নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি বিএনপির

0
471
blank

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ, গণনা, ফলাফল ইত্যাদির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্রে আস্থাশীল একটি দল, নির্বাচনে বিশ্বাসী একটি গণভিত্তিক সংগঠন। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলনকে সম্মান প্রদর্শন করে বিএনপি। তিনি বলেন, গতকাল নাসিক নির্বাচনে বাহ্যিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের বাতাবরণ সৃষ্টি করে ডা: সেলিনা হায়াত আইভিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে, এতে সত্যিকারের গণরায়ের প্রতিফলন ঘটলে আমরা সেটিকে শুভেচ্ছা জানাই। তবে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের কারচুপির অভিযোগকে উড়িয়ে দেয়া যায়না। তিনি অভিযোগ করেছেন-একটি কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে এক হাজার, অথচ সেখানে ঘোষনা করা হয়েছিল নৌকা প্রতীকের আটশো এবং ধানের শীষ পাঁচশো। পরে সাংবাদিকরা এ বিষয়টি উল্লেখ করলে প্রিজাইডিং অফিসার ফলাফল পাল্টে দেন। নির্বাচনে সব প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের নিকট কেন্দ্র ভিত্তিক লিখিত ফলাফল শীট সরবরাহ করার কথা থাকলেও নাসিক নির্বাচনে ১৭৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৪টি কেন্দ্রের স্বাক্ষরকৃত ফলাফলের শীট বিএনপি’র এজেন্টদেরকে সরবরাহ করা হয়নি।

সুতরাং ধানের শীষের প্রার্থীর কারচুপির অভিযোগকে আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি। সেজন্য গতকালের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ, গণনা, ফলাফল ইত্যাদির বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে জোর দাবি করছি।
শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন। তবে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন তিনি নেননি।
রিজভী বলেন, গতকালের নাসিক নির্বাচন সম্পর্কে আমরা কয়েক দিন পূর্ব থেকেই বলে আসছিলাম যে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের আড়ালে সরকারী ভেল্কিবাজির কোনো মহড়া চলছে কি না ? জনগণের রায়কে পাল্টে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে কি না ? কারন (ক) এবারে নাসিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৭২ ঘন্টা পূর্ব থেকে এলাকার বাহিরের লোকজনদের নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ও অন্যান্য জেলার নেতৃবৃন্দ ইতোপূর্বে নির্ধারিত নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সময়ের দেড় দিন আগে থেকেই এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারেননি-যা নজীরবিহীন। এতো আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করাও সন্দেহজনক। এমনকি যেদিন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনী গণসংযোগে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, এটি বানচাল করার জন্য নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় স্থানীয় প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এটিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রিজভী আরো বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন না করায় নির্বাচনী এলাকায় ভয়-ভীতির পরিবেশ বিদ্যমান ছিল। যার প্রতিফলন আমরা দেখলাম ভোট কেন্দ্রে স্বল্প সংখ্যক ভোটারদের উপস্থিতিতে। কোন কোন কেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র পঁচিশ ভাগ। সার্বিকভাবেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে পরিমান ভোট পড়ার কথা তার চেয়ে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। (গ) কোন কোন কেন্দ্রে সারাদিন ভোটারদের উপস্থিতি খুবই নগন্য দেখা গেলেও ফলাফলে দেখা গেছে শতকরা আশি ভাগ ভোট পড়েছে। আবার কোন কোন কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন ধরে ভোট দিতে গেলে দেখা গেছে তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে, যে খবরটি আজকের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নজীরবিহীন নিরাপত্তা বিধানের আড়ালে রাতের অন্ধকারে কী ভূমিকা রেখেছে তা নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। কারন কারফিউ এর মতো পরিস্থিতিতে কোন কিছু জনগণের নজরদারিতে থাকার কথা নয়। ভোট সংশ্লিষ্ট ইন্সট্রুমেন্ট যেমন ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, সিল ইত্যাদি তাদের হেফাজতে থাকে। ফলে ভোট জালিয়াতির যথেষ্ট সম্ভাবনাও থাকে। সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে ক্ষমতাশালী কেউই অনিয়ম করতে সাহস পেতো না। সুতরাং গতকাল নাসিক নির্বাচন স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারলো না। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, আফরোজা আব্বাস, মো: মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।