জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাসিয়া রেনিজেরা

0
748
blank
blank

অনিক আহমেদ, জাবি প্রতিনিধি: ‘অনেকদিন পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম। আমি শীতকালে পাখি মেলা ও প্রজাপতি মেলার কথা জানতাম তাই ঐ সময়টাতেই বেশি আসার চেষ্টা করি। কিন্তু আজ এসে এর(জাহাঙ্গীরনগরের) গ্রীষ্মের রুপ দেখে আমি সত্যিই অবাক। সারা ক্যাম্পাস সবুজ আর ফুলে ছেঁয়ে গেছে। আর এই ফুল(ক্যাসিয়া রেনিজেরা) তো জীবনেই প্রথম দেখলাম’ কথাগুলো বলছিলেন বৃহস্পতিবার পরিবারকে নিয়ে ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা ফিরোজুর রহমান টিটু।
রোদের তীব্র তাপদহ আর কালবৈশাখীর হুংকার জানান দিচ্ছে বৈশাখের আগমনের কখা। প্রকৃতির সবখাানেই এখন বৈশাখের জয়জয়কার। প্রকৃতিও ব্যস্ত বৈশাখকে বরণ করে নিতে। বৈশাখের এই রোদে ক্লান্ত-শ্রান্ত পথিক যখন দিশেহারা তখন নিজের সৌন্দর্যকে অবারিত করে ক্লান্ত পথিকের মনে প্রাণের সঞ্চার করছে ক্যাসিয়া রেনিজেরা। প্রতি বছর বসন্ত চলে যাওয়ার আগে নিজের সবটুকু উজার করে দিয়ে প্রকৃতিকে সাঁজিয়ে যায়। তাইতো গ্রীষ্মের এই খড়া রোদে যখন নাগরিক জীবন অসহ্য হয়ে উঠেছে তখন নিজের সৌন্দর্য দারা পথচারী ও দর্শনাথীদের বিমোহিত করে চলেছে ক্যাসিয়া রেনিজেরা।
বলা হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাথা উচু করে সৌন্দর্য বিলানো জাপানী চেরি ফুলের কথা। গ্রীষ্মের এই সময়ে ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণ মাথা উচু করে সৌন্দর্য বিলানো এই ফুল। ক্যাম্পাসে বসেছে ফুল ফলের মেলা। চারদিকে এখন ফুলের মিষ্টি সুবাস।
পুরো বিশ্ববিদ্যালয় যেন হয়ে উঠেছে স্বপ্নপুরী। ফুল, ফল, পাখি, প্রাকৃতিক জলাধার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির অমলিন ভাস্কর্য আর নান্দনিক অট্টালিকার এ ক্যাম্পাস এখন যে কারো মন ভরিয়ে দেবে। রাজধানী ঢাকায় ইট-পাথরের অট্টালিকায় থাকতে থাকতে যারা হাঁপিয়ে উঠেছে, তাদের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অনাবিল আনন্দ উপভোগের স্বর্গরাজ্য। প্রকৃতির রূপ, রস, সুবাস আর রঙের আভা প্রবলভাবে মোহিত করছে আগন্তুকদের। এর মধ্যে ভিনদেশি ফুল ক্যাসিয়া রেনিজেরা ক্যাম্পাসের প্রকৃতিতে এক ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি করেছে যার পড়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ রিয়াদ বলেন, গ্রীষ্ম এলই ক্যাম্পাসে বাহারি রঙ্গের ফুলের উৎসব শুরু হয়ে যায়। সাথে সবুজের নতুন পাতা এক অপরুপ আবহ সৃষ্টি করে। এমন রুপলাবন্য আর রঙ্গীন প্রকৃতির ক্যাম্পাসে পড়তে নিজকে ধন্য মনে হয়’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পুরনো কলা ভবনের ভেতরে, নির্মিতব্য বেগম সুফিয়া কামাল হলের সামনে, জহির রায়হান অডিটোরিয়াম, চৌরঙ্গীসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ফুটেছে ক্যাসিয়া রেনিজেরায় ফুল। ক্যাসিয়ার অপরূপ সৌন্দর্যে থমকে যাচ্ছে পথচারীরা। শ্বেতশুভ্র এ ফুলের আদি নিবাস জাপান। স্নিগ্ধ রূপ ও বৈচিত্র্যময় রঙের এ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম বার্মিজ পিংক ক্যাসিয়া (ইঁৎসবংব চরহশ ঈধংংরধ)। মধ্যম আকারের গাছ, যার উচ্চতা ৮ থেকে ১০ মিটার। চিকন ঝোলানো ডাল। চার-পাঁচ বছরের মধ্যে নয়নাভিরাম শ্বেতশুভ্র গোলাপি ফুল আসে। বর্ষা ছাড়া বছরের মোটামুটি বেশির ভাগ সময়ই গাছ থাকে পাতাহীন। ফেব্রুয়ারির শেষদিক থেকে শুরু করে এপ্রিল-মে পর্যন্ত ফুলের দেখা মেলে। উপমহাদেশে দৃষ্টিনন্দন ক্যাসিয়া প্রজাপতির প্রায় ৪০ প্রকার গুল্ম ও গাছের মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশে অন্তত ১৫টি প্রজাতি রয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃক্ষটির সামনে ঝুলানো নামফলক সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে ড. এ আর খান বীজ সংগ্রহ করে চারা উত্তোলন করে ক্যাম্পাসের কয়েকটি স্পটে জাপানী এ ফুলের চারা রোপণ করেন। এ বৃক্ষের ফুল-বীজ অনেকটা সিম আকৃতির প্রায় কালো রঙের লম্বা দ-ের ফল। ফুলের ভেতর গোলাকৃতি বীজ। ক্যাসিয়া রেনিজেরা বাংলাদেশে খবু স্বল্প পরিচিত এবং অদ্ভুত সুন্দর ফুল হিসেবে বেশ পরিচিত। দেশে ঢাকার রমনা, হাইকোর্ট, বিজয় সরণি ছাড়া খুব বেশি স্থানে দেখা যায় না। এ ফুল বৃক্ষটি কাকতালীয়ভাবে আতাফল এবং ডালিম গাছের সঙ্গে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। তবে সে সব গাছের তুলনায় বৃক্ষে ডালপালা বেশ ঘন নয়, তবে বেশ লম্বাটে। মধ্যম উচ্চতা বিশিষ্ট হওয়া বৃক্ষটির গায়ে ফুল ফোটার পর মুহূর্তে বেশ আবেদনময়ী দেখায়। গাছটি বসনত্মের শেষ ভাগে দেখা মেলে মঞ্জুরি। এ ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ রোপণের মাধ্যমে নতুন করে রাস্তার নামকরণের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃতিপ্রেমী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশীদ বলেন,‘জাহাঙ্গীরনগর এমন এক নগর যেখানে ষড় ঋতুর আবহ স্পষ্ট ফুটে উঠে। ক্যাসিয়া রেনিজেরো যেন জাপানের চেরি ভর ল্যান্ডস্ক্যাপ নিয়ে এসেছে ক্যাম্পাসে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে ক্যাসিয়া রেনিজেরো’।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শ্যামল কুমার রায় বলেন, ‘ক্যাসিয়া দেখতে চেরি ফুলের মতো হলেও এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর ফুল ফোটার সময় গাছের সব পাতা ঝরে যায়। তখন এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়’। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এ ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে বলে জানান তিনি।