নেতাকর্মীদের সক্রিয় করাই বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ

0
492
blank

রেজাউল করিম লাবলু: ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর বিভক্তি দূর করে নেতাকর্মীদের এক প্লাটফর্মে আনার ব্যাপারে বিএনপির হাইকমান্ড আশাবাদ ব্যক্ত করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলও একাধিক দলীয় অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। হাইকমান্ডের এমন প্রত্যাশা ও মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এমন তাগাদার পরও ঐক্য নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি।
এক প্লাটফর্মে আনতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্কখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ জানান, তৃণমূলের পছন্দের ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন স্বচ্ছ ইমেজের নেতাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব না দেওয়ায় দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না বিএনপি। নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে সক্রিয় করতে না পারলে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যাবে না। আর জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে আন্দোলনে সফলতা আসবে না। দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন নেতাদের দলের নেতৃত্বে আনতে হবে। দলের নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটি গঠনের কাজ চলছে। বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি ঘোষণার পর যখন আন্দোলন-
সংগ্রাম শুরু হবে তখন বোঝা যাবে দলের মধ্যে ঐক্য আছে কি নেই এবং তারা কতটা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে কেউ নিরাপদ নয় তা নেতারা বুঝতে পেরেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান জানান, বিগত দুটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রমাণ হয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। আন্দোলন চলাকালে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে পারেননি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি আরও বেড়ে যায়। জনসম্পৃক্ত নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়নি। তিনি জানান, নেতাদের দ্বিচারিতা আরও একটি বড় কারণ। কেউ কেউ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করে এক কথা বলে আসেন। বাইরে এসে আবার চেয়ারপারসনের সমালোচনা করে কথা বলেন। কেউ কেউ কর্মসূচি দেওয়ার জন্য বলেন। পরে কর্মসূচি দিলে তারাই কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকেন। তিনি আরও জানান, কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন না করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। কাউন্সিলে ভোটাভুটির মাধ্যমে কমিটি হলে না মানার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু লবিংয়ে কমিটি হলে একপক্ষ খুশি হলেও অন্যপক্ষ সন্তুষ্ট হতে পারে না। যে পক্ষ কমিটিতে আসতে পারে না তারা কমিটির পক্ষে রাজপথে নামে না; বরং বাধার সৃষ্টি করে। বিগত দুটি আন্দোলনে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
ঐক্য প্রতিষ্ঠার অন্তরায় সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’-এমন কথা বলতেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। কিন্তু এখন আর সেটার চর্চা বিএনপিতে তেমন নেই। এখন বিএনপিতে ব্যক্তি বড় হয়ে উঠেছে। দল কীভাবে লাভবান হবে সেই চিন্তা বেশিরভাগ নেতার মধ্যে নেই। এখন নিজে কীভাবে লাভবান হবেন সেই চিন্তা কাজ করে। শুধু তাই নয়, নিজের পছন্দের পদ পাওয়া নেতারা আবার নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। তাছাড়া নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস বিরাজ করছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান জানান, শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে আমরা বিচ্যুত হয়ে পড়েছি। বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি। নিজ নিজ স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছেন দলের নেতারা। নেতারা নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন না। দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একই ইস্যুতে নেতাদের বিভিন্ন রকম বক্তব্যে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হন। এ অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠতে এবং দলের মধ্যে বিরাজমান সমন্বয়হীনতা দূর করতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে শক্ত-হাতে দল পরিচালনা করতে হবে।