ফেসবুক আইডি খুলতে পরিচয়পত্র লাগবে

0
467
blank
blank

প্রযুক্তি ডেস্ক: সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা অন্য কোনো পরিচয়পত্রের তথ্য সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ফেসবুক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এ ছাড়া পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সঙ্গেও পুলিশ কর্মকর্তাদের পৃথক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হয়। আর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর জন্য রেড নোটিশ জারি না করা নিয়ে অসন্তোষের কথাও ইন্টারপোলকে জানায় পুলিশ।
গত রোববার থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে ১৪ দেশের পুলিশপ্রধানদের তিন দিনের সম্মেলন। বাংলাদেশ পুলিশ ও ইন্টারপোল যৌথভাবে সম্মেলনটি আয়োজন করেছে। ফেসবুকের পক্ষ থেকে আছেন সংস্থাটির ট্রাস্ট ও সেফটি ব্যবস্থাপক বিক্রম লেংগেহ।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সাইবার অপরাধের তদন্তে ফেসবুকের সহায়তা চাওয়া হয়। নারী নির্যাতন এবং ধর্মীয় বিষয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে ফেসবুককে বিষয়টি পুলিশের নজরে দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, জবাবে ফেসবুক বলেছে, তাদের নিজস্ব নীতিমালায় সাংঘর্ষিক না হলে সব রকম সহযোগিতা করবে।
বৈঠকের ব্যাপারে জানতে বিক্রম লেংগেহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি কোনো কথা বলতে চান না।
এর আগে পুলিশপ্রধানদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের তথ্য বিভিন্ন সময় ইন্টারপোলকে দিয়েছি। কিছুদিন আগে জেনেছিলাম, খুনি ডালিম চৌধুরী স্পেনে আছেন। কিন্তু তাঁদের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করতে পারিনি। ইন্টারপোলকে অনুরোধ করেছি, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তথ্য দিলে তারা যেন সেটা ভালোভাবে দেখে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করে। ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন।’
ইন্টারপোলের রেড নোটিশ নিয়ে বাংলাদেশের অসন্তোষের কথা উল্লেখ করে আইজি বলেন, ‘আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালত যাদের দণ্ডিত করে, তাদের বিষয়ে রেড নোটিশ দেওয়ার পরে সেটা যদি ইন্টারপোল উঠিয়ে নেয়, সেটা আমরা ভালোভাবে দেখছি না। আমাদের সরকার ভালোভাবে দেখছে না। আমরা আমাদের উদ্বেগ ইন্টারপোলের মহাসচিবকে জানিয়েছি। তিনি (মহাসচিব) বলেছেন, বিষয়টি তিনি তুলে ধরবেন—কোনো দণ্ডিত আসামি যেন ইন্টারপোলের কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না পায়।’
পুলিশের সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের নামে রেড নোটিশ জারির বিষয়েই এত সব কথা হয়েছে ইন্টারপোলের সঙ্গে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ২০১৫ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি ইন্টারপোলে বার্তা পাঠায় বাংলাদেশ পুলিশ। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল নোটিশটি প্রকাশ করে ইন্টারপোল। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি তারা নোটিশটি মুছে ফেলে। এর মধ্যে আরেকটি আদালত তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু তারা এখনো রেড নোটিশটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি।
এ ছাড়া বাংলাদেশে ইন্টারপোলের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের একটা কার্যালয় করার বিষয়ে ইন্টারপোলের মহাসচিব অনেক ইতিবাচক বলে জানিয়ে আইজি বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি সাপোর্ট দেয়, তাহলে তারা (ইন্টারপোল) এখানে একটা কার্যালয় করার কথা ভাববে বলে জানিয়েছে।’
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, জঙ্গিবাদ নিরসনে এই অঞ্চলে ইন্টারপোলের সঙ্গে মিলে পৃথক প্ল্যাটফর্ম করা যায় কি না, তার জন্য ইন্টারপোলের মহাসচিবকে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া আইজি বলেন, মিয়ানমার, ব্রুনাই, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। এসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য পুলিশ একজন করে মুখপাত্র নির্ধারণ করে দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় শ্রমিকদের সমস্যার বিষয়টি উঠে এসেছে, যাতে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা সমস্যায় পড়লে সেখানকার পুলিশের সাহায্য পান। তা ছাড়া বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক ভিসা থাকার পরও নানা সময় মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন তাঁদের ঢুকতে দেয় না। মালয়েশিয়ার পুলিশের উপমহাপরিদর্শক এসেছিলেন, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার নিয়ে কথা হয়েছে। চুরি যাওয়া অর্থের কিছু অংশ (২০ মিলিয়ন ডলার) শ্রীলঙ্কায় রয়েছে।