ্রামের ইট সলিং সড়কে প্রথমবারের মতো এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক ১৪০০ ফুট লম্বা বাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান করা হয় গত মাসের  ১৩ ফেব্রুয়ারি। সিআইসি নং ৩১। ওই বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২২ লাখ টাকা।
বাঁধের আশপাশে মাটির তীব্র সংকট থাকায় কাজ শুরু করতে বিপাকে পড়েন পিআইসির সভাপতি। সরকারের নির্ধারিত সময় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সম্পন্ন করার কথা থাকলেও যথাসময়ের কাজ শেষ হয়নি। শনিবার পর্যন্ত ওই বাঁধে সামান্য পরিমাণের মাটি পড়েছে। প্রকল্পের সভাপতি জানিয়েছেন ৫দিন আগ থেকে তিনি কাজ শুরু করেছেন।
ওই বাঁধের কাজের কোনো অগ্রগতি না থাকায় উপজেলা কাবিটা কমিটির সভাপতি ও জগন্নাথপুরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ পিআইসির সভাপতি সানু মিয়াকে ডেকে এনে জানতে যান কেন কাজ শেষ হয়নি।  দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা না হলেও তাকে গ্রেফতার করা হবে। এ সময় ওই পিআইসি সাত দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে মুচলেকা প্রদান করেছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, গয়াসপুর গ্রামের লোকজনের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তা হচ্ছে এ সড়ক। সড়কের কিছু অংশে ইট সলিং রয়েছে। ওই সড়ক দিয়ে রানীগঞ্জ হয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে চলাচল করে থাকেন গ্রামের লোকজন। এবার এ সড়কের ১৪০০ ফুট লম্বা ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের জন্য পাউবো অর্ন্তভূক্ত করেছে। বাঁধের নিকটবর্তী স্থানে মাটি না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অবশেষ প্রায় দুই কিলোমিটার দূরবর্তী স্থান সালদিকা গ্রামের হাওর থেকে মাটি ট্রলি দিয়ে এনে বাঁধের কাজ চলছে। যে সড়ক দিয়ে ট্রলি যাতায়াত করে ওই রাস্তাটি ছোট হওয়ায় গাড়ী যাতায়াতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এই বাঁধের পাশে একই সড়কে আরেক বেড়িবাঁধের আওতায় এনে কাজ চলছে। পিআইসি নং ৩২। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। ওই সিআইসির সভাপতি আবদুল মজিদও মুচলেকা দিয়েছেন সাতদিনের মধ্যে কাজ শেষ করবেন।
স্থানীয়রা জানান, পাউবো কর্তৃক এই প্রথমবারের মতো গ্রামের রাস্তাকে বেড়িবাঁধের আওতায় আনা হয়েছে। অনেকেই জানিয়েছেন অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেড়িবাঁধ দুইটি নির্মিত হয়েছে। কারণ এই সড়ক দিয়ে কোনো সময় হাওরে পানি প্রবেশ করেনি।
টাঙ্গুয়া হাওরের ৩১ নং পিআইসির সভাপতি সানু মিয়া বলেন, বাঁধের আশপাশে মাটির কোনো ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে ট্রলি দিয়ে মাটি আনতে হচ্ছে। গ্রেফতারি ভয়ে মুচলেকা দিয়েছি। কোনভাবেই সাতদিনের মধ্যে বেড়িবাঁধের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আরো কিছু দিন সময় বাড়ানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাবো।
৩২ নং পিআইসির সভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের ফসলক্ষায় এ বাঁধটি নির্মিত হচ্ছে। ২য় দফা বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জগন্নাথপুর উপজেলা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান জগন্নাথপুরের হাওরের ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের কাজের তদারকির দায়িত্বরত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, গয়াসপুর গ্রামের যে সড়কটি রয়েছে এটি অনেক বছর পূর্বে টাঙ্গুর হাওরের বেড়িবাঁধ ছিল। কয়েক বছর ধরে ওই বাঁধে কাজ হয়নি। এবছর আবার বেড়িবাঁধের আওতায় এনে নির্মাণ কাজ চলছে।
জগন্নাথপুরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমাদের পাশ্ববর্তী দিরাই উপজেলার নদীতে পানি বেড়ে গেলে টাঙ্গুয়া হাওরে প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে। তাই ওই দুইটি বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, দুই প্রকল্পের সভাপতি মুচলেকা দিয়েছেন সাতদিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করবেন। ইট সলিং সড়কে কাজ হচ্ছে কি না বিষয়টি রবিবার পরিদর্শন করে দেখবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।