জামায়াতের আমির হিসেবে মকবুল আহমাদের শপথ গ্রহণ

0
1068
blank
blank

ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচিত আমির মকবুল আহমাদ শপথ গ্রহণ করেছেন। সোমবার সকালে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সামনে তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান জামায়াতে ইসলামীর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাওলানা এটিএম মাসুম। জামায়াতে ইসলামীর রুকনরা গোপন ভোটের মাধ্যমে ২০১৭-২০১৯ কার্যকালের জন্য মকবুল আহমাদকে আমির হিসেবে নির্বাচিত করেন।

সোমবার জামায়াতের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। আমির হিসেবে শপথ নিয়ে তিনি জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীর দোয়া কামনা করে বক্তব্যদেন।

দেশ এক সংকটকাল অতিক্রম করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে বিরাজমান সমস্যা ও সংকটের সমাধান আমাদের সবাইকে মিলেই করতে হবে। কোনো একটি দলের পক্ষে কিংবা একা সরকাররে পক্ষে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। দল ও মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে চলমান সংকট ও সমস্যা সমাধানের উদ্যেগ গ্রহণের জন্য আমি সরকারের প্রতি আবারও আহবান জানাচ্ছি। আর এজন্য সব দল ও পক্ষের অংশগ্রহণে একটি সফল জাতীয় সংলাপের কোনোই বিকল্প নেই। তবে জাতীয় সংলাপকে সফল করতে হলে প্রয়োজন সংলাপের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।

বক্তব্যের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের স্মরণ করেন। একই সাথে মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের স্মরণ করে বলেন, যারা আমাদের প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একটি ইনসাফপূর্ণ ও কল্যাণমুখী সমাজ বিনির্মাণের জন্য আজীবন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন। আর একারণে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিহিংসামূলকভাবে তাদের পাঁচজনকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। দুজন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে জুলুমের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। স্মরণ করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাওলানা আব্দুস সোবহান এবং মোফাসসিরে কোরআন সাবেক এমপি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামসহ কারাগারে আটকনেতাকর্মীদের। তিনি ফিলিস্তিন, মিশর, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাকসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়ে যেসব মানুষ হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, তাদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং কাশ্মিরের জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবিকে যৌক্তিকভাবে মেনে নিয়ে স্থায়ী শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আন্তরিক আহবান জানান। মিয়ানমারের নিপীড়িত মুসলমানদের ন্যায্য অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সে দেশের সরকার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিও আহবান জানান।

মকবুল আহমাদ বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মভুমি এক কঠিন সংকটের মুখে নিমজ্জিত। দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না থাকায় গণতন্ত্র অবরুদ্ধ ও মানবাধিকার ভুলুণ্ঠিত। জনগণের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে ইসলামী দলসহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে নগ্নভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে কার্যত একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও চরমপন্থা দমনে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় জনগণের মধ্যে হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ, অপসংস্কৃতির সয়লাব ও নৈতিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। গুম, খুন, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক ও চোরাচালান ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, লুটপাট, দলীয়করণ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, অনৈক্য, মিথ্যাচার ও দমনপিড়ন ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সংখ্যালঘু সম্পদায় ও আজ সরকারি দলের দুবৃত্তদের লুটপাট, দখলদারিত্ব ও নির্যাতনের কারণে অনিরাপদ এবং অতিষ্ট। দারিদ্র, বেকারত্ব, মেধার অবমূল্যায়ন, বৈষম্য, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা জনজীবনকে নাবিশ্বাস করে তুলেছে। দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বলয় ভেঙে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা ও ব্যবসা বাণিজ্যের অঙ্গনগুলো সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এক কথায় মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যত নিয়ে গোটা জাতি আজ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাঠাচ্ছে। এমনি প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীর ন্যায় একটি দায়িত্বশীল ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দলের আমির নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণকালে সবার প্রতি আহবান জানাতে চাই, এদেশটি আমাদের সবারই। দেশে বিরাজমান সমস্যা ও সংকটের সমাধান আমাদের সবাইকে মিলেই করতে হবে। কোনো একটি দলের পক্ষে কিংবা একা সরকারের পক্ষ্যে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। দল ও মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে চলমান সংকট ও সমস্যা সমাধানের উদ্যেগ গ্রহণের জন্য আমি সরকারের প্রতি আবারও আহবান জানাচ্ছি। আর এজন্য সব দল ও পক্ষের অংশগ্রহণে একটি সফল জাতীয় সংলাপের কোনোই বিকল্প নেই। তবে জাতীয় সংলাপকে সফল করতে হলে প্রয়োজন সংলাপের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। সে লক্ষ্যে জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, আলেম উলামা, দেশপ্রেমিক বিবেকবান সাংবাদিক নের্তৃবৃন্দসহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা ও হুলিয়া প্রত্যাহার করতে হবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সব নিপিড়ীত বন্দিদেরকে মুক্তি দিতে হবে। সব ক্ষেত্রে পুলিশি হয়রানী ও দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। দেশের স্থিতিশীল ও গনতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্থান্তর করতে হবে।

অতীতের কোনো রাজনৈতিক বিষয়কে অজুহাত না বানিয়ে সব দু:খ, কষ্ট ও বেদনাকে ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।