নির্দলীয়ভাবেই পৌরসভা নির্বাচনের সম্ভাবনা

0
458
blank
blank

নিউজ ডেস্ক: দ্রুত পৌরসভা আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ না হলে নির্দলীয়ভাবেই নির্বাচনের আভাস দিয়েছে ইসি। ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু পৌরসভায় নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। এসব এলাকায় ভোটের দিন পেছানোর সুযোগ নেই। অধ্যাদেশ না হলে নির্বাচনসংক্রান্ত বেশ কিছু বিধি প্রণয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঝুলে আছে। এগুলো ছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধিত আইনে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় নির্বাচনের সময় নির্ধারণে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে ইসি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন করতে হলে কয়েক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। তা না হলে আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে হবে। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু পৌরসভায় নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। এসব এলাকায় নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে সিইসি বলেন, আমরা অধ্যাদেশের অপেক্ষায় আছি।

সংশোধিত আইনানুযায়ী দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন করতে হলে এ সপ্তাহের মধ্যেই অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে জাতীয় সংসদের অধিবেশন। সংসদ অধিবেশন চলাকালে অধ্যাদেশ জারির সুযোগ নেই। এ সময় আইনের সংশোধনী বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া শেষ বিলটি পাস হওয়ার পর এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ হবে। এতে সময় বেশি লাগবে। সে ক্ষেত্রে সংশোধিত আইনে ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন করা যাবে না। কারণ ডিসেম্বরের নির্বাচনের জন্য নভেম্বরেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে । নির্বাচনী বিধি ও প্রার্থীর আচরণবিধি সংশোধন শেষ না হলে তফসিল দেয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী নির্দলীয়ভাবেই পৌরসভা নির্বাচন করতে হবে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন রোববার যুগান্তরকে বলেন, দলীয় পরিচয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। আইন সংশোধনীর বিষয়টি অর্ডিন্যান্স আকারে জারি করতে রাষ্ট্রপতির দফতরে রয়েছে। দ্রুত অর্ডিন্যান্স জারি হতে পারে।

এদিকে অধ্যাদেশ জারির আগমুহূর্তে আইনের সংশোধনীতে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নতুন করে প্রস্তাব পাঠিয়েছে কমিশন। এতে পৌরসভায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা না গেলে যুক্তিসঙ্গত যে কোনো সময়ে ভোটের আয়োজনের বিধান রাখার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কমিশনের প্রস্তাব সরকার আমলে নিয়ে তা সংশোধনীতে যুক্ত করা হলে দীর্ঘসূত্রতার আশংকা রয়েছে। পুরো বিষয়টি সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক যুগান্তরকে বলেন, চলতি সপ্তাহে অধ্যাদেশ জারি হলে নির্বাচন আয়োজনে কোনো সমস্যা হবে না। বিধিমালার খসড়া তৈরির কাজ এগিয়ে রয়েছে। অধ্যাদেশ জারির পরই তা চূড়ান্ত করতে বেশি সময় লাগবে না।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলীয়ভাবে নির্বাচন করার বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন তারা। সরকার দলীয়ভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় সেই আলোকে বিধি সংশোধনসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে নতুন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে তাদের। পৌরসভা নির্বাচনের সময়সীমা যত ঘনিয়ে আসছে, কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে চাপ তত বাড়ছে। কারণ আইন সংশোধনের পরই পুরো নির্বাচনের প্রস্তুতি এসব কর্মকর্তাদের শেষ করতে হবে। মনোনয়নপত্রসহ অন্য ফরম ছাপানোর কাজে হাত দিতে পারবে। অথচ ক্রমেই প্রস্তুতির সময় ফুরিয়ে আসছে। যদিও বিধি সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচন দলীয়ভাবে হলেও এবারই প্রথম স্থানীয় সরকার পর্যায়ে দলীয় ব্যানারে ভোট হতে যাচ্ছে। ওই নির্বাচনে প্রার্থী ও তার সমর্থকদের আচরণ কি হতে পারে তা নিয়েও শংকায় কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা আরও জানান, অধ্যাদেশ জারিতে দেরি হওয়ায় শেষ মুহূর্তে আইন সংশোধনে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে কমিশন। নির্বাচনের প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় রাখার স্বার্থে প্রস্তাবনায় নির্ধারিত সময়ে ভোট করা না গেলে ?যুক্তিসঙ্গত স্বল্প সময়ে নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। পৌরসভার মতো ?স্থানীয় সরকারের সব আইনে সামঞ্জস্য আনতে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও সিটি কর্পোরেশনের কয়েকটি ধারায় সংশোধনের মতামত দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের তুলনামূলক চিত্রও পাঠানো হয়েছে। এতে ইউনিয়ন ও সিটি কর্পোরেশনেও ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ইসির নির্বাচন সমন্বয় শাখার সহকারী সচিব রওশন আরা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠি রোববার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সরকার সব স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয় সরকারের সব সংস্থার সাধারণ ও শূন্যপদে নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক সময় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হয় না। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আওতায় পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা পরিষদের আইনের সংশোধন প্রয়োজন। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন আইনের মধ্যে সামঞ্জস্যতা আনা প্রয়োজন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।