নতুন আতঙ্ক এবং অপমানের হালহকিকত!

0
1027
blank
blank

গোলাম মওলা রনি: মজিবর নামের এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক প্রায় কুড়ি বছর ধরে একটি নামকরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কর্মস্থলে সৎ-মেধাবী-সজ্জন বলে পরিচিত মজিবর ভাড়া থাকেন রামপুরায়। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে রোজ মতিঝিলে আসেন অফিসে। তার পদের সমপর্যায়ের অন্য কর্মকর্তারা সবাই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলেও মজিবর তা পারেন না। একান্নবর্তী পরিবারের বিরাট দায় মেটানোর জন্য তিনি অফিসের অনুমতিসাপেক্ষে মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন এবং গাড়ি বাবদ পাওয়া ভাতা সাংসারিক কাজে ব্যয় করেন। গাড়ি না থাকার জন্য তিনি কোনো দিন হীনম্মন্যতায় ভোগেননি। পরিবারের সবার মঙ্গলের জন্য নিজের সামান্য কষ্টটুকু তাকে হররোজ এক অনাবিল প্রশান্তি এনে দেয়। অন্য দিকে তার এই দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের কারণে অফিসের লোকজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজন তাকে সব সময় অন্য রকম মর্যাদার চোখে দেখে থাকে। সেই মর্যাদা হৃদয়ে ধারণ করে মজিবর যথারীতি ট্রাফিক আইন মেনে অত্যন্ত ধীরেসুস্থে তার মোটরসাইকেল চালিয়ে অফিসে যাতায়াত করে আসছিলেন।

গুলশান ট্র্যাজেডির পর ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন সময় গণতল্লাশি শুরু করে দেয়। বাংলাদেশের পুলিশের গণতল্লাশি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। তল্লাশির কারণ, ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কে কমবেশি সবাই সজাগ। তল্লাশি মানেই টু-পাইস কামানো। লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল আরোহী, বাস, ট্রাক, টেম্পো, ভ্যানগাড়ি, ঠেলাগাড়ি ও রিকশা তল্লাশির মাধ্যমে তাদের লাভ, লোভ এবং কর্মতৎপরতার সমন্বয় ঘটিয়ে তারা বিগত দিনে যা করে আসছিল তাতে মজিবর সাহেবের মতো ভদ্রলোকদের কোনো দিন বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়নি; কিন্তু সম্প্রতি তল্লাশির নামে যা হচ্ছে, তা সাধারণত যুদ্ধকালীন সময়ে দখলদার বাহিনী সন্দেহভাজন লোকজনের সাথে করে থাকে। এ ধরনের গণতল্লাশি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের জন্য রীতিমতো অবমাননাকর এবং তার মৌলিক অধিকারের প্রতি একধরনের প্রচণ্ড চপেটাঘাত। কোন আইনের ভিত্তিতে পুলিশ নির্বিচারে গণতল্লাশির নামে পথচারীদের থামিয়ে যাচ্ছেতাই করার ক্ষমতা লাভ করেছে, সেই প্রশ্ন মজিবর সে দিন উচ্চারণ তো দূরের কথা- মনের মধ্যেও স্থান দেয়ার সাহস পাননি।
ঘটনার দিন বিকেলে তিনি বাসায় ফিরছিলেন। হঠাৎ পুলিশের বাঁশির শব্দ এবং হাতের ইশারা পেয়ে মজিবর তার মোটরসাইকেল থামালেন। পুলিশ সদস্য তাকে মোটরসাইকেল এক পাশে রেখে মাথার ওপর হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দাঁড়াতে বললেন। তিনি প্রথমে বোকার মতো না বোঝার ভান করলেন। পুলিশের ধমকযুক্ত অশ্লীল মধুবাক্য শ্রবণে তিনি হঠাৎ বুদ্ধিমান হয়ে গেলেন এবং সুবোধ বালকের মতো মাথায় দুই হাত তুলে দুরুদুরু বুকে আশপাশে তাকিয়ে দেখলেন তার মতো বেশ কয়েকজন অভাগা একই কায়দায় আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে পুলিশের দয়া-করুণা ও কৃপার আশায় পিটপিট করে তাকাচ্ছে এবং হয়তো মনে মনে বলছে- ইয়া আল্লাহ! আমাদের এই দুরবস্থা যেন পরিচিত কেউ দেখে না ফেলে। মজিবর সাহেবের সারা শরীর তল্লাশি করা হলো। তার ব্যাগ, মোটরসাইকেল, হেলমেট, জুতা-মোজা ইত্যাদি তছনছ করার পর তল্লাশিরত কর্মকর্তা তার প্যান্টের সামনের দুই পকেটে একসাথে দুই হাত ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর দশটি শক্তিশালী আঙুল চালনা করে মজিবর সাহেবের তলপেটের নিম্নাংশ পর্যন্ত কিলবিল করে গুদগুদানি দিতে আরম্ভ করলেন। মজিবরের সুরসুরির মাত্রা একটু বেশি বিধায় তিনি কোমর দুলাতে দুলাতে হাসতে আরম্ভ করলেন। পরে ধমক খাওয়ার পর বুঝলেন এটা হাসির সময় নয়- কেবলই আত্মসমর্পিত হওয়ার সময়।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির নায়েম রোডের একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল একাডেমি ফর এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট বা নায়েম ক্যাম্পাসে চমৎকার ছিমছাম একটি ছোট্ট মসজিদ রয়েছে। মসজিদটির মুসল্লিদের বেশির ভাগই নায়েম রোডে বসবাসরত সাধারণ নাগরিক। নায়েমে প্রবেশের জন্য সদর দরজা থাকলেও মূলত মুসল্লি এবং নায়েমের অভ্যন্তরে বসবাসরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবার-পরিজনের যাতায়াতের সুবিধার জন্য মসজিদের কাছাকাছি একটি স্বতন্ত্র গেট তৈরি করা হয়েছে। গত ৩০-৪০ বছরে গেটটি কোনো দিন একটিবারের জন্যও বন্ধ করা হয়নি। ফলে নায়েম রোডের সব বাসিন্দা, বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, গৃহিণী ও মুসল্লিদের সাথে নায়েম ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের বাসিন্দাদের আত্মিক, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।

ঘটনার দিন নামাজ পড়তে গিয়ে মহল্লার মুসল্লিরা দেখলেন মসজিদের প্রবেশ গেটটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা যথারীতি গেটে ধাক্কাধাক্কি আরম্ভ করলেন; কিন্তু গেটের অপর পাশ থেকে কোনো সাড়া মিলল না। গেটের পাশে একটি ছোট্ট গার্ডরুম রয়েছে, যেখানে সার্বক্ষণিকভাবে একজন গার্ড দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ঘটনার দিন সেখানে কোনো গার্ডও ছিলেন না। ফলে মুসল্লিরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কিছুই বুঝতে পারলেন না এবং কিছুই জানতে পারলেন না- কেন হঠাৎ করে তাদের জন্য মসজিদের দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো। কিছু মুসল্লি ভগ্নমনোরথ হয়ে পাশের ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করলেন- বাকিরা নিজ নিজ বাসায় ফিরে গেলেন। পরের দিন দেখা গেল আবার গেট খুলে দেয়া হয়েছে। মহল্লাবাসী মুসল্লিরা ভারি আশ্চর্য হয়ে গতকালের গেট বন্ধের কারণ জানার চেষ্টা করলেন। তাদের বলা হলো- মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে মসজিদে প্রবেশের গেটটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। মুসল্লিরা বললেন, ইতঃপূর্বে বহু মন্ত্রী বহুবার এখানে এসেছেন- কই, কোনো দিন তো একমুহূর্তের জন্যও গেট বন্ধ হয়নি। জবাব এলো- দেশে কি আগের মতো অবস্থা আছে নাকি? সরকার তাদের মন্ত্রী, এমপি এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে ভারি উদ্বিগ্ন। ফলে মন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো এলাকায় চিরুনি তল্লাশি এবং ফুটাবিহীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশবাহিনীর কথামতো সব কিছু করা হয়েছে।

তৃতীয় ঘটনাটিও নায়েম রোডের ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস মসজিদকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল। সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদের ধকলে অন্য সব স্থানের মতো কলেজ ক্যাম্পাসের মসজিদটিও হয়তো পুলিশের নজরদারির আওতায় এসেছে। ঢাকা কলেজ মসজিদটি বেশ বড়সড়। মসজিদের খতিবের চমৎকার বয়ানের কারণে প্রতি জুমাবারে এত বেশি লোকসমাগম হয় যে, পুরো মসজিদ ভরে যাওয়ার পরও কয়েক হাজার মুসল্লি মসজিদের সামনের রাস্তা ও মাঠে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে থাকেন। মসজিদে নিয়মিতভাবে তাবলিগ জামাতের বিভিন্ন দল দাওয়াতি কাজে আসে। বিশেষ করে প্রতি রাতে এশার নামাজ শেষে শ’খানেক তরুণ মুসল্লি মসজিদের বারান্দায় জটলা করে বসেন এবং প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে হাদিসের বয়ান শোনেন। ১০-১২ বছর ধরে এভাবেই চলে আসছিল। ঘটনার রাতে মুসল্লিরা যথারীতি বয়ান শুনছিলেন। একজন তরুণ দাঁড়িয়ে কোনো একটি হাদিসের বই দেখে হাদিসের বর্ণনা পড়ছিলেন এবং অন্যরা গভীর ভক্তি, শ্রদ্ধা ও মনোযোগ সহকারে হাদিসের মর্ম বোঝার চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় পুলিশের একটি টহল গাড়ি সেখানে প্রবেশ করল।
পুলিশের গাড়িটি মসজিদের সামনে এসে থামল এবং গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ না করেই দাঁড়িয়ে থাকল। গাড়ির সামনে বসা পুলিশ কর্তাটি একনিষ্ঠভাবে মুসল্লিদের দিকে তাকিয়ে মোবাইল ফোনে কী সব কথাবার্তা বলা শুরু করলেন। হঠাৎ করে পুলিশের উপস্থিতি এবং টহল ভ্যানের ইঞ্জিনের শব্দে মুসল্লিদের মধ্যে চিত্তচাঞ্চল্য এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গে কিঞ্চিৎ অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল। বয়ান প্রদানকারী এবং সমবেত শ্রবণকারীদের পঞ্চইন্দ্রিয় মুহূর্তের মধ্যে টহল পুলিশের উপস্থিতির বিষয়ে যে নাজুক অবস্থায় উপনীত হয়েছিল তা তাদের নড়াচড়া, এলোমেলো তাকানো এবং বারবার টুপি, পাগড়িতে হাত বুলানোর ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। পুলিশ কিছুটা দয়াপরবশ হয়ে তাদের গাড়িটি কয়েক গজ সামনে নিয়ে থামাল এবং গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় নেমে এলেন। মুসল্লিরা তড়িঘড়ি করে তাদের অনুষ্ঠান শেষ করলেন এবং মসজিদ ত্যাগ করার সময় এমন সতর্কভাবে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পেছন ফিরে পুলিশের দিকে গোপনে তাকালেন, যা দেখে মনে হয়- মুসল্লিরা ভয় পেয়েছেন, কিন্তু সেই ভয় গোপন রেখে শেষবারের মতো পুলিশের ভাবভঙ্গি অবলোকন করে গন্তব্যে ফেরার আগে বুঝে নিতে চাচ্ছেন- তাদের কাউকে আবার থামতে বলা হয় কি না।

এবার চতুর্থ ঘটনার কাহিনী বলে আজকের শিরোনামের উপসংহারে চলে যাবো। চতুর্থ ঘটনাটির তারিখ ছিল ১৫ জুলাই, শুক্রবার। ঘটনাটির আগে বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের বিরাজমান জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও তারুণ্যের বিপথগামিতা রুখে দেয়ার জন্য তাদের যুগান্তকারী ও বিস্ময়কর সিদ্ধান্তটি নেয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের সব মসজিদের জুমাপূর্ব খুতবার জন্য একটি অভিন্ন ভাষণ রচনা করবে এবং জুমার আগেই তা দেশের সব মসজিদে পৌঁছে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট মসজিদ কমিটি এবং খতিবের প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশ হলো- নিজেদের মনগড়া অথবা মস্তিষ্কপ্রসূত বয়ান না করে সরকার কর্তৃক প্রণীত ভাষণটি পাঠ করতে হবে। শুক্রবারের আগের রাতে সরকার সমর্থক টিভির টকশোগুলোতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্মকর্তারা সদলবলে উপস্থিত হয়ে জাতিকে আশ্বস্ত করতে চাইলেন যে, তাদের প্রণীত যুগান্তকারী খুতবা দেশের সব মসজিদে একযোগে এবং অভিন্নভাবে পঠিত হলে দেশে জঙ্গিবাদ বলে কিছু থাকবে না- পারিবারিক শান্তি, পরিবারের সদস্যগণের মধ্যে মায়ার বন্ধন এবং জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জিত হবে।

প্রায় এক বছর ধরে আমি একটি সরকারি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে থাকি। বেশ বড়সড় মসজিদ এবং প্রতি জুমাবারই কয়েক হাজার মুসল্লির সমাগম হয়। খতিব সাহেবের চমৎকার বয়ান শোনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে লোকসমাগম হয়ে থাকে। ভদ্রলোকের বয়স ষাট বছর পেরিয়ে গেছে। নিয়মিত অধ্যয়ন করেন এবং পড়াশোনা করে প্রতি সপ্তাহেই মুসল্লিদের সামনে নতুন নতুন বিষয় উপস্থাপন করেন। বিষয়বস্তুর গভীরতা, প্রাঞ্জল বর্ণনাভঙ্গি, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, উপস্থাপনার শ্রেষ্ঠত্ব এবং সর্বোপরি সুমধুর কণ্ঠের লালিত্যের কারণে খতিব মসজিদের নিয়মিত মুসল্লিদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসন লাভ করে ফেলেছেন।

ঘটনার দিন আমি মসজিদে যেতে যেতে ভাবছিলাম- দেখি আজকের জুমায় খতিব কিভাবে সরকারি খুতবা মুসল্লিদের সামনে উপস্থাপন করেন। মসজিদে ঢুকতে গিয়ে আমি প্রথমেই হোঁচট খেলাম। অনেক পুলিশ অস্ত্র হাতে মসজিদের গেটে পাহারা বসিয়েছে এবং কিছু পুলিশ মসজিদের সামনে ঘোরাফেরা করতে করতে বারবার সতর্ক দৃষ্টি মেলে মসজিদের ভেতরের মুসল্লি এবং খতিবের কর্মকাণ্ড বোঝার চেষ্টা করছে। এ পরিস্থিতি আমি কোনো দিন কোনো মসজিদ- এমনকি গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটের সময়ে বায়তুল মোকাররমেও দেখিনি। আলোচ্য মসজিদটি একটি নিরিবিলি স্থানে অবস্থিত। শুক্রবার দিন সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকার কারণে স্থানটি বলতে গেলে জনশূন্য অবস্থায় থাকে। বহিরাগত এবং দূর-দূরান্তের লোকজন জুমা উপলক্ষে সেখানে আসে এবং নামাজ শেষে চলে যায়। মসজিদের গেটে একজন নিরস্ত্র আনসার গেটম্যান হিসেবে সব সময় দায়িত্ব পালন করতেন। কাজেই ঘটনার দিন হঠাৎ করে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে লোকজন বিব্রত বোধ করতে থাকেন।

মসজিদে প্রবেশ করার পর লক্ষ করলাম খতিব তার চিরাচরিত অভ্যাসমতে খুতবার বয়ান পেশ করতে পারছিলেন না। একধরনের সঙ্কোচ, জড়তা, ভয় ও আড়ষ্টতা বয়োবৃদ্ধ খতিবকে পেয়ে বসেছিল। তিনি একবার নিজের মতো করে শুরু করেন আবার পরক্ষণে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কী যেন ভাবেন- তারপর সরকারি খুতবা থেকে কিছু বাক্য বলার চেষ্টা করেন। তার মুখমণ্ডল অন্যান্য দিনের মতো উজ্জ্বল এবং অভিব্যক্তিতে স্বাভাবিকতা ছিল না। তিনি কোনো বক্তব্যই সুন্দরভাবে শেষ করতে পারছিলেন না। কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল এবং এলোমেলো প্রসঙ্গের জড়াজড়ির কারণে পুরো খুতবাটি একটি জগাখিচুড়ি হয়ে যাচ্ছিল। ফলে মুসল্লিরা বুঝতেই পারছিল না যে, সরকারি খুতবায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আসলে কী বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একটি ছোট শিশুকে কোনো কিছু মুখস্থ করিয়ে আনার পর অভিভাবকেরা যখন সন্তানটিকে জনসম্মুখে দাঁড় করিয়ে তা আবৃত্তি করতে বলে এবং দূর থেকে চড়-থাপ্পড়ের ভয় দেখিয়ে তা আবৃত্তি করার জন্য শাসায়, তখন শিশুটির যে ভয়ার্ত অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে, ঠিক তেমন একটি দৃশ্য দেখা গিয়েছিল সে দিনের জুমাপূর্ব খুতবা দেয়ার সময়টিতে।

আজকের নিবন্ধের একদম শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে জনগণের মন ও মানসে যে ভয়ভীতি বাসা বেঁধেছে, তার সাথে রাষ্ট্রযন্ত্রের অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানার কারণে সেই ভয় কিরূপে জনজীবনে নানা আতঙ্ক ও অপমানের উপাখ্যান সৃষ্টি করে চলেছে তা উল্লেখিত চারটি উদাহরণের মাধ্যমে নিতান্ত সাদামাটাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। আশা করি, সম্মানিত পাঠক নিবন্ধটির মর্মার্থ বুঝতে সক্ষম হবেন।