প্রবাসী কর্মীদের সেবায় আরো সক্রিয় হতে হবে: খন্দকার মোশাররফ হোসেন

0
467
blank
blank

ঢাকা: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে বিদেশে যাওয়ার সব ধরনের প্রক্রিয়ায় কর্মীদের সহায়তা ও সেবা  প্রদান করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই প্রবাসে বসবাসরত কর্মীদের কল্যাণে ও সেবা প্রদানে বাংলাদেশি মিশনের উইংগুলোকে আরো সক্রিয় ও কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে হবে।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস ২০১৫-এর উদ্বোধনী অনুসষ্ঠানে প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক কর্মস্থানের জন্য প্রতিবছর ৪ থেকে পাঁচ লাখ কর্মী যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। এভাবে এ পর্যন্ত ১৬০ টি দেশে ৯৬ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছে। এই অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব হ্রাস পাচ্ছে এবং তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলছে।’

প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অধিনে একটি বিশেষ ইউনিট বা টিম গঠনের আহ্বান জানিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, ‘অভিবাসী কর্মীদের কর্মস্থান অনেকাংশে নির্ভর করে নিয়োগকারী দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম ও সামাজিক চাহিদার ওপর। এ কারণে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা বিশ্লেষণের জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিশেষ ইউনিট বা টিম কাজ করতে পারে।’

তিনি ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের সম্পর্কে বলেন, ‘বিদেশে দীর্ঘ সময় বসবাস করে আসার পর অনেক প্রবাসী কর্মীরা নিজেদের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অসুবিধায় পড়েন। অনেক প্রবাসী তাদের কষ্টার্জিত অর্থ সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে ব্যার্থ হওয়ায় অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়েন। এজন্য তাদের বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। তাদেরকে সামাজিক ও আর্থিকভাবে সংশ্লিষ্ট বা পুনঃএকত্রিকরণের বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি।’

মন্ত্রী এসব কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আরো বলিষ্ট ভুমিকা পালনের আহ্বান জানান।

এসময় তিনি ওমানে অবস্থানরত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত ও প্রবাসীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন। তাদের কিছু প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসে কর্মী পাঠানোর আগে জেলা ভিত্তিক ট্রেনিং সেন্টারের পাশাপাশি ৪০টি উপজেলায় ট্রেনিং সেন্টার করা হবে। আর প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো ট্রান্সফার ফি যাতে কমানো হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব ব্যাংকে এই ফিকে কন্ট্রিবিউশন ফি হিসেবে কাটানোর ব্যাপারে আলোচনা করছি।’

সভাপতির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ‘অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বীকৃতি ও সম্মান জানানোর জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস ২০১৫ পালন করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিবেচনায় বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের এ সাফল্যে প্রবাসী কর্মীদের প্রেরিত রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন এ বছর আমাদের প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের অংক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিদেশে কর্মসংস্থানের বর্তমান ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখাসহ আমরা নতুন নতুন সম্ভাবনাময় শ্রম বাজার অনুসন্ধান করছি। এদিকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি উপজেলাগুলোতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৫টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি মাধ্যমে আমরা প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার জন দক্ষ জনশক্তি প্রতিবছর তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছি যাদের একটি অংশ বিদেশে চাকুরী নিয়ে যাচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-এর মিশন প্রধান শরৎ চন্দ্র দাস। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়টির সচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার এবং সব শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামছুন নাহার।

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে ‘বিশ্বময় অভিবাসন, সমৃদ্ধ দেশ, উৎসবের জীবন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিতে মন্ত্রণালয়টির কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ প্রবাসী কর্মীরা অংশ নেন।

দিবসটি উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অভিবাসী মেলার আয়োজন করা হয়েছে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ মেলা চলবে। একইসঙ্গে বিকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং বিদেশগামী ও বিদেশ প্রত্যাগত বাংলাদেশি কর্মীদের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।