প্রতিবেশী দুই দেশ পাক-ভারত যুদ্ধ লাগছেই!

0
766
blank

প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কটা বরাবরই তিক্ত। সরাসরি যুদ্ধেও লিপ্ত হয় দেশ দুটি। উত্তেজনার পারদ কখনো কখনো অনেক উপরে ওঠে যায়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে আধাসামরিক বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলায় বাহিনীর ৪০ সদস্য নিহত হয়। এর দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই মুহম্মদ। এর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ভারত। নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের বালাকোটে মঙ্গলবার ভোররাতে বোমা হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। এতে ৩০০ জঙ্গি এবং বহু স্থাপনা ধ্বংস হওয়ার দাবি করে নয়াদিল্লি। এ ঘটনার পর দেশ দুটির সেনাবাহিনী গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। ছোড়া হয় মর্টার শেল। এ ঘটনায় উভয় দেশে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়।

পাক-বাহিনীর গুলিতে ভারতীয় দুটি বিমান ধ্বংস হয় বলে দাবি করে ইসলামাবাদ। আটক করা হয় ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট অভিনন্দন ভার্থামানকে। সীমান্তে ১৪ হাজার বাঙ্কার নির্মাণ করছে ভারত। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সীমান্ত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চুপচাপ বসে নেই পাক বাহিনীও। তারাও প্রস্তুত। এ প্রেক্ষাপটে দেশ দুটি যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে বলে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একটি ঘোষণা সবকিছুর মোড় পাল্টে দেয়। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। বলে আলোচনায় সব সমস্যা সমাধান হতে পারে। তাই বলে তার দেশ দুর্বল নয়। তাদেরও পরমাণু অস্ত্র আছে। আলাদা এক বিবৃতিতে তিনি আটক ভারতীয় পাইলটকে ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। সেই অনুসারে শুক্রবার তাকে ভারতের হাতে তুলে দেয় পাকিস্তান। খুলে দেয় বিমানবন্দর। এ ঘটনার পর মনে করা হচ্ছিল আরেকটি যুদ্ধ থেকে রক্ষা পেল বিশ্ব। উত্তেজনা করে শান্তিতে সহাবস্থান করবে পাকিস্তান ও ভারত। কিন্তু গতকাল শনিবারের ঘটনা আবারো শান্তিপ্রিয় মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলল। অনেকের মনেই এখন আবার শঙ্কা- তাহলে কি পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছেই। কেননা, কাশ্মীর সীমান্তে দেশ দুটির সেনাবাহিনীর মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে। এতে জম্মু ও কাশ্মীরের এক মা ও তার দুই শিশু নিহত হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানি দুই সেনা ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে মারা গেছে।

গোলাগুলি চলছে: শান্তির বার্তা দিতে পাকিস্তান আটক ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দন ভার্থামানকে ছেড়ে দিয়েছে; কিন্তু কাশ্মীর সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি চলছেই। জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার নিয়ন্ত্রণ রেখায় শুক্রবার রাতভর গোলাগুলিতে রুবানা কসার (২৪) নামে এক মা এবং তার দুই শিশু সন্তান নিহত হয়েছে বলে জানায় ভারত।

নিহত দুই শিশুর বয়স পাঁচ বছর ও নয় মাস। পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গোলার আঘাতে ওই মা ও তার শিশুরা নিহত হয়েছে বলে ভারত দাবি করেছে। গত আট দিন ধরে কাশ্মীরের পুঞ্চ এবং রাজৌরি জেলার নিয়ন্ত্রণ রেখায় প্রতিবেশী দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি চলছে। নিয়ন্ত্রণ রেখার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত সব স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল ডন অনলাইনের খবরে বলা হয়, ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে পাকিস্তানের দুই সেনা শহীদ হয়েছেন। শহীদ হয়েছেন দুই বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন কয়েকজন। সেদেশের সেনারা নাকিয়াল সেক্টরে পাকিস্তানি সেনা চৌকি এবং বেসামরিক নাগরিকদের স্থাপনা লক্ষ্য করে গুলি চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে পাক-সেনারাও ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলির জবাব দিয়েছে। শহীদ সেনা সদস্যরা হলেন- হাবিলদার আবদুর রব ও নায়েক খুররম। ডন সংবাদদাতা জানান, নিহত বেসামরিক যুবকের নাম আদুল গফুর। বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি রজীনী বৈদ্যনাথ মনে করছেন, পাইলট অভিনন্দন ভার্থামানকে ছেড়ে দেয়ায় দুই দেশ যুদ্ধের দুয়ার থেকে ফিরছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের মাটিতে ‘জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা’ বন্ধের বিষয়ে দেশটির কাছে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি চায় ভারত। শুক্রবারই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে বলেছেন, এ বিষয়ে কাজ করবেন তিনি।

মানবকণ্ঠ