বন্ধক দেয়া-নেয়ার ইসলামী রীতি

0
947
blank

আবু নুসাইবা মুহাম্মদ নূরুন্নবী: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম’ (সূরা মায়েদা : ৩)। একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যা কিছু সে করে বা করতে হয় এবং সেসব করতে গিয়ে মানুষটি যেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হয় সেসবের উত্তর ইসলামে রয়েছে। যেমন : জন্মের পর শিশুটির প্রতিপালন কিভাবে হবে, তার শিক্ষা-দীক্ষার কী হবে, তার বিয়েশাদি কিভাবে হবে, তার বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এদের কার প্রতি তার কী দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে? তার জীবিকা অর্জনের পথ ও পদ্ধতি কী হবে, সমাজে ও রাষ্ট্রে তার কী ভূমিকা থাকতে হবে- এভাবে যত প্রশ্ন করা যায় এবং ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে সব কিছুরই গাইডলাইন দেয়া আছে ইসলামে। অর্থাৎ জীবনে চলার জন্য তাকে অন্য কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী হতে হবে না। ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয়জীবন পর্যন্ত এবং রাঁধুনি থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত- সব ক্ষেত্রে সবাইকে সর্বত্র ইসলামের গাইডলাইন মেনে চলতে হবে। এটাই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তথা আল্লাহর উলুহিয়াতের সোজাসুজি অর্থ।
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ : ‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করো’ (সূরা বাকারা : ২০৮)। কিছু মানব, কিছু মানব না, নামাজ আর রোজা মানব জাকাত আর হজ মানব না, ইসলামের পারিবারিক আইন মানব, ইসলামের অর্থনৈতিক বিধান মানব না, ইসলামের সামাজিক নিয়মনীতি মানব, কিন্তু রাজনৈতিক নির্দেশনা মানব নাÑ এ রকম বেছে বেছে মুসলমান হওয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে কুরআনের বক্তব্য সুস্পষ্ট : ‘তবে কি তোমরা (মুসলমানরা) কুরআনের কিছু অংশ বিশ্বাস করো এবং কিছু অংশকে অমান্য করো? তোমাদের যারা এ রকম করে তাদের একমাত্র প্রতিফল দুনিয়ার জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তারা ভয়ঙ্কর শাস্তির মুখোমুখি হবে’ (সূরা বাকারা: ৮৫)।
আমাদের সবার জানা থাকা উচিত, আমাদের কোন লেনদেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর বিধান মতো হচ্ছে, আর কোনটি নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আর্থিক কাজ-কারবারের ক্ষেত্রে ইসলামের চূড়ান্ত রায় হচ্ছে, ‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন’ (সূরা বাকারা : ২৭৫)। কালাম-ই-পাকের চারটি সূরার বারটি আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সুদকে সর্বাত্মকভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং শেষে বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও যদি তোমরা মুমিন হও।’ (এ নির্দেশের পরও) যদি তোমরা সুদ না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা করো তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। এতে তোমরা জুলুম করবে না এবং মজলুমও হবে না’ (সূরা বাকারা : ২৭৮ – ২৭৯)। আমরা জানি, মানুষের জীবনে যত রকমের অর্থনৈতিক মুয়ামালাত-মুয়াশারাত রয়েছে তা সবই ইসলামি অর্থব্যবস্থায় প্রধানত তিন ভাগে পরিচালিত হয়। এগুলো হলো (ক) বাই মেকানিজম (ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি), (খ) ইজারা মেকানিজম (ভাড়া পদ্ধতি) এবং (গ) শিরকাত মেকানিজম (অংশীদারি কারবার পদ্ধতি)।
শরিয়তে এর বাইরেও আর্থিক লেনদেন রয়েছে। যেমন- কর্জ (করদ বা ঋণ), জাকাত, সাদাকাহ, ফিতরা, ওয়াকফ, হেবা প্রভৃতি। এসব লেনদেন থেকে কোনো প্রকার বেনিফিট বা মুনাফা বা লাভ পাওয়া যায় না। আর্থিক বা অ-আর্থিক যেকোনো ধরনের বেনিফিট পেতে হলে আমাদের অবশ্যই ওপরের তিনটি পদ্ধতির কোনো না কোনোটির আওতায় লেনদেন করতে হবে।
জমি ও দোকান রেহান বা বন্ধক দেয়া-নেয়া : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জমি রেহান দেয়া ও নেয়ার প্রচলন দেখা যায়। আমাদের চেনা সমাজে জমি রেহান দেয়া-নেয়ার যে প্রচলন রয়েছে তা এ রকম : এখানে কোনো অভাবী জমির মালিক নগদ টাকার প্রয়োজনে টাকার বিনিময়ে অন্যের কাছে জমি রেহান দেন। শর্ত থাকে যে, যত দিন না এ টাকা ফেরত দেয়া হবে তত দিন রেহান গ্রহীতা জমি ভোগ করতে থাকবেন। তিনি যদি এ জমি ১০ বছরও ভোগ করে থাকেন তবুও ওই টাকা পুরোটা দিয়ে তবে জমি ফেরত পেতে হবে। ইদানীং আবার দোকানও রেহান দেয়া হচ্ছে। যত দিন পর্যন্ত দোকান মালিক টাকা এক সাথে পরিশোধ করতে না পারবেন তত দিন পর্যন্ত দোকানটি রেহান গ্রহীতার ভোগ-দখলে থাকবে। রেহান গ্রহীতা এ দোকান নিজে পরিচালনা করবেন অথবা তৃতীয় কারো কাছে ভাড়া দেবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ লেনদেনটি ইসলামি শরিয়তের কোন পদ্ধতিতে সম্পাদিত হলো?
জাবির (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: কয়েক বছরের জন্য জমি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।’ মুসলিম (বাবু কিরাইল আরদ): হাদিস নম্বর : ৩৮২২। বোঝা গেল, সমাজে প্রচলিত ‘রেহান’ কোনো শরিয়তসম্মত ক্রয়-বিক্রয় নয়।
তবে কি এটি ইজারা মেকানিজম বা ভাড়া পদ্ধতি? ভাড়া দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে তো জমি ইজারা নিয়ে যে টাকা ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে তা ফেরত দেয়ার শর্ত করা যায় না। কেউ কাউকে বাড়ি বা দোকান ভাড়া দিয়ে প্রাপ্ত ভাড়ার টাকা দোকান বা বাড়ি ফেরত নেয়ার সময় ফেরত দেয়? ইসলামি শরিয়ত তথা কোনো আইনেই এমন আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ নেই। বোঝা গেল, গ্রামীণ সমাজে প্রচলিত ‘রেহান’ কোনো শরিয়তসম্মত ইজারা বা ভাড়া পদ্ধতিও নয়।
তবে কি এটি শিরকাত মেকানিজম (অংশীদারি কারবার পদ্ধতি)? তা হবে কেন? এটি তো কোনো ব্যবসায় নয়। এখানে কেউ কারো লাভ-লোকসানের অংশীদার নয়।
তবে এটি কী? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে টাকার দাতাকে। এ ক্ষেত্রে টাকা গ্রহীতার দায়িত্ব কম। কারণ তিনি দায়ে পড়ে জমি বা দোকান দিয়েছেন। তবে তিনি একেবারে দায়মুক্তও নন। এখানে টাকার দাতাকে (রেহান গ্রহীতা) বলতে হবে, এ টাকা তিনি কী হিসেবে দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে রেহান কথাটা কোত্থেকে এলো? ‘রাহন’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো যেকোনো কারণে কোনো বস্তুকে আটকে রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় ‘রাহন’ হলো কোনো দাবির বিপরীতে কোনো বস্তুকে এমনভাবে আটক রাখা, যাতে আটককৃত বস্তু দিয়ে দাবি বা অধিকার বা পাওনা আদায় সম্ভব হয়। যেমন- ঋণ। সোজা কথায়, রেহান অর্থ বন্ধক। বন্ধক রাখার বিষয়টি ইসলামি শরিয়তে অনুমোদিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোনো লেখক না পাও তবে হস্তান্তরকৃত/অধিকৃত/আয়ত্তাধীন বন্ধকী বস্তু নিজ দখলে রাখবে।’ (সূরা বাকারাহ : ২৮৩)। সূরা মুদ্দাচ্ছিরের ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : ‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ (রাহিনাহ)।’ রাসূলুল্লাহ সা: নিজে এক ইহুদি থেকে বাকিতে কিছু খাদ্য ক্রয় করেছিলেন এবং সেই দেনার গ্যারান্টি হিসেবে তাঁর বর্মটি ইহুদির কাছে রেহান (বন্ধক) রেখেছিলেন। বুরহানুদ্দিন আবুল হাসান আলী ইবনে আবুবকর আল-ফারগানি আল-মারগিনানি (রহ:) তার আল-হিদায়া কিতাবের ‘রাহন’ অধ্যায়ে বলেছেন, ‘রেহান (বন্ধক) রাখা জায়েজ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে। রেহান (বন্ধক) হচ্ছে নিজের পাওনা উসুল নিশ্চিত করার নিমিত্তে সম্পাদিত একটি চুক্তি।’ ইমাম শাফেয়ি (রহ:) বলেছেন, বন্ধকী বস্তু (রেহান) বন্ধক গ্রহীতার কাছে আমানতস্বরূপ থাকে। আল-মারগিনানি (রহ:) তাঁর আল-হিদায়া কিতাবের ‘রাহন’ অধ্যায়ে আরো বলেছেন, ‘বন্ধক’ (রেহান) গ্রহীতা ব্যক্তির জন্য জায়েজ নেই বন্ধকের (রেহান) মাল দিয়ে উপকৃত হওয়া। সেবা নেয়া, বসবাস করা বা পরিধান করা কোনোটাই জায়েজ নয়। রেহান রাখা হয় শুধু নিজের পাওনা আদায় করার জন্য।
হানাফি মাজহাবের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, নির্ভরযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রামাণ্য ফিকাহ গ্রন্থ আল-হেদায়া কিতাবের ‘রাহন’ অধ্যায় থরোলি পড়ে গেলে এটি পরিষ্কার বোঝা যাবে যে, রাশিদুন যুগের রেহানের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির সাথে আমাদের সমাজে প্রচলিত রেহানের উদ্দেশ্য ও এর ধরনের কোনো মিল নেই। আল-হেদায়া কিতাবের বিস্তারিত আলোচনা হতে বোঝা যায়, ঋণদাতা কেবলই তার ঋণের টাকা ফেরত পাওয়াটা নিশ্চিত করতে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে সমমূল্যের বা কাছাকাছি মূল্যের কিছু একটা রেহান বা বন্ধক রাখছেন। এই রেহান বা বন্ধক রাখার দ্বিতীয় কোনো উদ্দেশ্যই নেই। হেদায়া কিতাবে বন্ধকী (রেহান) মালের যে সব বর্ণনা রয়েছে তা এ রকম : এক রেহান গ্রহীতার কাছ থেকে রেহানের ঘোড়া হারিয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ সা: তাকে লক্ষ্য করে বললেন, যাহাবা হাক্কুকা (তোমার অধিকার হারিয়ে গেছে)। এখানে রেহান হচ্ছে একটি ঘোড়া। ঘোড়াটি রেহান দেয়া হয়েছে গৃহীত ঋণের জামানত হিসেবে।
কোনো ব্যক্তি কারো কাছে আংটি রেহান রাখার পর সে যদি তা ব্যবহার করে তবে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ তাকে আংটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়নি, শুধু হেফাজতের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এখানে রেহান হচ্ছে একটি আংটি। আংটিটি রেহান দেয়া হয়েছে গৃহীত ঋণের জামানত হিসেবে।
দু-তিনটি তরবারি রেহান রাখার পর রেহান গ্রহীতা ব্যক্তি যদি তিনটি তরবারি কোমরে ঝুলিয়ে চলে তবে তাকে ক্ষতি পূরণ দিতে হবে না। কিন্তু দু’টি ঝুলালে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ বীরপুরুষেরা রণাঙ্গনে সাধারণত দু’টি তরবারি কোমরে ঝুলিয়ে চলেন। তিনটি নয়। এখানে রেহান হচ্ছে তরবারি। তরবারি রেহান দেয়া হয়েছে গৃহীত ঋণের জামানত হিসেবে।
রেহান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এমন বহু উদাহরণ দেয়া হয়েছে হেদায়া কিতাবে। এখানে এগুলো উদ্ধৃত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইসলামি শরিয়তে রেহান আসলে কী জিনিস তার একটি পরিষ্কার চিত্র পাঠকের মানসপটে অঙ্কন করা। ওপরে উদ্ধৃত উদাহরণগুলো থেকে জানা যাচ্ছে যে, রেহান কোনো লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হচ্ছে ঋণ পাওয়া। ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য রেহান হচ্ছে একটি নিমিত্ত মাত্র। এবং রেহানের (বন্ধক) মাল হয়ে থাকে সাধারণত কোনো অলাভজনক বস্তু। যেমনÑ আংটি, তরবারি, ঘোড়া, গোলাম প্রভৃতি।
অথচ আমাদের সমাজে যা প্রচলিত আছে তাতে রেহানটাই মুখ্য। যত অল্প টাকা ঋণ দিয়ে যত বেশি ফসলি জমি বা যত বেশি ভাড়া যোগ্য দোকান রেহান নেয়া যায় সে চেষ্টাই সব রেহান গ্রহীতাকে করতে দেখা যায়। যে জমিতে যত বেশি ফসল উৎপন্ন হয় ও যে দোকান ভাড়া দিয়ে যত বেশি ভাড়া পাওয়া যায় সে জমি বা দোকানের বিপরীতে তত বেশি ঋণ পাওয়া যায়। সোজা কথায়, রেহানের জমি বা দোকানটা হচ্ছে প্রদত্ত ঋণের বিনিময়। জমি থেকে ফসল আহরণ করে কিংবা দোকান থেকে ভাড়া পেয়ে লাভবান হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উদ্দেশ্য এই রেহান নেয়ার মধ্যে নেই। যদি এটিই প্রকৃত ঘটনা হয় তবে এটি একটি নিখাদ সুদের কারবার ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কুল্লু কারদিন জাররা নাফ’আন ফাহুয়া রিবা’ (যে ঋণ অতিরিক্ত কিছু উপার্জন করে, তাই সুদ)। হ্যাঁ, ঋণের বিপরীতে রেহান বা জামানত গ্রহণ করা জায়েজ আছে। কিন্তু ঋণের বিনিময়ে কোনো প্রকার ফায়দা হাসিল করা বিলকুল হারাম।
বুঝিবা এই তথাকথিত রেহানের নামে বাংলার গরিব কৃষককে জমিদারের শোষণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই শের-ই-বাংলা গত শতাব্দীর তৃতীয় দশকে গঠন করেছিলেন ‘ঋণ সালিসি বোর্ড’! পরবর্তীকালে ‘পূর্ব বাংলার প্রজাস্বত্ব আইন’ দিয়ে জমিদারি প্রথা বিলোপের মাধ্যমে তিনি এ দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব সাধন করেন। দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম এ-জাতীয় জুলুমের উপায়-উপকরণকে যে হারাম ঘোষণা করেছে শের-ই-বাংলা তার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকবেন বৈকি!
ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সা:-এর সুন্নাহ ও রাশিদুন যুগের ঐতিহ্য থেকে যেটা বোঝা যাচ্ছে তা হলো, জমির মালিক হয়তো নিজে চাষ করবে, তা সম্ভব না হলে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্য লোক দিয়ে চাষাবাদ করাবে। বর্গা, তথাকথিত রেহান ও নগদ লাগানো হতে এটি উত্তম।
এ ছাড়া রেহানের আরো সুন্দর ও শরিয়তসম্মত কী কী বিকল্প হতে পারে তা নিয়ে উচ্চতর গবেষণা হতে পারে। অবশ্য একটি সহজ বিকল্প হতে পারে একাধিক বছরের জন্য লিজ দেয়া এবং লিজ গ্রহীতার কাছ থেকে বার্ষিক হারে ভাড়া বাবদ টাকা নেয়া। মনে করা যাক এক বিঘা জমির বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা নেয়া হলো এই চুক্তিতে যে, প্রতি বছরের জন্য পাঁচ হাজার টাকা কেটে নেয়া হবে। জমির মালিক যদি তিন বছর পর জমি ফেরত নিতে চান, কিংবা লিজ গ্রহীতা টাকা ফেরত নিতে চান, তাহলে ১৫ হাজার টাকা ফেরত পাবেন। অবশ্য চুক্তির সময়ে কমপক্ষে কয় বছরের আগে জমি ফেরত নেয়া যাবে না, তা উল্লেখ করা যায়।
লেখক: প্রবন্ধকার