দলবল দেখে আমরা বিচারপতিরা আদেশ দেই না: প্রধান বিচারপতি

0
560
blank
blank

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘দলবল দেখে আমরা বিচারপতিরা আদেশ দেই না।’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন বহালের সংক্ষিপ্ত আদেশ চেয়ে তার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীর আবেদন নাকচ করে দিয়ে  চার সদস্যের আপিল আদালতে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী,ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন,ব্যারিস্টার নওশাদ জামির প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বিরতির পর বেলা সাড়ে ১১টায় আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় এজে মোহাম্মদ আলী বলেন,‘আমরা খালেদা জিয়ার জামিনের সংক্ষিপ্ত আদেশ চাচ্ছি। বেইল বন্ড (জামিন নামা) দাখিল করতে সংক্ষিপ্ত আদেশ দরকার। আপনাদের আজকের রায় পত্র-পত্রিকায়,টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। হয়তো আপনাদের (সুপ্রিম কোর্টের) নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। আমাদের দিতে অসুবিধা নেই।’

আপত্তি জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তো আরও কয়েকটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট আছে। তাছাড়া আপিল বিভাগ থেকে এ ধরনের শর্ট অর্ডার দেওয়ার নজির নেই।’

বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন,‘এ ধরনের শর্ট অর্ডার দেওয়ার কোনও নজির নেই।’

তখন প্রধান বিচারপতি খালেদার আইনজীবীকে বলেন,‘আপনার আবেদন রিফিউজ (প্রত্যাখ্যান) করা হলো।’

জবাবে এজে মোহাম্মদ আলী বলেন,‘হাইকোর্ট বিভাগের রুলসে শর্ট অর্ডার দেওয়ার বিধান আছে।’

এরপর  বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন,‘হাইকোর্টের বিধান কি আমাদের (আপিল বিভাগের) জন্য মানা বাধ্যতামূলক?’  জবাবে এজে মোহাম্মদ আলী বলেন,‘আমি তা বলছি না। আপনারা চাইলে তা দিতে পারেন।’

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন,‘আপনার আবেদন রিফিউজ করা হলো।’  এ সময় এজে মোহাম্মদ আলী বলেন,‘আমি তো একা এসেছি। দলবল নিয়ে আসিনি।’  প্রধান বিচারপতি বলেন,‘এটা কেমন কথা? দলবল নিয়ে আসলেই কি আমরা আদেশ দিয়ে দেই? দলবল দেখে আমরা আদেশ দেই না।’

আরেক বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার উষ্মা প্রকাশ করে বলেন,‘আপনি গুরুতর আপত্তিকর কথা বলেছেন। আপনি আমাদের ফোর্স (জোর) করতে পারেন না। আপনারা ভুলে যান যে,কোর্টে আপনারা আইনজীবী। অফিসার অব দ্য কোর্ট। কোনও দলের লোক নন।’

জবাবে এজে মোহাম্মদ আলী তার মন্তব্যর জন্য আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। আরেক বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন,‘প্রধান বিচারপতি যেখানে নাকচ করে দিয়েছেন,সেখানে আপনি তর্ক করছেন কেন?’

এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন,‘আপনার আবেদন আমরা বিবেচনা করতে পারলাম না। বিবেচনা করার সুযোগ নেই।’

প্রসঙ্গত, এর আগে বুধবার সকালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ মামলার আপিলের পেপারবুক ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় হাইকোর্টের আপিল শুনানি আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।

সেই রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশের কপি পাওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা পুনরায় আপিল বিভাগে যান। যার প্রেক্ষিতে আদালত তাদের আবেদন নাকচ করে দেন।