বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল পৃথিবীর সেরা ভাষণ: তোফায়েল আহমেদ

0
452
blank
blank

ঢাকা: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ছিল পৃথিবীর সেরা ভাষণ। এ ভাষণের মধ্যদিয়ে তিনি বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি আজ সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।  তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই আমি উপলব্ধি করেছিলাম, পাকিস্তানের সৃষ্টি বাঙালিদের জন্য হয়নি একদিন বাংলার ভাগ্য নিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে। সে লক্ষ্য সামনে নিয়ে তিনি প্রথমে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার বীজ এবং আমাদের স্বাধীকার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। তিনি প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন ১৯৩৮ সালে ১১ মার্চ। তিনি তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। পৃথিবীতে অনেক নেতা এসেছেন, অনেক নেতা হয়তো আসবেন। কিন্তু এ মহান নেতার সাথে কারো তুলনা হবে না। পৃথিবীর যেখানেই গেছেন তিনি ছিলেন বরেণ্য ও সবার প্রিয় নেতা।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা ঘৃণ্য ভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তিনি ৩ বছর ৭ মাসে একটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। পাকিস্তানের কারাগারে যখন তিনি বন্দি তখন জেলের সেলের সামনে কবর খুঁড়ে বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি কবরে যেতে চান, না প্রধানমন্ত্রীত্ব চান। তখন বঙ্গবন্ধু জবাব দিয়েছিলেন- ‘কবরের ভয় আমাকে দেখিও না, আমিতো জানি তোমরা আমাকে ফাঁসি দেবে। কিন্তু এও জানি যে বাংলার দামাল ছেলেরা হাসি মুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে। পৃথিবীর কোন শক্তি নেই, বাংলার সেই দামাল ছেলেদের দাবিয়ে রাখতে পারে। ’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ নেই, কিন্তু তিনি ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছিলেন। ৭২-এ অনেকে বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে একটি তলাবিহীন ঝুঁড়ি, অনেকে বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে একটি দারিদ্র দেশের মডেল। অথচ আজ যখন আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যাই তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ আমাদের বলেন, তোমাদের দেশের উত্থান বিষ্ময়কর। যারা বলেছিলেন তলাবিহীন ঝুড়ি হবে তারাই বলছেন, বাংলাদেশ হয়েছে একটি বিষ্ময়কর দেশ এবং বাংলাদেশ হয়েছে একটি উন্নয়নের রোল মডেল।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুইটি স্বপ্ন ছিল। একটি বাংলার স্বাধীনতা। আরেকটি এদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। ওই সময় তাঁর দুই কন্যা দেশে ছিলেন না। জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে আমরা আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিয়েছিলাম। তিনি আজ দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখন শুধু বাংলাদেশের নেত্রী নয়। তিনি এখন সারাবিশ্বে একজন মর্যাদাবান নেতা। বঙ্গবন্ধু দুটি স্বপ্নের একটি পূরণ করেছেন। আমাদের দেশ, স্বাধীনতা, ও পতাকা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তাঁর ভাষণে যে মুক্তির কথা বলেছিলেন, সেই মুক্তির পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছি।
তিনি বলেন, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেট ছিল ৭৮৭ কোটি টাকা। সেই বাজেট হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। ৭২ সালে রপ্তানী ছিল ২৫টি পণ্য ৬৮টি দেশ ৩৪৮ মিলিয়ন ডলার। তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। আমাদের রিজার্ভ ছিলনা বললেই চলে, আজ সেই রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। রেমিটেন্স ১৫ বিলিয়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রপ্তানী, রিজার্ভ, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ সামাজিক অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে এগিয়ে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ভারত থেকেও এগিয়ে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা এখন বাংলাদেশের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকালে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল মধ্যম আয়ের দেশ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এখন আর স্বপ্ন নয়, এখন তা বাস্তব। সারাদেশে ৫ হাজার ২শ’টি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এর সবকটি শর্তই বাংলাদেশ পূরন করেছে। পৃথিবীর কম দেশই আছে যারা সবকটি শর্ত পূরণ করেছে। এজন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিকভাবে অনেক এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। ২০৩০ সালে যে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)। এটা যদি আমরা পূরণ করতে পারি তাহলে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী জিডিপি হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এটা হলে এক্সট্রিম প্রভার্টি লেবেল বা হত দরিদ্রের সংখ্যা ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ শুধু তৈরি পোষাক রপ্তানী থেকে আয় করবে ৫০ বিলিয়ন ডলার এবং মোট রপ্তানী হবে ৬০ বিলিয়নের বেশি। এই লক্ষ্য নিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলছে।