ফাহাদ মোহাম্মদ: প্রতিবছর আগাম বন্যায় তলিয়ে যায় হাওড়াঞ্চলের একমাত্র সম্বল বোরো ফসল। এই বাঁধের মতো অনেক বাঁধই পাহাড়ি ঢলে ভেঙ্গে যায়। অথচ সরকার থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ টাকা অনুদান দেওয়া হয় তা যদি সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হতো তাহলে এই বাঁধ ভাঙ্গার কথা না। যেই সরকারই ক্ষমতায় আসে সেই সরকারের স্থানীয় দুর্নীতিবাজ নেতাদের পকেটেই সেই টাকার বেশিরভাগ চলে যায়। আর সেই কাজে সহযোগিতা করেন আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতি সৎ(!) কর্মকর্তারা। তারা প্রতিটা কাজের জন্যই নাকি উনারা সততার সাথে একটা খাম গ্রহণ করেন। ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতেও নাকি ব্যাংকারদের পারিশ্রমিক দিতে হয় (ঠিকাদারদের মতে)। যদিও বাঁধের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যেই শুরু করার কথা থাকে কিন্তু আমাদের চেয়ারম্যান মেম্বররা সেই কাজ শুরু করেন ফেব্রুয়ারিতে। আর শেষ করেন যখন পানির ঢল নামে। তত দিনে যা হওয়ার তা হয়ে যায়। কৃষকে নিজেই কোদাল দিয়ে মাটি কাটতে হয়। যতদিন না এই ধান্ধাবাজদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে ততদিন এই দেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ হবে না। নইলে কৃষকের উচিৎ হবে নিজ হাতে তাদের শাস্তি দেওয়া। আমি এই কথাগুলো বললাম কারণ আমি একজন কৃষক পরিবারের সন্তান। নিজের চোখের সামনেই দেখেছি আমাদের হাওরের জমি পানির নিচে তলিয়ে যেতে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমার পরিবার। হাজার হাজার মণ ধান পানির নিচে চলে গেছে চোখের সামনে। তখন টলটল চোখে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আমাদের কিছুই করার থাকে না। এখন আর আমাদের সেই কৃষিজমি নেই। কিন্তু যাদের আছে তাদের জন্য কষ্ট হয়। প্রান্তিক কৃষকেরা মহাজনের নিকট থেকে সুদে টাকা এনে ফসল চাষ করেন, আর সেই ফসল যখন প্রতিবছর পানিতে তলিয়ে যায় তখন সুদের টাকা পরিশোধ করতে কৃষক তার জমি বিক্রি করেন। প্রতিবছর প্রকৃত কৃষকের জমি নাটকীয় হারে কমে যাচ্ছে।
আমার মতে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দেওয়া উচিৎ। এবং প্রতিটি বাঁধকে বেড়ি বাঁধে উন্নতি করা হোক। এই দেশের প্রতিটি কাজেই আমাদের দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এতই সততা দেখান যে, সরকারি টাকাকে তারা নিজের মনে করে সেই টাকা দিয়ে নিজের বাড়ি নির্মাণ করে ফেলেন অথবা ব্যাংকে জমা করে রাখেন। তারা একেকজন আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছেন। সুনামগঞ্জ হাওর বাঁধ রক্ষায় দেখতেছি নেতারও পাবলিকের সাথে মাটি কাটতেছেন।
প্রশ্ন হল ইনারা কোথায় ছিলেন যখন হাওর রক্ষা বাঁদের কোটি কোটি টাকা শকুনের দল খাবলে খেলো? সময় এসেছে দলীয় সংকীর্ণতামুক্ত হয়ে জাতীয় স্বার্থে একত্রিত হওয়া।
যে পরিমাণ টাকার দুর্নীতি হয় তার থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশী টাকার ফসল প্রতিবছর পানির নিচে তলিয়ে যায়।
সরকারের কাছে অনুরোধ এই তামাসা বন্ধ করে স্থায়ী সমাধান হিসেবে প্রতিটি বাঁধকে ভেড়ি বাঁধে উন্নিত করা হোক। ভাটি অঞ্চলের যারা ঢাকায় আছেন তারা দয়া করে একটা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই খেলা চলতে দেওয়া যায় না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.