নীল নদের উদ্দেশ্যে লেখা উমর (রা.) এর সেই চিঠি

0
1253
blank
blank

হযরত উমর (রা.) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং প্রধান সাহাবীদের অন্যতম। আবু বকরের মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব নেন। উমর ইসলামি আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ছিলেন। ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তাকে আল ফারুক (সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধি দেয়া হয়। আমিরুল মুমিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। ইতিহাসে তাকেই প্রথম উমর হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০ হিজরি সনে দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে বিখ্যাত সাহাবি আমর ইবনুল ‘আছ (রা.)-এর নেতৃত্বে সর্বপ্রথম মিসর বিজিত হয়। মিসরে তখন প্রবল খরা। নীলনদ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। সেনাপতি আমরের নিকট সেখানকার অধিবাসীরা অভিযোগ তুললেন,

হে আমীর! নীলনদ তো একটি নির্দিষ্ট নিয়ম পালন ছাড়া প্রবাহিত হয় না। তিনি বললেন, সেটা কি? তারা বলল, এ মাসের ১৮ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা কোনো এক সুন্দরী যুবতীকে নির্বাচন করব। অতঃপর তার পিতা-মাতাকে রাজি করিয়ে তাকে সুন্দরতম অলংকারাদি ও উত্তম পোষাক পরিধান করানোর পর নীলনদে নিক্ষেপ করব।

আমর ইবনুল আছ তাদেরকে বললেন, ইসলামে এ কাজের কোনো অনুমোদন নেই। কেননা ইসলাম প্রাচীন সব জাহেলী রীতি-নীতিকে ধ্বংস করে দেয়। অতঃপর তারা পর পর তিন মাস পানির অপেক্ষায় কাটিয়েদিল। কিন্তু নীলনদের পানিতে হ্রাস-বৃদ্ধি কিছুই পরিলক্ষিত হ’ল না। অতঃপর সেখানকার অধিবাসীরা দেশত্যাগের কথা চিন্তা করতে লাগল। এ দুর্যোগময় অবস্থা দৃষ্টে সেনাপতি আমর ইবনুল আছ খলীফা উমর (রা.)-এর নিকটে পত্র প্রেরণ করলেন।

উত্তরে ওমর (রা.) লিখলেন, হে আমর! তুমি যা করেছ ঠিকই করেছ। আমি এ পত্রের মাঝে একটি পৃষ্ঠা প্রেরণ করলাম, যা তুমি নীলনদে নিক্ষেপ করবে।’ ওমরের পত্র যখন আমরের নিকটে পৌঁছাল, তখন তিনি পত্রটি খুলে তাতে এ বাক্যগুলি লিখিত দেখলেন, ‘আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমর-এর পক্ষ থেকে মিসরের নীলনদের প্রতি। যদি তুমি নিজে নিজেই প্রবাহিত হয়ে থাক, তবে প্রবাহিত হয়ো না। আর যদি একক সত্তা, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তোমাকে প্রবাহিত করান, তবে আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি তোমাকে প্রবাহিত করেন।’

অতঃপর আমর (রা.) পত্রটি নীলনদে নিক্ষেপ করলেন। পর দিন শনিবার সকালে মিসরবাসী দেখল, আল্লাহ তা‘আলা এক রাত্রে নীলনদের পানিকে ১৬ গজ উচ্চতায় প্রবাহিত করে দিয়েছেন। তারপর থেকে আজও পর্যন্ত নীলনদ প্রবাহিতই রয়েছে। কখনো শুষ্ক হয়নি।

(সূত্র : আল-বিদায়াহ ৭/১০০; তারীখু দিমাশক ৪৪/৩৩৭; তাবাকাতুশ শাফিয়া আল-কুবরা ২/৩২৬)।