জগন্নাথপুরে রোপা আমনের বাম্পার ফলন

0
877
blank
blank

আলী আছগর ইমন, জগন্নাথপুর: জগন্নাথপুরে এবার রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। নিজেদের জমিতে বাম্পার ফসল দেখে কৃষক-কৃষাণীর মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি। তা দেখে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উৎফুল্ল।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, এবার জগন্নাথপুর পৌর এলাকার হাসিমাবাদ, শেরপুর, ছিক্কা, জালালপুর, হবিবপুর, উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের মজিদপুর, খাশিলা, ঘিপুড়া, সাদিপুর, জগদিশপুর, পাটলি ইউনিয়নের পাটলি, মক্রমপুর, সাচায়ানী, প্রভাকরপুর, লাউতলা, রসুলগঞ্জ, মিরপুর ইউনিয়নের লামা টুকের বাজার, লহরী নোয়াগাঁও, বাউরকাপন, হাসান-ফাতেমাপুর, আটঘর, শ্রীরামসি, চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের হলদিপুর, গোপরাপুর, হলিকোনা, রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের রৌয়াইল, রাণীনগর, জয়নগর, আছিমপুর, বাগময়না, গন্ধর্বপুর, নারিকেলতলা, ইছগাঁও, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর, পীরেরগাঁও, আশারকান্দি ইউনিয়নের কাকবলি, হরিপুর, চরা, রুপসপুর, জামালপুর, উত্তর ধাওরাই, উত্তর কালনিরচর, কালাইনজোরা, দিঘলবাক, বড়ফেছি ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের বৃহত্তর পূর্ব কাতিয়া, উত্তর পাইলগাঁও, দক্ষিণ পাইলগাঁও, গোতগাঁও, জালালপুর, আলীপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের ছোট-বড় প্রায় ৫০ টি হাওরের উঁচু জমিতে এবার রোপা আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়। জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিস এবার সরকারিভাবে জগন্নাথপুরে রোপা আমনের চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৫ হাজার ৭শ ১৪ হেক্টর জমি। তবে এবার সরকারি লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে ৭ হাজার ১শ ৯০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। এবার চাউলে সরকারিভাবে ১৫ হাজার ৪শ ৮২ মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হলেও তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তৎপরতা ও পরামর্শে স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমিতে বি-ধান ৪৯, ৫১, ৫২, বি-আর ২২, ২৩, ১১, বিনা-৭, দেশীয় জাতের পাইজাম, বিরইন, চিনিগুড়া, লাল বালাম, ময়না শাইল, গর্চি শাইলসহ প্রায় ১৫ জাতের উন্নতশীল রোপা আমন ধান আবাদ করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাওরে-হাওরে রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। জমিতে উৎপাদিত পাকা-আধা পাকা ধান বাতাসের তালেতালে দুলছে। ধানের মৌ-মৌ গন্ধ চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। জমিতে ধান কাটতে ব্যস্ত রয়েছেন শ্রমিকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত কয়েক দিন আগ থেকে জগন্নাথপুরে রোপা আমন ধান কাটার পুরো ধূম পড়েছে। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে অনেক মালিক তাদের জমির পাকা ধান কাটাতে পারছেন না। যে কারণে অনেক কৃষক নিজে ও তাঁর পরিবারের লোকজন নিয়ে নিজ জমির ধান কাটছেন বলে জগন্নাথপুর পৌর এলাকার কেশবপুর বরাকা গ্রামের কৃষক আজিজুল মিয়া জানান। তবুও জমিতে বাম্পার ফলন দেখে অনেক খুশি বলে স্থানীয়রা কৃষকরা জানান। বর্তমানে জমিতে ধান কাটা, ধান মাড়াই করা, ধান শুকানো, ধান গোলায় তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। তবে জমিতে এবার বাম্পার ফলন দেখে কৃষক-কৃষাণীর মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা উপ-সহকারি উদ্ধিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা তপন চন্দ্র শীল জানান, আমনের চেয়ে বোরো আবাদ অনেক ব্যয় বহুল। অথচ জগন্নাথপুরের মানুষ সেই ব্যয় বহুল বোরো আবাদে বেশি আগ্রহী। এছাড়া বোরো ধান কাটার মৌসুমে অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হয়। এ দিক বিবেচনায় আমন অনেকটা দুর্যোগমুক্ত। আমনের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ ফলনশীল বি-আর ২২, ২৩, বি-ধান ৪৬ এবং বিনা শাইল জাতের ধান। এসব ধান অকাল বন্যার কবলে পড়ে পানির নিচে তলিয়ে গেলেও ২৪ দিন পর পর্যন্ত কাটা যায়। এবার জগন্নাথপুরে রোপা আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় তিনি উৎফুল্ল চিত্তে বলেন, জমিতে এবার বাম্পার ফলন হওয়াতে আমাদের কষ্ট ও কৃষকদের শ্রম স্বার্থক হয়েছে। তিনি কৃষকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, বোরো ফসলের মতো আমন চাষাবাদে কৃষকদের আরো এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া আমন হচ্ছে একটি সাশ্রয়ী আবাদ। আমন আবাদ করলে কম খরচে অধিক ফসল নিশ্চিন্তে কৃষকদের গোলায় উঠবে।