নির্বাচনে বিজয়ের পরিকল্পনা করে রেখেছে আ.লীগ: খালেদা

0
483
blank
blank

ঢাকা: বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিয়োগ দিয়ে সরকার আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রোববার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি নেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় বিজয়ী আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার হাতে পুষ্পস্তবক দিয়ে অভিনন্দন জানান।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘোষিত ফলাফলে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক নীল প্যানেল খোরশেদ আলম সভাপতি ও আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিজয়ী হয়েছে। মোট ২৭ পদের মধ্যে কোষাধ্যক্ষসহ ৬টি পদে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের সমর্থক আইনজীবীদের সাদা প্যানেল।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আগামী দিনের ইলেকশনের কী পরিকল্পনা, সেটা তারা (সরকার) করে রেখেছে। কীভাবে বিজয়ী হবে, সেটাও করে রেখেছে। যার জন্য বসিয়েছে তাদের আজ্ঞাবহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এই সিইসি কোনোভাবে একজন যোগ্য নিরপেক্ষ ব্যক্তি নন। তাহলে বুঝতে পারছেন, আওয়ামী লীগের মতলবটা মোটেও ভালো নয়। আমরা বিশ্বাস করি, যদি ফেয়ার নির্বাচন হয়, ভবিষ্যতে জনগণ আবারো আমাদের ক্ষমতায় বসাবে।
ঢাকা বারের মতো আসছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও দল সমর্থিত প্যানেলকে বিজয়ী করতে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির চেয়ারপারসন।
দেশের স্বার্থ বিকিয়ে বন্ধুত্ব নয় উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমি আমার বাংলাদেশের স্বার্থ আগে দেখব, তারপর অন্যের কথা হবে। অবশ্যই সকলের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক থাকবে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে, কিন্তু আমার দেশের স্বার্থের বাইরে গিয়ে আমি কাউকে অধিক কিছু দিয়ে দেব, আর বাংলাদেশ থাকবে না, সেটা হতে পারে না।
তিনি বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব হবে সমানে সমান, কেউ বলে দেবে, তার ইচ্ছেমতো তা করব, তাদের খুশি রাখার জন্য সেটা নয়। এখন তিস্তার পানি নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা চাই, তিস্তার পানির ন্যায্য হিৎসা আমাদের দিতে হবে, তা ছাড়া অন্য কোনো কিছু আমরা মানব না।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের অনেকে বেতন-টেতন পায়, টাকাপয়সা আয় করার অনেক সোর্স আছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, গ্যাসের দাম কম ছিল, সে জন্য বাড়ানো হয়েছে। দেখেন, এদের আমলেই বোধ হয় পাঁচ দফা গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।’

বিদ্যুতের মূলবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন বলছে, বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। তাহলে মানুষ তো গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল দিতে দিতে শেষ হয়ে যাবে। গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে, অথচ গ্যাসের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। গ্যাসের চাপ এত কম, কোনো কোনো দিন রান্না করাই মুশকিল হয়ে যায়।’ জনসম্পৃক্ত এসব বিষয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘মানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। আমাদের কর্মসূচি দিতে হবে। বিএনপির আমলে একচুলা ও দুই চুলার মূল্যের সাথে বর্তমান সময়ে বৃদ্ধির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
দেশকে ধ্বংস করার অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ দেশের পরিস্থিতি যা করছে, দেশকে আর দেশ রাখেনি। জনগণের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। এখন তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকবে- এই স্বপ্ন দেখছে। দেশের মানুষকে তারা মানুষই মনে করে না। তারা মনে করে তারা রাজা, আর সাধারণ মানুষজন সব প্রজা, এদের কোনো দাম নেই, মানসম্মান বলতে কিছু নাই। সরকার দেশকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে। দেশের অবস্থা খুব খারাপ, মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে।
উন্নয়নের নামে বৃহৎ বৃহৎ প্রকল্প করে উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি, দুর্নীতি-লুটপাট, জমিদখল, টেন্ডারবাজি প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা দেশকে অস্বস্তিকর পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
গাইবান্ধায় মনজুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রাক্তন সাংসদ কাদের খানের সম্পৃক্ততার প্রমাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের শরিকরাই এসব করছে। তাদের শরিকদের মধ্যে এমনো আছে, যাদের ইতিহাস আছে, অতীতে অনেক মানুষ খুন করার, হত্যা করার। জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না, তারা কখনো নিজের এলাকা থেকে নির্বাচিত হতে পারে নাই। এবার আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে জোর-জুলুম করে পুলিশের সাহায্য নিয়ে নির্বাচনে জিতেছে।
বিএনপি নেত্রী বলেন, আগামী দিনেও তারা (সরকার) এভাবে জিততে চায়। তারা মুখে বলছে, মানুষকে দেখানোর জন্য, আগামীতে বিএনপি আসলে নির্বাচন কঠিন হবে। এটা বলার জন্য বলছে। কিন্তু আগামী দিনের নির্বাচনে কী পরিকল্পনা, তা তারা করে রেখেছে। তিনি বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চাই। সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ চোরাপথে ক্ষমতায় যেতে চায়। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আইনের শাসনে বিশ্বাস করি, জনগণের কল্যাণে বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করি, আমরা চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন। দলের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনগুলো নতুনভাবে সংগঠিত করার কথাও বলেন বিএনপি নেত্রী।
অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।