প্রতিরক্ষা নয়, তিস্তা চুক্তি চায় সিপিবি

0
1238
blank
blank

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে প্রতিরক্ষা নয়, তিস্তা চুক্তির আশা করছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, পারস্পরিক স্বার্থে সহযোগিতা ও জনগণের মধ্যে আন্তরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করবে, এটিই কাম্য। এ জন্য জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রেখে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনসহ দুই দেশের মধ্যে জিইয়ে থাকা বিরোধগুলো সমাধান করা অগ্রাধিকারমূলক কর্তব্য।

কিন্তু সে ক্ষেত্রে তেমন আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। কারণ, তিস্তা চুক্তিসহ দেশের স্বার্থের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে বাদ দিয়ে ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ স্বাক্ষরের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সামনে আনা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তিস্তা নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করে, সমতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে অবশিষ্ট পানি বণ্টন করতে হবে। ভাটির দেশের সঙ্গে আলোচনা ও সম্মতি ছাড়া উজানে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা নিষিদ্ধ করতে হবে। এই নীতির ভিত্তিতেই তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বছরের পর বছর বঞ্চিত করে রাখলে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধিতা কেবল বাড়তেই থাকবে। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি করা, অভিন্ন নদী সমস্যার সমাধান, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা, বাণিজ্য ঘাটতি দূর করা, টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করা, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদ দূরীকরণ এবং মাদক বাণিজ্য বন্ধ করা, সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল করা ইত্যাদি বিষয়ে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে ভারতের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন জরুরি বলে সিপিবির নেতারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।

এসব বিষয়ে আলোচনাকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়টি অপ্রয়োজনীয় এবং দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণকারী হবে বলে বিবৃতিতে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।

সিপিবি নেতারা আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের জনগণ যে ‘জোট নিরপেক্ষতা’ ও শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের নীতির জন্য সংগ্রাম করেছে, সেই নীতি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। এই নীতিকে ভিত্তি করে ভারতসহ সকল দেশের সঙ্গে সহযোগিতার সহযোগিতার পদক্ষেপ নিতে হবে। এই পরীক্ষিত নীতিকে লঙ্ঘন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অশুভ সামরিক চুক্তি, সৌদি আরবের নেতৃত্বে গঠিত সামরিক জোটে অংশগ্রহণ ইত্যাদি করা হয়েছে। একইভাবে ভারতের সঙ্গে যে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের কথা বলা হচ্ছে, তা জোটনিরপেক্ষতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি থেকে দেশকে আরো দূরে সরিয়ে দেবে। তাই, এ ধরনের সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে ভারতের সাম্প্রদায়িক-প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী যেন তাদের অশুভ উদ্দেশ্য সাধনে কোনো অন্যায্য সুবিধা আদায় করে নিতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক ও সোচ্চার থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি সিপিবি আহ্বান জানিয়েছে।