পিরিয়ড: সত্যতে কেন অস্বস্তি?

0
826
blank
blank

নাজিয়া সুলতানা: যে বিষয় নিয়ে কথা বলব তা অত্যন্ত গোপনীয় বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়। বিষয়টা হচ্ছে নারীদের পিরিয়ড। খুব কাছের একজনের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করি।

রোজার মাস। পিরিয়ড হওয়ার কারণে সে রোজা রাখতে পারেনি। যেহেতু সে নিয়মিত রোজা রাখে তাই তার সহকর্মীরা মজা নিতে শুরু করল। আচ্ছা, আজকে তাহলে ফাঁকি মারলেন! এই ধরণের টিপ্পনী আর কি। তার বস ছিলেন একজন মহিলা। সে ছাড়া তাদের টিমে আর কোন মহিলা নেই। তিনি তাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন যে তার পিরিয়ড চলে কি না। সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তে তিনি জোরে জোরে বললেন, ’আচ্ছা…শরীর দুর্বল লাগছে তাই রোজা রাখনি? ব্যাপার না। সুস্থ হও, তারপর আবার রোজা রেখ।’

আমার বান্ধবীর ভাষ্যমতে, সে খুব অবাক হয়েছিল সেদিন। কারণ, সে বিষয়টা লুকাতে চায়নি। কোন মিথ্যা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চায়নি। সে কেন চায়নি এবং আমরা অনেকেই কেন চাইনা এই নিয়েই কিছু কথা বলব।

আমরা যারা চাকরি কিংবা ফরমাল পরিবেশে কাজ করি তাদের প্রায়ই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। অস্বস্তি এবং অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করতে হয়। কিন্তু আমরা এটা কেন করি? একবার ভেবে দেখেছি এটা কতটা যৌক্তিক?

আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি মা, খালা কিংবা আপুরা পিরিয়ড হলে তা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গোপন করে। যেনো ভুলেও বাসার কোন পুরুষ সদস্য তা টের না পায়। টের পেয়ে গেলে যেনো লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাকেও ছোট থেকে তাই শেখানো হয়েছে। কিন্তু যত বড় হয়েছি, এর যৌক্তিকতা নিয়ে আমার প্রশ্ন ততই বেড়েছে।

এই পুরো ব্যাপারটা মেনে নেওয়া বেশ কঠিন। একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার লুকানোর কি আছে? লুকানো বা শাক দিয়ে মাছ ঢাকাটাই বলতে গেলে অযৌক্তিক। পিরিয়ড হওয়া মা হওয়ার মতই প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার। আপনার পিরিয়ড হয়, এজন্য কি আপনি লজ্জিত? কিংবা আপনি একজন নারী এই জন্য? যদি মা হওয়া লজ্জার বিষয় না হয় তবে পিরিয়ড হওয়া কেন? এত লুকোচুরির কী আছে এখানে? একজন পুরুষকে কেন বলা যাবে না যে আমার পিরিয়ড হয়েছে? চলুন, ট্যাবুটা এবার ভাঙি। এটা আমাদের অর্থাৎ নারীদেরকেই শুরু করতে হবে।

দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গেলে এক কোনায় দাঁড়িয়ে কাঁচুমাচু হয়ে না বলি যে, আমার স্যানিটারি ন্যাপকিন দরকার। আপনি কোনো জীবননাশকারী বিষ কিনতে যাননি, তাই অপরাধীর মত করে বলার কিছু নাই। এটা মানুষ হিসেবে আপনার অধিকার।

তাই নারী-পুরুষ উভয়কেই বলব চলুন বদলাই। আর কত সেকেলে হয়ে থাকব আমরা? এটা শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। যেটা চাইলেই আমরা পরিবর্তন করতে পারি। আপনার এই সামান্য পরিবর্তন আরেকটি মানুষের জীবন সহজ করে তুলতে পারে।

তাই নারীদের অনুরোধ করব, লুকানো বন্ধ করুন। নিজের নারীত্ব নিয়ে হীনমন্যতায় না ভুগে গর্ববোধ করুন। পিরিয়ডকে একটা সহজ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ব্যাপার হিসেবে দেখতে শেখেন এবং অন্যকে শেখান।

আর পুরুষদের অনুরোধ করব আপনার মা, বোন‌, বন্ধু কিংবা সহকর্মীকে টিপ্পনী না কেটে তাকে সহজ হতে সাহায্য করুন। শুরুটা হোক আমাদের কাছ থেকেই।

লেখক: এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, কমিউনিকেশনস, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি