স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকায় ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকীর পদত্যাগের দাবিতে আজ শুক্রবার বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগ। বিক্ষোভের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালযের ভিসির গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও জুতা নিক্ষেপ করেছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে বিকেলে স্মরণিকার প্রকাশক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমানকে অব্যাহতি দেয়া হলে প্রথমে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করলেও পরে আবার ভিসির পদত্যাগ দাবিতে বাসভবনের ফটকে তালা দিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করে। তবে ওই স্মরণিকা প্রকাশের সব দায় রেজিস্ট্রারের বলে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছরের মতো এবারো দিবসটি উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এই স্মরণিকার প্রকাশক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান একটি নিবন্ধ লেখেন। এতে তিনি বিভিন্ন হলের পরিচিতি তুলে ধরেন। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি লেখেন, ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।’ টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভা চলাকালে এ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও শিক্ষকেরা প্রতিবাদ জানান।
ভিসি তখন ওই স্মরণিকা বাজেয়াপ্ত করে স্মরণিকা কমিটি বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ভুল করে এটি হয়েছে। এ সময় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। অনুষ্ঠান চলাকালেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ শুরু করে। দুপুরেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে তার অফিস কক্ষে এক ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখে। সেখানে স্মরণিকার কপিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ গিয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। জুমার নামাজের পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। একপর্যায়ে তারা ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিসহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। বিক্ষোভ চলাকালে ভিসি অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের বহনকারী গাড়িটি তার বাসভবনের সামনে পৌঁছলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় ভিসির গাড়ি লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারে তারা। ভিসির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) তাদের থামানোর চেষ্টা করলে তিনিও মারধরের শিকার হন। তবে ভিসি গাড়ির মধ্যে বসে থাকায় আহত হননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাংবাদিক ও শিক্ষক তাকে বাসভবনের ভেতরে নিয়ে যান। পরে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমানকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই আদেশ ইতোমধ্যেই কার্যকর হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তাকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। তবে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমানকে এ বিষয়ে জানতে বারবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ সংবাদ শুনে প্রথম দফায় আন্দোলন স্থগিত করলেও পরে ফের বিক্ষোভ শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের পদত্যাগ দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় ভিসির বাসভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। রাত ৮টার মধ্যে ভিসি পদত্যাগ না করলে আজ বেলা ১১টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করবেন তারা।
ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলন মুলতবি করে চলে গিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি ভিসি নিজেই ইতিহাস বিকৃতির সাথে জড়িত। তাই আবার আন্দোলন শুরু করেছি আমরা। তিনি বলেন, আমাদের এখন এক দাবি। ভিসি আরেফিন সিদ্দিকীর পদত্যাগ করতে হবে। ছাত্রলীগ সম্পাদক আরো বলেন, শরীরের এক বিন্দু রক্ত থাকতেও এই ভিসিকে আমরা মেনে নেবো না। ইতিহাস বিকৃতির দায় তাকে নিতেই হবে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে বাসভবনের সামনের চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচিতে নানা ধরনের ভুলত্রুটি হয়। তবে স্মরণিকার ভুলটি মারাত্মক ভুল হয়েছে। এ জন্য ওই প্রবন্ধের লেখক দায়ী। যার কারণে আমরা প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ রেজাউর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এ ছাড়া ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হবে। তারা জড়িতদের খুঁজে বের করবে। তিনি বলেন, এ ঘটনা যখন ঘটেছে তখন আমি ছিলাম না। এরপর গাড়ি নিয়ে আমার বাসায় আসার সময় কারা হামলা করেছে, কেন করেছে এ বিষয়েও তদন্ত করা হবে।