তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর তথ্য অদ্ভুত: মির্জা ফখরুল

0
499
blank
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশী নাগরিকত্ব নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের তথ্যকে অদ্ভুত বলে আখ্যা দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসাথে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে চিঠি দেখিয়েছেন তাতে ১৩টি ভুল রয়েছে উল্লেখ করে বিষয়টিকে তিনি রহস্যজনক মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্ভট ধারণাকে তত্ত্ব কিংবা তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেসবুকে প্রচার রাজনৈতিক মূর্খতা এবং উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী নাগরিক তারেক রহমানের পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়ার একটি নথি দেখিয়েছেন বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বিষয়ে তিনি যে অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনী মন্তব্য করেছেন আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।

আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কি কি কারণে একজন নাগরিক জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন, এটাও যিনি জানেন না, তেমন একজন ব্যক্তির শুধু এধরনের অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী পদে থাকা সম্ভব এবং তা জাতির জন্য লজ্জাজনক।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ও সরকারী দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এটা স্পষ্টতঃই প্রমাণিত যে, দেশে তারেক রহমানের জীবন নিরাপদ নয়। এমতাবস্থায় তারেক রহমান বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকারবিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গত কারণেই তা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার পাসপোর্ট জমা রেখে তাকে ট্রাভেল পারমিট দেয়া হয়েছে। কাজেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার কোনো কাজে লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন।

তিনি বলেন, জমা রাখার জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তার পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তার দ্বারাও কোনো আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণিত হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। এ ধরনের উদ্ভট ধারণাকে তত্ত্ব কিংবা তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেসবুকে প্রচার রাজনৈতিক মূর্খতা এবং উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রলাপ বকা এবং অপপ্রচার চালানো অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে যে আইনী নোটিশ দেয়া হয়েছে, দেশের জনগণ তার জবাব জানার জন্য অপেক্ষা করছে। দেশের জনগণ ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেছে যে, তাদের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডন সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের ৩টি পাতা এবং ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি। কি বিচিত্র এই সরকার! কি দুর্বল তাদের অপকৌশল!

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের চিঠিতে ১৩টি ভুল রয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে চিঠিটি দেখিয়েছেন সেই চিঠিতে ১৩টি মেজর ভুল পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে এটা করা অস্বাভবিক।

তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়তার সাথে স্পষ্ট ভাষায় দেশবাসীকে জানাতে চাই যে, তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন ইনশা আল্লাহ। অবৈধ ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের নৃশংস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পঙ্গু অবস্থায় সুচিকিৎসার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে তারেক রহমান ২০০৮ সালে লন্ডনে যান এবং পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় এখনো সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। ইতোমধ্যে তার অনুপস্থিতিতে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে মন্ত্রী, নেতা-পাতি নেতারা প্রতিনিয়ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করলেও দেশের জনগণ যাতে তারেক রহমানের জবাব শুনতে না পারে সেজন্য দেশের সকল প্রচার মাধ্যমে তার বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করে বাক স্বাধীনতার মতো মৌলিক মানবাধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করে বিশ্বের এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন আইন ২০০৪-এ আইনের ১৭ ধারায় উল্লেখ আছে- পাসপোর্ট অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট কারো কাছে যাবে না। শুধু যিনি এটার হোল্ডোর তার কাছে যাবে। থার্ড পার্টি এটা রিটেন করতে পারবে না। সুতরাং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে দাবি করছেন এ পাসপোর্ট হাইকমিশনে দেয়া হয়েছে তা রহস্যজনক এবং সন্দেহজনক। আমাদের বক্তব্য এখানে স্পষ্ট ব্রিটিশ আইন সেকশন ১৭ অনুসারে তারেক রহমানের পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাওয়ার কথা নয়।