নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে হলেও দেশের উন্নয়ন করব: প্রধানমন্ত্রী

0
459
blank

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসুন আমরা সবাই মিলে দেশকে গড়ে তুলি। আমার ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি তো সব হারিয়েছি। বাংলাদেশে এসেছি কেবল দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করতে। আমি বাবার মতো, আমার পরিবারের মতো, আপনাদের কল্যাণে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে হলেও দেশের উন্নয়ন করব। আপনারা ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের উন্নয়ন করতে পেরেছি। লক্ষ্মীপুরের জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক জনসভায় মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকালে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ যখন ছিল না তখন দেশের উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগের কাছে কখনো চাইতে হয়না, এ ভরসাটা রাখবেন। আগামীতে যত নির্বাচন আসবে প্রত্যেক নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত করতে চাই, শান্তি নিরাপত্তা আনতে চাই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সব উন্নয়ন থেমে যায়। ২১ বছর এ দেশের উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন শুরু করে।’
লক্ষ্মীপুরবাসীর উদ্দেশে তিনি আরো বলেছেন, ‘লক্ষ্মীপুর ছিল অবহেলিত জায়গা। এখানে যা যা করা দরকার তা সব করে দেব। এমনকি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা পর্যন্ত পাকা রান্তা করে দেব। যাতে এলাকাবাসীকে কাদা মাটিতে থাকতে না হয়। প্রতিটি উপজেলায় ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি ধর্মে বিশ্বাস করে না। ২০১৫ সালে তারা আন্দোলনের নামে কোরআন পুড়িয়েছে, মসজিদে আগুন দিয়েছে। বগুড়ায় মসজিদে কোরআন তেলওয়াতকালে এক কৃষক লীগ নেতাকে খুন করেছে। যারা এ রকম করে তারা কিসের ধর্মে বিশ্বাস করে? নিরীহ মানুষকে যারা হত্যা করে তারা জান্নাতে নয়, দোযখে যায়। ক্ষমতায় গিয়ে তারা দুর্নীতি ও লুট করে। আর বিরোধী দলে গিয়ে মানুষ হত্যা করে। ২০১৩ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে জ্বালাও-পোড়াও করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা গুলশানের কার্যালয়ে বসে ও তার কুলাঙ্গার ছেলে বিদেশে বসে হুকুম দিয়েছে, আর তাদের ক্যাডার বাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, হত্যা ও নির্যাতন করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী ঘরে থাকতে পারেনি। এই লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম, সামসুদ্দোহা পাটোয়ারী, মিজানসহ ১৭ জন নেতা-কর্মীকে বিএনপির সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছিল।’
শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ভারতের কাছ থেকে এক ফোঁটা পানিও আনতে পারেনি। তারা কোনো স্থল চুক্তি করতে পারেনি, শান্তি চুক্তি করেনি। আমরা ক্ষমতায় এসে সব করেছি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে লক্ষ্মীপুর সফরকালে তার দেওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতি ও তার বাস্তবায়ন চিত্র তুলে ধরেন এবং নতুন নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
উন্নয়নের অঙ্গীকার করে লক্ষ্মীপুরবাসীর কাছে দোয়া, ভালোবাসা ও নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, ‘ভোট দেবেন তো?’ এ সময় উপস্থিত সবাই হাত উঁচু করে ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
এদিন দুপুর দেড়টায় হেলিকপ্টারে করে লক্ষ্মীপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি সার্কিট হাউজে জোহরের নামাজ আদায় ও দুপুরের খাবার খেয়ে বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে স্টেডিয়ামে নির্মিত নৌকা আকৃতির মঞ্চে উপস্থিত হন এবং সাড়ে ৩টায় বক্তব্য শুরু করে বিকেল ৪টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য রাখেন।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সফরে প্রধানমন্ত্রী রামগতি ও কমলনগর মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, চিফ জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, উপজেলা পরিষদ ভবন (সদ), উপজেলা পরিষদ ভবন (কমলনগর), উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম (কমলনগর), লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ ভবন, মোহাম্মদীয় বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ, উপজেলা প্রাণি সম্পদ দফতর ও প্রাণি হাসপাতাল (কমলনগর) উদ্বোধন করেন।
এ ছাড়াও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, পুলিশ অফিসার্স মেস, লক্ষ্মীপুর সদর খাদ্য গুদাম, ১৩২/১৩৩ কেবি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ, লক্ষ্মীপুর জেলা ও আশপাশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলী, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও লক্ষ্মীপুরের পৌর মেয়র মো. আবু তাহের প্রমুখ।