তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধ

0
779
blank
blank

ঢাকা: তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না- প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। একইসঙ্গে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে দেয়ার দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মনে করি আমরা।

উল্লেখ্য, ১৩ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিশুদের ওপর থেকে চাপ কমানোর জন্য প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। চলতি বছর থেকেই এটি বাস্তবায়িত হবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
এর সঙ্গে শিক্ষাবিদদের দীর্ঘদিনের যে দাবি প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করার, সেটিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়া দরকার। কারণ সমাপনী পরীক্ষা যে অনেক বেশি চাপ তৈরি করে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

আমরা শিশুদের আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত বই, ব্যাগের বাড়তি বোঝা শিশুদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, অনেক সময় দেখা যায়, প্রতিযোগিতা শিশুদের মধ্যে না হয়ে অভিভাবকদের মধ্যে বেশি হচ্ছে; বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।

অভিভাবকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার এ ব্যাধি শিশুর মধ্যে কেবল শেখার প্রতি অনীহাই তৈরি করে না, একইসঙ্গে তাদের স্বাভাবিক বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করে এবং অতিমাত্রায় খবরদারির কারণে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলে শিশুরা।

স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের চাপিয়ে দেয়া বোঝার কারণে শিশুর স্কুল ব্যাগের ওজন পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন উচ্চ আদালত; তারপরও বিষয়টি রয়ে গেছে আগের মতোই। শিশুদের ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ না করা ও তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা না নেয়ার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়গুলোতে সচেতন হতে হবে।

ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে শিশুদের পরীক্ষা না থাকার উদাহরণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরীক্ষা তুলে দিলে আমাদের শিশুরাও যে ভালো করবে তার আশাব্যঞ্জক উদাহরণ তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে দেশে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। এতে বার্ষিক পরীক্ষা ছিল না।

২০১৮ সালে এসব শিশু সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে এবং ভালো ফল করেছে। ২০১৭ সালে যেখানে পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৫৯ শতাংশে। এ কারণে এ বছর থেকে প্রাক-প্রাথমিককে দুই বছরের করা হচ্ছে।

তৃতীয় শ্রেণী থেকে পরীক্ষা তুলে দেয়ার পাশাপাশি তা পর্যায়ক্রমে পঞ্চম শ্রেণীতে উন্নীত করা এবং সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে দেয়া হলে শিশুদের চাপমুক্ত শৈশব-পড়াশোনা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি তাদের সৃজনশীল সক্ষমতাও বাড়বে বলে আশা করা যায়।