জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে

0
508
blank
blank

ঢাকা: জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। বুধবার সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বেলা ২টা পর্যন্ত টানা এ ভোটগ্রহণ চলবে। প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। স্থানীয় সরকারের অন্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই কেবল ভোট দিয়ে নিজ নিজ জেলায় একজন করে চেয়ারম্যাযন এবং ২০ জন সদস্যপ নির্বাচিত করবেন। অবশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি জেলা (বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি) এ নির্বাচনের বাইরে রয়েছে।
এদিকে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ইতোমধ্যে ২১টি জেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যাড়ন প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে ভোলা ও ফেনী জেলায় চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এ দুই জেলায় কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। বাকি ১৯ টি জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন না হলেও সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান এবং সদস্য পদে সবমিলিয়ে প্রার্থী সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩৮জন। মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ হাজার ১৪৩জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ৩৪৩জন এবং মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৮০০জন। ভোটকেন্দ্র ৯১৫টি ও ভোটকক্ষ ১ হাজার ৮৩০টি। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
২০০০ সালে আইন প্রণয়ন হলেও ১৬ বছর পর হতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন। অপরদিকে এটাই হতে যাচ্ছে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসির শেষ নির্বাচন।
সরাসির ভোটাধিকার না থাকায় এবং আওয়ামী লীগ ব্যতিত অন্যে কোন রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সাধারণ জনগণের এ নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ নেই। তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এতে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী জেলায় কিছুটা উত্তাপ রয়েছে।
এই নির্বাচনকে ‘তামাশার নির্বাচন’ এবং জনগণের ‘ইচ্ছার প্রতিফলন নেই’ বলে বিএনপির নেতারা মন্তব্য করেছেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যা মওদুদ আহমেদ একে আইয়ুব খানের ‘বেসিক ডেমোক্রেসি’র সঙ্গেও তুলনা করেছেন।
এদিকে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচনে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে ভোটকেন্দ্রে মোবাইলসহ সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নির্বাচনের বিষয়ে মঙ্গলবার ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচনে আমরা ব্যতিক্রমী কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। ভোটকেন্দ্রে মোবাইল বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, যার মাধ্যমে ব্যালট পেপার স্ক্যান করা যায়, এমন কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘এমন একটা আশঙ্কা আছে যে, ভোটদানের গোপনীয়তা ভঙ্গ হতে পারে। কেউ হয়তো প্রমাণের জন্য ব্যালট পেপারের চিহ্ন মোবাইলে ছবি ধারণ করতে পারেন। এ জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনও ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ভোটকেন্দ্রে নেওয়া যাবে না।
নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের পাহারায় রয়েছেন ২০জন পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, ব্যাটালিয়ান আনসার ও আনসার ভিডিপির সদস্য। কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে বিজিবি ও র্যাপব। এছাড়া প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে ১টি মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং র্যা্বের ১টি করে মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। মোবাইল ফোর্সের একটি দল ভোটকেন্দ্রের আশেপাশের এলাকায় নিবিড় টহল দেবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য এক প্লাটুন বিজিবি বা কোস্টগার্ড থাকবে। নির্বাচনে প্রতিটি জেলায় সর্বনিম্ন এক প্লাটুন থেকে সর্বোচ্চ ১২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকছে। এছাড়া প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন।
আওয়ামী লীগের যে সব নেতাকে পদ পদবী দেওয়া সম্ভব হয়নি তাদেরকে জেলা পরিষদে ‘পুনর্বাসন’ ও ‘তুষ্ট’ করার প্রয়াস হিসাবে অনেক সমালোচনা রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ২১ চেয়ারম্যানের মধ্যে আনোয়ার হোসেনও একজন।
অবশ্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৬১ টি জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ আনতে দলের পক্ষ থেকে তাদের অনেকটা ‘ছাড়’ দেওয়া হয়েছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা একটা পর্যায়ে চিন্তা করলাম যে, অপজিশন নেই ইলেকশনটায়, একেবারেই আনঅপোজড সবাই হয়ে যাবে, এটা কেমন যেন একটা রং মেসেজ যায়। যারা প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করছে, দলীয় লোক হলেও তাদের প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ বা কনভিন্স করা- সে বিষয়টা আছে, কিন্তু চাপাচাপিটা করা থেকে আমরা বিরত থেকেছি।
দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ব্যাপক টাকা ছড়াছড়ি ও সরকার দলের এমপিদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা তা আমলে নেননি। মঙ্গলবার রাতেও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য এলাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আটটি সংস্থার ১ হাজার ৩৩৯ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি।