নবী মুহাম্মাদ সা: এর আদর্শ

0
1005
blank
blank

ড. মুহাম্মদ সিদ্দিক: ঈদে মিলাদুন্নবী সা:। খুশির দিবস। এ দিকে মুসলমানদেরকে হত্যা, জুলুম, ধর্ষণ, পরাজয়, অপমান, নির্যাতন, দারিদ্র্য, মূর্খতা, কুশিক্ষা, অনৈক্য, অযোগ্যতা ও ধর্মহীনতাসহ নানা ফিতনায় ঘিরে ফেলেছে। আজ নবী মুহাম্মাদ সা:-এর সুন্নাহ, আদর্শ, হাদিস ও সিরাত শিক্ষা দিয়ে আমাদের এ দুরবস্থা যাচাই করতে হবে। ৫৭টি রাষ্ট্রের ইসলামি বিশ্বে ঐক্য নেই। তবে বিশ্বের সর্বমোট ৬৯টি মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর মতো ঐক্য প্রদর্শন করত মুসলমানদের আজ এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। নবীর আদর্শ গ্রহণকারীদের ঐক্যের আদর্শে থাকা উচিত। তারাই আজ ছিন্নভিন্ন। আরবরা খুদে ইসরাইলের হাতে মার খেয়ে আরব আরব বলে চেঁচাচ্ছে। তাই তাদের হৃদয়ে মিয়ানমার, জিনজিয়াং, গুজরাট ও অধিকৃত কাশ্মিরে মুসলমান হত্যার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। মুসলমান নেতারা ঐক্যের ধার ধারেন না। ফলে দেড় শ’ কোটি কেন, দুই শ’ কোটি সংখ্যা বাড়ালেও অতীতের এক লাখ মুসলমানের মতো ঈমান, যোগ্যতা ও সাহসের সাথে তারা দাঁড়াতে পারবেন না।
হজরত হারেস আশয়ারি রা: থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমি তোমাদের পাঁচটি আদেশ দিয়েছি- একতা রক্ষা করো, বাধ্য থাকো, হিজরত করো, আল্লাহর পথে জিহাদ করো এবং শ্রবণ করো। সঙ্ঘবদ্ধ জীবন থেকে যে অর্ধহস্ত পরিমাণ দূরেও সরে পড়ে, সেখান থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত সে তার গ্রীবাদেশ থেকে ইসলামের বন্ধনকে মুক্ত করে দেয়। সে অন্ধকার যুগকে আহ্বান করে, সে নামাজ পড়লেও, রোজা রাখলেও, নিজেকে মুসলমান মনে করলেও দোজখের জ্বালানি হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২৮৬৩)।
রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ, আমার উম্মতকে পথভ্রষ্টতার ওপর সমবেত করাবেন না।’ ঐক্য ও অনৈক্যের ফলাফলের একটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ স্পেনে মুসলমান শাসন। প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের ঐক্য ছিল বলেই তারিক বিন জিয়াদ মাত্র সাত হাজার মুজাহিদ নিয়ে স্পেনে ঢুকেছিলেন। আর ঐক্য ছিল না বলেই পরবর্তীকালে কয়েক লাখ মুসলমান স্পেনে নিহত এবং সেখান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল।
সাধারণ মুসলমানদের ও নেতাদের অনৈক্যের সাথে যুক্ত হয়েছে ষড়যন্ত্র, চাতুর্য ও বিশ্বাসঘাতকতা। প্রকাশ্যে সরাসরি ইসলামের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রকাশ না করলেও, অনেকে চাতুর্যপূর্ণ কথার মাধ্যমে ইসলামকে হেয়প্রতিপন্ন করে; যেমন বলা হয়- ইসলাম মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা।
আল্লাহ ছদ্মবেশী মুনাফিকদের থেকে সাবধান থাকার জন্য মুসলমানদের হুঁশিয়ার করে ‘মুনাফিকুন’ নামে একটি সূরাই অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন শরিফে তিনি বলেন, ‘তুমি যখন তাদের প্রতি তাকিয়ে দেখো, তখন তাদের দেহাবয়ব তোমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়। আর যখন কথা বলে, তখন তাদের কথা তোমার শুনতেই ইচ্ছা করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা দেয়ালের গায়ে খাড়া করে রাখা কাঠের গুঁড়ির মতো’ (অর্থাৎ নৈতিক চরিত্রহীন অপদার্থ)। যেকোনো জোরদার আওয়াজকে এরা নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে (অর্থাৎ কখন না জানি, তাদের প্রতারণা প্রকাশ হয়ে পড়ে)।
মানবজাতির নেতৃত্ব কেমন হবে, এর আদর্শ রয়েছে রাসূল সা: ও খোলাফায়ে রাশেদার মধ্যে। আধুনিক মুসলমানেরা সেখানে আদর্শ না খুঁজে এমন সব ব্যক্তির মাঝে নেতৃত্বের আদর্শ খোঁজে, যারা আসলেই মুসলমান কি না সন্দেহ।
যেসব নেতৃত্ব এখন কর্তৃত্ব করছে, তাদের বেশির ভাগেরই না আছে যোগ্যতা, না সততা। মুসলিম জনগণের আস্থা কমই রয়েছে এসব রাজা, বাদশাহ এবং কথিত ডিক্টেটর নির্বাচত নেতার ওপর।
রাসূলে করিম সা: বলেছেন, যে ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিদ্যান্বেষণ করে এবং তাতে তার মৃত্যু হয়, তার এবং নবীদের মধ্যে বেহেশতে একটি ধাপ মাত্র পার্থক্য থাকবে’ (দারিমি)।
রাসূলে করিম সা: বলেছেন, যে বিদ্যা অন্বেষণ করে এবং তা অর্জন করে, তার জন্য দুই সওয়াব। সে যদি তা অর্জন না করে, তার জন্য এক সওয়াব’ (দারিমি)।
রাসূলে করিম সা: বলেছেন, আল্লাহর বান্দাদের ভেতর আল্লাহকে সর্বাপেক্ষা অধিক ভয় করেন আলেমরা’ (দারিমি)। তিনি আরো বলেছেন, লোকের ভেতর নবুওয়াতের পদ গৌরবের, সর্বাপেক্ষা সন্নিকটে আলেম ও গাজীগণ’ (আবু নাইম)। রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘চীন দেশে হলেও বিদ্যা অন্বেষণ করো’ (বায়হাকি)।
রাসূলে করিম সা: বলেছেন, ‘রাত্রির এক ঘণ্টাকাল বিদ্যান্বেষণ সমস্ত রাত্রি জাগরণ থেকে উত্তম’ (দারিমি)। তিনি বলেছেন, বিদ্যা শিক্ষা করো এবং লোকজনকেও তা শিক্ষা দাও। ফরজ কার্যাবলি শিক্ষা করো এবং লোকজনকে তা শিক্ষা দাও। কুরআন শিক্ষা করো এবং লোকজনকে তা শিক্ষা দাও। কেননা, আমি মৃত্যুর অধীন এবং বিদ্যারও শিগগিরই মৃত্যু ঘটবে এবং বিপদ-আপদ প্রকাশিত হবে। এমনকি ফরজ সম্পর্কেও দুই ব্যক্তির মতদ্বৈধতা হলে, তাদের মাঝে তা মীমাংসা করে দেবে, এমন লোক তারা পাবে না’ (দারিমি)।
ওপরে যেসব হাদিস উদ্ধৃত করা হলো, তাতে দেখা যায়, ধর্মীয় ও সাধারণ উভয় শিক্ষাই নবী সা: শিখতে বলেছেন। শুধু সাধারণ শিক্ষা নেয়া, আর ধর্মীয় শিক্ষা না করা মূর্খতারই শামিল। এতে দুনিয়ায় কিছু কামিয়াবি হলেও পরকালে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। হ
লেখক : গবেষক ও প্রবন্ধকার