জঙ্গিবাদের নামে বিরোধীদের ওপর চড়াও হয়েছে সরকার: মির্জা ফখরুল

0
577
blank

ঢাকা: বর্তমান সরকারকে অনির্বাচিত আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের নিয়ন্ত্রণে পড়ে গেছে। সরকার জঙ্গিবাদ আর গুপ্তহত্যার নাম করে, আসল অপরাধীদের খুঁজে বের না করে সেটাকে বিভ্রান্ত করে দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এমতাবস্থায় তিনি প্রত্যাশা করেন- ভারত অনির্বাচিত সরকার নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের পাশে থাকবে।

সোমবার এক সভায় তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এসেছে- আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশের সরকার সঠিক কাজটি করছে, তারা জঙ্গিদমনে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিনীতভাবে একটা প্রশ্ন করতে চাই- ভারত নি:সন্দেহে বাংলাদেশের প্রতিবেশী শুধু নয়, তারা অকৃত্রিম বন্ধু। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় যেটা প্রত্যাশা করি, সেই প্রত্যাশা হচ্ছে- ভারতবর্ষ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সঙ্গেই থাকবে। নিশ্চয়ই এমন কোনো শক্তি বা সরকারকে প্রশ্রয় দেবে না বা সহযোগিতা করবে না, যারা বাংলাদেশের মানুষের ওপর চড়াও হয়ে এসেছে। আজ দুপুরে রাজধানীর ইনঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন মির্জা ফখরুল। দেশব্যাপী গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, মহানগর নেতা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কাজী আবুল বাশার, বজলুল বাসিত আনজু, ইউনুস মৃধা, ওলামা দলের হাফেজ আবদুল মালেক, যুব দলের আবদুল খালেক, জামিলুর রহমান নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের লিটন মাহমুদ ও মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ প্রমুখ। বর্তমান সরকার অনির্বাচিত আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এটা দিবালোকের মতো সত্য এই সরকার নির্বাচিত নয়। তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। এমন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নির্বাচিত ঘোষণা করে এসেছে, যে নির্বাচন দেশের মানুষ গ্রহণ করেনি, বিশ্বও গ্রহণ করেনি। বিএনপির মহাসচিব জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে বলেন, জঙ্গি দমনের নামে সারাদেশে এক সপ্তাহে অভিযানে ১৩/১৪ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ এখন বলছে, এখানে চিহ্নিত সন্দেহভাজন গ্রেফতার হয়েছেন ১৭৯ জন। তাহলে বাকীরা কারা? বাকীদের তাহলে কেনো ধরলেন? আসলে এই গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে সরকার বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতে চেয়েছেন। যখন তারা (সরকার) গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের উত্থানকে সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন তারা সাঁড়াশি অভিযানের নামে বাংলাদেশর মানুষকে প্রতিপক্ষ ঘোষণা করে দেশের মানুষের ওপরেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এই সরকার সব দিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে। কেবল একটি দিকে তারা সফল হয়েছে, সেটা হচ্ছে কিভাবে দেশের মানুষের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো যায়। এদেশের মানুষ শতবর্ষ ধরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে। সেই গণতন্ত্রকামী মানুষকে তারা (সরকার) প্রতিপক্ষ হিসেবে নিয়েছে। মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, আজকে নির্বাচন দিন, সেই নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ হয়, সেখানে তারা কোনো মতেই টিকে থাকতে পারবে না। সেজন্য তারা এই পন্থা অবলম্বন করেছে যে, তারা জঙ্গিবাদের নাম করে, গুপ্ত হত্যার নাম করে, আসল অপরাধীদের খুঁজে বের না করে সেটাকে বিভ্রান্ত করে দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও হয়ে এসেছে। অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় হাজার হাজার কোটি টাকার লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোনো প্রতিকার নেই, কোথাও কোনো জবাবদিহিতা পর্যন্ত নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, তারা তো এখন রাজা। কে যেন বলেছিলো না- মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ। এখন পুলিশ রাজা। তারা যা খুশি তাই করবে, যা- ইচ্ছা তা-ই করবে। এখন হচ্ছেও তাই। আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ব্যাপক লুটপাট হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের কোনো পরিস্থিতি নেই। এরকম একটা অবস্থার মধ্যে তারা ড্রাম বাজাচ্ছে, ঢোল বাজাচ্ছে, এমন উন্নয়ন হচ্ছে- এখন গণতন্ত্রকে পেছনে দাও, উন্নয়নকে সামনে নিয়ে আসো। এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করব আর তথাকথিত মেগা প্রজেক্ট দেখিয়ে উন্নয়ন হচ্ছে বলব। সরকার এভাবে উন্নয়নের নামে জনগণের টাকা থেকে ট্যাক্সের টাকা থেকে অর্থ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় থেকে উত্তরণে ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন আর সত্যিকার অর্থে স্বাধীন নেই, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেই। মানুষের অধিকার নেই। এটা একটা ফ্যাসিবাদী সরকারের নিয়ন্ত্রণে পড়ে গেছে। তাই দেশপ্রেমিক মানুষদেরকে এক হতে হবে, সংগঠিত হতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে হবে। মহল্লায়, পাড়ায় ছড়িয়ে পড়তে হবে। দেশের স্বার্থে জনগনের স্বার্থে সবাইকে সংগঠিত হয়ে এই দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। গণগ্রেফতারে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য আন্দোলনে প্রস্তুতি নেয়ারও আহবান জানান মির্জা ফখরুল। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার একটার পর একটা অসংখ্য মামলা দিয়ে চলেছে। এমন একজন নেতা নেই্, যাদের বিরুদ্ধে ১০/৩০/৬০ টা মামলা নেই। আমাদের সবাইকে সাপ্তাহে ৪/৫ দিন আদালতে যেতে হয়। এই অবস্থায় আর কতদিন আমরা থাকবো? এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে এই কারাগার ভাঙতে হবে। আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই। সভাপতির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাদের সাথে সব কিছুর জন্য আমাদের বন্ধুত্ব অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারত যদি শুধু আওয়ামী লীগ সাথে বন্ধুত্বটাকে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব মনে করে, হাসিনার সাথে বন্ধুত্ব মানেই যদি বাংলাদেশের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব মনে করে তাহলে সেটা বন্ধুত্ব হলো না। বন্ধুত্ব হবে দেশে দেশে, বন্ধুত্ব হবে ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে। বন্ধুত্ব হবে সমঝোতা ও সমতার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। তাকে জেলে নেয়া হলে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীও স্বেচ্ছায় জেলে যাবে। তাই সরকারকে বলব, আগুন নিয়ে খেলবেন না।