জগন্নাথপুরে নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা, গ্রেফতার আতঙ্ক

0
519
blank

কলি বেগম, জগন্নাথপুর: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়েরের ঘটনায় পুলিশের ভয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে প্রায় জনশুন্য হয়ে পড়েছে এলাকা। এ ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।

জানাগেছে, গত ২৮ মে জগন্নাথপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উপজেলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটে। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ইউনিয়নের বুধরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে আ.লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাসান ও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান তৈয়ব মিয়া কামালীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশসহ কমপক্ষে ৫ জন আহত হন। এ ঘটনার পরদিন ২৯ মে আহত প্রিজাইডিং অফিসার জগন্নাথপুর কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অরুন কান্তি তালুকদার বাদী হয়ে সৈয়দপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আব্দুল মুকিতের ছেলে সৈয়দ আমির আলী, সৈয়দ করিম মিয়ার ছেলে সৈয়দ মিজান ও বুধরাইল গ্রামের শাজানের ছেলে ফুলকাছ মিয়ার নাম উল্লেখ করে আরো ৪০০ জনকে গং আসামি করে জগন্নাথপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ০৯, তারিখ ২৯/০৫/২০১৬ইং। এ মামলা দায়েরের পর আসামিদের গ্রেফতার করতে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ তৎপর হয়ে উঠে। এ পর্যন্ত মামলার এজাহারভূক্ত আসামি সৈয়দ আমির আলী ও গং আসামিদের মধ্যে আরো ২ জনসহ মোট ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। প্রতিনিয়ত আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে পুলিশের ভয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা প্রায় জনশুন্য হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান তৈয়ব মিয়া কামালী বলেন, বুধরাইল সেন্টারে নির্বাচনী ফলাফলে আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী ফলাফল ঘোষনার সাথে সাথে বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাসানের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী অন্যান্য সরঞ্জাম লুটে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের হামলায় প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশসহ কমপক্ষে ৫ জন আহত হন। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আবুল হাসানের লোকজনের হুমকিতে ভয়ে মামলার বাদী ও স্বাক্ষীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ এখন পর্যন্ত মামলার মুল আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

এ ব্যাপারে বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাসান পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বুধরাইল সেন্টারে ভোট গণনা শেষে স্থানীয় কিছু আওয়ামীলীগ নেতার হস্তক্ষেপে চক্রান্তের মাধ্যমে আমাকে পরাজিত দেখিয়ে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হলে উপস্থিত জনতার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সামান্য সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনাকে অনেক বড় করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে প্রিজাইডিং অফিসারকে দিয়ে এলাকার ৪০০ জন লোককে আসামি করে মামলা দায়ের করানো হয়। বর্তমানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাকে পায়, তাকেই ধরে এনে মামলায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পুলিশের ভয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা প্রায় জনশুন্য হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদানের অপরাধে আমার কর্মী-সমর্থকদের মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। এছাড়া আমি মামলার এজাহারভূক্ত আসামি নয়। এরপরও এ মামলায় আমাকে গ্রেফতার করার জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, বুধরাইল সেন্টারের ভোট পুনরায় গণনা করা হলে আমি নির্বাচিত হবো। অথচ আমাকে চক্রান্তের মাধ্যমে পরাজিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার ওসি (তদন্ত) ও চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা খান মোঃ মাইনুল জাকির জানান, এ পর্যন্ত মামলার ৩ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।