শাহ্ আব্দুল হান্নান: সিগারেট পান করা, তামাক খাওয়া, বিড়ি খাওয়া কত ক্ষতিকর, তা সবাই জানে না। শরীরের এমন কোনো অঙ্গ নেই যা ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
আমি চির দিনই ধূমপান (বিড়ি-সিগারেট ইত্যাদি) নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাস্তবতা হলো, ধূমপান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এ দেশে। যখন রাস্তা দিয়ে যাই, যে দিকে তাকাই- দেখি, লোকেরা সিগারেট খাচ্ছে। যুবক-বুড়ো, বিত্তশালী-সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ সিগারেট খাচ্ছে। তরকারি বিক্রেতা, রিকশাওয়ালা, হকার থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর লোক সিগারেট খাচ্ছে।
ধূমপানের পেছনে অপচয়ের ফলে দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে। ফলে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। তদুপরি সবার স্বাস্থ্যের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। নানা ধরনের মারাত্মক অসুখ হচ্ছে। এসব কারণে এমনকি অনেকে নিঃস্ব হচ্ছে।
এমন অবস্থায় ধারণা করা যায়, এ ব্যাপারে যুগের শ্রেষ্ঠ আলেমরা বক্তব্য দিয়েছেন। যেমন- আমরা ড. আবদুল্লাহ ইউসুফ আল কারজাবির অভিমত পাচ্ছি। তিনি সিগারেট খাওয়া বা ধূমপানকে হারাম বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সিগারেট ও ধূমপানের ক্ষতি কত যে ব্যাপক তা জানা ছিল না আগের যুগে। তাই অতীতের আলেমরা এ ব্যাপারে হারামের ফতোয়া দেননি; কিন্তু এখন এর ক্ষতি পুরোপুরি জানা হয়ে গেছে, তাই ধূমপানকে হারামই বলতে হবে।’ একই কথা প্রযোজ্য তামাকের অন্যান্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
এ ব্যাপারে আল-আজহারে পড়াশোনা করা একজন আলেমের সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি জানান, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, মরক্কোসহ বিভিন্ন আরব দেশের এবং তুরস্কের আলেমরা ধূমপানকে হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। যেসব খ্যাতিমান আলেম এটাকে হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- ১. দারুল ইফতা, কায়রো; ২. শায়খ আরেফি, সৌদি আরব; ৩. শায়খ হাসমান, মিসর; ৪. শায়খ আলী গুমা, সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, মিসর; ৫. শায়খ হাসান ইয়াকুব, মিসর; ৬. ওমর আবদুল কাফি, মিসর; ৭. ড. ইউসুফ আল কারজাবি, কাতার; ৮. গ্র্যান্ড মুফতি, ব্রুনাই।
মিসরে ধূমপান নিষিদ্ধ করে অনেক আগেই আইন করা হয়েছে। অন্যান্য আরব দেশেও ধূমপানের জন্য জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। তাদের দলিল হচ্ছে, কুরআনের নিম্নে উল্লিখিত আয়াতগুলোর তাৎপর্য-
১. ‘তিনি পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন, অপবিত্র বা নাপাক জিনিস হারাম করেছেন’ (সূরা আরাফ : ১৫৭)। ২. ‘তোমরা নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দিও না’ (সূরা বাকারা : ১৯৫)। ৩. ‘তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না’ (সূরা নিসা : ২৯)। ৪. ‘তোমরা অপচয় করো না। অপচয়কারী শয়তানের ভাই’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৭)।
আল কুরআনের আরো অন্তত ১০-১২টি আয়াত এবং বহু হাদিসের আলোকে শ্রেষ্ঠ আলেমেরা এই ফতোয়া দিয়েছেন। এ ফতোয়া একই ধরনের অন্যান্য পণ্যের ব্যাপারেও প্রযোজ্য। এখন আমাদের দায়িত্ব, জনগণকে এসব খ্যাতনামা আলেমের ফতোয়া জানিয়ে দেয়া। এ ব্যাপারে মসজিদের ইমামসহ সব আলেম এবং শিক্ষিত ব্যক্তিদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। দেশের সব এনজিও, রাজনৈতিক দল ও সব ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব হলো, এ ব্যাপারে প্রত্যেক জেলা, উপজেলা ও শহরে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা।
সরকারের এ ব্যাপারে দায়িত্ব অনেক বেশি। দেশে তামাকচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবিলম্বে তামাক চাষ বন্ধ করা উচিত। সিগারেট কোম্পানিগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত এবং তাদের বিকল্প শিল্প গড়ে তোলার জন্য সহায়তা করা প্রয়োজন। ফ্যাক্টরি বন্ধ করার ফলে মালিকদের যে ক্ষতি হয়, তার ক্ষতিপূরণও দেয়া উচিত। সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা সিগারেট চোরাচালান করে আনবে, তাদের শাস্তি বেশি দেয়া উচিত।
ধূমপান পরিত্যাগে সাহায্য করার জন্য প্রত্যেক হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কারখানায় কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সেখানে একজন ডাক্তার বা শিক্ষক বা অফিসার তার নিয়মিত কাজের অতিরিক্ত হিসেবে এ কাজ করবেন।
বর্তমানে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করে যে আইন আছে, তা পুলিশ কর্তৃপক্ষ শক্তভাবে কার্যকর করা অপরিহার্য।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.