পিতাকে বাঁচাতে হাসপাতালে এসে ধর্ষনের শিকার তরুনী: মামলা গ্রহণে পুলিশের অনীহা, আদালতে মামলা দায়ের, ধর্ষকরা বহাল তবিয়তে

0
1832
blank
blank

মোহাম্মদ সোহেল রানা, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ সড়ক দূর্ঘটনায় আহত মূমূর্ষ পিতাকে বাঁচাতে হাসপাতালে নিয়ে এসে ধর্ষনের শিকার হতে হলো সুন্দরী যুবতী কনকলতাকে। পিতাকে ও বাচাতে পারলো না উপরন্তুু গন ধর্ষনের বেদনা দায়ক অভিজ্ঞতা নিয়ে পিতাকে সমাহিত করতে হলে তাকে। এমনি এক হৃদয় বিদাকর লোম হর্ষক ঘটনা ঘটেছে মুন্সিগঞ্জে।
ঘটনার বিবরনে প্রকাশ মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার শ্রীনগর গ্রামের অধিবাসী অনীল দাশ গত ১৮ই অক্টোবর ২০১৮ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিক এর রোগী ছিলেন। তার কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তার একমাত্র কন্যা সন্তান কনকলতা দাশ তাকে নিয়ে শ্রীনগর থানা স্বাস্থ্যে কমপ্লেক্স এর ডাক্তার অরুন কুমার শর্মার নিকট যান। সেখানে পরীক্ষার পর ডাঃ শর্মা জানান তার রক্তচাপ অত্যাধিক, যেকোন সময় ব্রেইন ষ্টোক হতে পারে। তাকে ঔষধ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে বিশ্রামের পরামর্শ দেন। অনীল দাশের কন্য কনকলতা একটি সি, এন, জি চালিত অটোরিক্সা যোগে অন্যান্য যাত্রীসহ বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। দূর্ভাগ্যেজনক ভাবে বিপরিত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে দূর্ঘটনার শিকার হন সকল যাত্রী। কনকলতার পিতা মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। দ্রুত এ্যাম্বুলেন্স যোগে তার মেয়ে তাকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আসেন। ডাক্তারগন জানান যতশ্রীঘ্র সম্ভব তাকে অপারেশন করতে হবে। তার মস্তিস্কে রক্তক্ষরন হচ্ছে। অনীল দাশকে বাঁচাতে তার মেয়ে অস্ত্রোপচারের অনুমিত দেন। তার সাথে যা টাকা ছিল সব টাকা দিয়ে এবং তার পরনে থাকা স্বর্ণলংকার বিক্রি করে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও অপারেশন সামগ্রী ডাক্তারদের কিনে দেন কনকলতা দাশ।

সন্ধ্যার দিকে ডাক্তারগন জানান, অনীল দাশকে বাঁচাতে হলে এখনই তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। নিঃস্ব কনকলতা তখন পিতাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেন। বিভিন্ন ব্যক্তি ও আশ-পাশের ব্যবসায়ীর নিকট সাহায্য চান। তার এই দূর্বলতার সুযোগে অনীক হাসান নামের একজন যুবক তার পিতার জন্য রক্ত সংগ্রহ করে দেবার আশ্বাস দেন। অত্যন্ত সুন্দরী যুবতী কনকলতা অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে তার সাথে যেতে রাজী হয় পিতাকে বাচানোর এক বুক আশা নিয়ে। মেয়ে হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী পিতাকে বাঁচানোর জন্য কনকলতার আকুতি হৃদয়ে আঘাত করেনা অনীক হাসানের। সে বলে একটি ব্লাড ব্যাংকে তার পরিচয় আছে, সেখানে যেতে হবে। কনকলতা তার সাথে রওয়ানা হয়, কিন্তুু মানুষরুপী অমানুষ কনকলতাকে নিয়ে যায় মুন্সিগঞ্জ জেলা সদর এলাকার একটি নির্জন বাসায়। তার সহযোগীদের ফোন করে জড়ো করে। তাকে বলে তাদের স্বাথে স্বেচ্ছায় দেহ মিলন করলে তারা রক্তের ব্যবস্থা করে দেবে। কনকলতা রাজী না হওয়ায় তারা তাকে শারীরিক নির্যাতন করে। এক পর্য্যায়ে কনকলতাকে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষন করে অনীক হাসান ও তার সহযোগীরা। রাতভর ধর্ষনের পর গাড়ী যোগে একটি রাস্তায় ফেলে দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। সন্ধিৎ ফিরে পেয়ে কনকলতা দ্রুত চলে আসে হাসপাতালে। খোজ নিয়ে জানতে পারে তার পিতা রাতেই পাড়ি জমিয়েছে পরপারে। পিতার মৃত্যু সংবাদে কান্নায় ভেঁঙ্গে পড়ে কনকলতা। তার পিতার মৃত্যু, ধর্ষনের পর সর্বস্ব হারিয়ে তার আহাজারিতে ভারী হয়ে উটে হাসপাতালের চত্ত্বর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অনীক হাসান একজন ছাত্রনেতা। তারা চাঁদাবজীসহ অনেক অপকর্মের সাথে জড়িত। তার সহযোগীদেরও নাম প্রকাশ করেন তারা। কনকলতাও জানতে পারে অনীক হাসানের সাথে মাহমুদ রুবেল, ওমর আশরাফ, শাকিল আহমেদ ও অজিত কুমার ঘনিষ্টভাবে চলাফেরা করে। কনকলতা থানায় এজাহার নিয়ে গেলে ও, সি জি, ডি করে ডাক্তারী পরীক্ষার ভিকটিম সার্টিফিকেট আনতে বলেন। মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পরীক্ষা সম্পূর্ন করে তার পিতার লাশ বাড়ীতে পাঠানো হয়। ভিকটিম সার্টিফিকেট নিয়ে পরদিন থানায় গেলে আসামীদের নাম ঠিকানা দেখে ও, সি মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। রহস্য জনক কারনে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ বদরুজ্জামান মামলা না নেয়ায় কনকলতা মুন্সিগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের লিগেল এইডের আইনজীবি সুলতানা মেহজাবিনের স্মরনাপন্ন হন। অদ্য ২১/১০/২০১৮ইং তারিখ মুন্সিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা রুজু করেন অভিযুক্তদের আসামী করে। আসামীরা হল মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের সিরাজ হাসানের ছেলে অনীক হাসান, শ্রীনগর থানার বালাসুর গ্রামের তৈয়বুর রহমানের ছেলে মাহমুদ রুবেল, মুন্সিগঞ্জ সদর থানার কোর্ট গাও গ্রামের সৈয়দ মঞ্জুর আশরাফের ছেলে শাকিল আহমেদ, একই গ্রামের প্রনব কুমারের ছেলে অজিত কুমার। মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ইসলামপুর গ্রামের আশরাফ সিদ্দিকীর ছেলে ওমর আশরাফ।

সরেজমিনে তদন্তে জানা যায়, আসামীরা সবাই বিভিন্ন কলেজের ছাত্র ও বর্তমান ক্ষমতাসীর দলের নেতাকর্মী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে থানায় মামলা রুজু হলেও আসামীদের কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।