পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে টিআইবির উদ্বেগ

0
696
blank
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের বিরুদ্ধে তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ও হেফাজতে নিয়ে বিভিন্ন প্রকার নির্যাতনের অভিযোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রভাবশালী মহলের সাথে যোগসাজশে জোর করে বরগুনায় নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে আসামি বানিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে মিন্নির বাবা ও তার আইনজীবীর অভিযোগে স্থানীয় পুলিশের বিশ^াসযোগ্যতা গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করে টিআইবি।
ইতঃপূর্বে ফেনীর নুসরাত হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রভাবশালীদের সাথে জেলা পুলিশের একাংশের সম্পৃক্ততা ও নুসরাতকে অযাচিত হয়রানি এবং সম্প্রতি কক্সবাজার ‘মডেল পুলিশ স্টেশন’ এ ধর্ষণের শিকার পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর তিন দিনব্যাপী হেফাজতে নির্যাতনের মাধ্যমে বানোয়াট জবানবন্দী সংগ্রহের মতো অভিযোগ দেশে আইনের শাসনের জন্য অশনিসঙ্কেত বলে মনে করছে টিআইবি।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ন্যায়বিচার তথা সার্বিকভাবে গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হিসেবে আইনের শাসনের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর জবাবদিহি ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ ধরনের ঘটনাগুলোর বিশেষ করে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যম সূত্রেপ্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী, আলোচিত এ অপরাধের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের আইনের লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অনৈতিক ও শুদ্ধাচার পরিপন্থী আচরণের মাধ্যমে এক দিকে অপরাধী বা তাদের দোসরদের সাথে যোগসাজশমূলক সুরক্ষা ও অন্য দিকে যারা অপরাধের শিকার তাদের নিরাপত্তা বিধানের পরিবর্তে হেফাজতে বিভিন্ন প্রকার হয়রানি ও নির্যাতনের মাধ্যমে সাক্ষী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যে নিরাপত্তাহীনতার চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে তাকে বিচ্ছন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, এসব অভিযোগ ঢালাওভাবে অস্বীকার করার যেমন অবকাশ নেই, তেমনি ‘বিভাগীয় পদক্ষেপের’ মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সময়ও ফুরিয়ে গেছে। সংবিধান স্বীকৃত ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন, যা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত, যার অবস্থান আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে, তা ধূলিস্যাৎ হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে যদি এ ধরনের অভিযোগ উপেক্ষা করা হয় এবং এ ধরনের অপরাধের প্রতিকার না হয়।
প্রতিটি ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্তের ওপর অপরাধের শিকার ব্যক্তি বা পরিবার ও আইনজীবী তথা সাধারণ মানুষের যে আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত এবং সর্বজনবিদিত উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। কিন্তু পুলিশের পেশাগত উৎকর্ষের সুনাম ও মর্যাদা অক্ষুণœ রাখতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য অনুসন্ধানের মাধ্যমেই তা নিশ্চিত করা সম্ভব। আর এ জন্যই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার গুরুদায়িত্ব পালনকারী এ সংস্থাকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচারের আলোকে ঢেলে সাজাবার লক্ষ্যে উত্থাপিত অভিযোগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত অপরিহার্য।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত ও আলোচিত শিশু ও বিভিন্ন বয়সের নারীদের ওপর সহিংসতার সাম্প্রতিক উদ্বেগজনক পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত অপরাধের ঘটনায় সমাজের সর্বস্তরের আতঙ্কিত মানুষ ন্যায়বিচারের জন্য ব্যাকুল। তেমনি এ ধরনের অপরাধের সাথে পুলিশের একাংশের কথিত যোগসাজশ বা হেফাজতে নির্যাতনের মতো আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযোগ্য আইনিপ্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী এ সংস্থার প্রতি জনগণের আস্থা অর্জনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন এখন রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত।