ডিজে পার্টিতে ডেকে নিয়ে গণধর্ষণ

0
585
blank

ঢাকা: দুই শিশুকন্যা। একজনের বয়স ৯, অন্যজনের ১০ বছর। একসঙ্গে স্কুলে আসা-যাওয়া, খেলাধুলা। আসা-যাওয়ার পথে এই শিশুকন্যা দুজনের প্রতি লোলুপ নজর পড়ে বখাটেদের। বখাটে কয়েক তরুণ অপ্রয়োজনে কথা বলতে চাইতো। কাছে ডেকে নিতো। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুই শিশুকে ধর্ষণ করে বখাটেরা। স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নববর্ষ উপলক্ষে যাত্রাবাড়ীর মীর হাজিরবাগের নবীনগর এলাকায় আয়োজন করা হয় ডিজে পার্টির। বখাটেদের দু’জন দুই শিশুকে ওই অনুষ্ঠানে থাকতে বলেছিলো। সে হিসেবেই শনিবারে প্রস্তুতি নেয় তারা। সেদিন বিকালে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সেজেগুজে বের হয়। অনুষ্ঠান হচ্ছিলো নবীনগর এলাকার একটি মাঠে। দুই শিশু অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর তাদের পাশে গিয়ে বসে চার বখাটে। তারা নানাভাবে দুই শিশুকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। অনুষ্ঠান শেষে রাত প্রায় ১১টার দিকে দুই শিশুর সঙ্গে ওই বখাটেদের যেতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নির্যাতিতা দুই শিশুর বরাত দিয়ে তাদের স্বজনরা জানান, বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলে শিশুদের পিছু নেয় বখাটেরা। পথিমধ্যেই আড্ডা দেয়ার কথা বলে পাশের একটি বাড়ির ছাদে উঠে তারা। শিশু দুটি উঠতে না চাইলেও বখাটেরা অনেকটা জোর করেই ছাদে তুলে নেয় তাদের। সেখানে নিয়ে প্রথমেই তাদের শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। শিশু দুটি এতে বাধা দেয়। তারা কান্না করার চেষ্টা করলে মুখ চেপে ধরে। শিশুরা জানায়, তারা পায়ে ধরে মাফ চেয়েছে বখাটেদের কাছে। বারবার তাদের ছেড়ে দিতে বলেছে। কিন্তু বখাটেরা তাতে কর্ণপাত করেনি। বরং এসময় দুই শিশুকে মারধর করে বখাটেরা। চিৎকার করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
চার বখাটের দু’জন করে দুই শিশুকে জিম্মি করে। পালাক্রমে চারজনই দুই শিশুকে ধর্ষণ করে। প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা এভাবেই বখাটেদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয় শিশু দুটি। এদিকে, রাত ১২টার পর থেকেই বাইরে তাদের সন্ধান করছিলো স্বজনরা। কিন্তু কোথাও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। নির্যাতিতা ৯ বছর বয়সী শিশুর পিতা জানান, এক পর্যায়ে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর নবীনগরের খালপাড়ের ১৭৭/৪/১ বিমল চন্দ্র সরকারের নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে গেলে কান্নার শব্দ পান তিনি। নিচে থেকে চিৎকার করে তার মেয়ের অবস্থান জানতে চান। এরমধ্যেই বখাটেরা পালিয়ে যায়। দ্রুত ছাদে উঠেন ওই শিশুর পিতা। সেখানে ১০ বছর বয়সী শিশুটি সম্পূর্ণ বিবস্ত্র ও তার ৯ বছর বয়সী শিশুটি ছেঁড়া বস্ত্র নিয়ে বসে বসে কাঁদছিলো। তাদের শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত দেখতে পান। উদ্ধার করে তাদের বাসায় নিয়ে যান স্বজনরা। বিষয়টি জানার পর পরদিন রোববার ভোরে নির্যাতিতা শিশুদের যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে যান। এ ঘটনায় গণধর্ষণের অভিযোগে দুটি মামলা করেছেন নির্যাতিতাদের স্বজনরা। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ইয়াসিন নামে এক ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গতকাল তাকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ডিএম আজম সুলতান বলেন, চার আসামির মধ্যে তিন জন পলাতক। তাদের গ্রেপ্তার করতে তৎপরতা চলছে।
জানা গেছে, ঘটনাস্থলের পাশেই বখাটে রাব্বির বাসা। দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর নবীনগরের ১৭৭/৪ নম্বর বাড়িতে থাকে রাব্বি। আসামি ইয়াসিন, রিফাত ও জাহাঙ্গীর ওই এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামি ইয়াসিন পাটোয়ারী স্বীকার করেছে দীর্ঘদিন থেকেই শিশু দুটিকে টার্গেট করেছিলো তারা। টার্গেট অনুসারেই তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে। পরিকল্পিতভাবেই ওই দিন দুই শিশুকে ছাদে নিয়ে ধর্ষণ করে তারা।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান বিশ্বাস বলেন, আসামিরা বখাটে। তাদের মধ্যে একজন স্থানীয়। বাকিরা এখানকার অস্থায়ী বাসিন্দা। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, নির্যাতিতা দুই শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন বলে জানান তিনি।