বাজেট পরিমার্জনের দাবি বিরোধী দলীয় এমপিদের

0
493
blank
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরিমার্জনের দাবি জানিয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপিরা। তারা বলেন, বাজেট বড় হলেই কৃতিত্বের কিছু নেই। বাজেটকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এবারের বাজেটে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। তাই প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা করা হোক। পরিমার্জন করা হোক। প্রায় একই দাবি জানান ১৪ দলীয় জোট সরকারের অন্যতম শরীক জাসদ। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখি ও জনক্যলানকর বলে দাবি করেন সরকারি দলের এমপিরা। তারা বলেন, এবারের বাজেট বাস্তবায়ন করা গেলে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে সফলভাবে হাঁটবে। বুধবার স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অদিবেশনে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা এসব দাবি জানান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মাগুরা-২ এর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবারের বাজেট বাস্তবায়ন হবে। ক্রীড়াক্ষেত্রসহ সবদিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রীড়া শুধু একটি জাতির জন্য শারিরীক বিষয় নয় একটি জাতির ভাবমূর্তি তুলে ধরতে ক্রীড়ার অবদান বেশি। ক্রীড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন আর অজানা আর অচেনা নয়। এ অবস্থানে আসার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ তিনি একজন ক্রীড়ামোদী মানুষ। বাংলাদেশ মানুষ পারে এবং সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। ক্রীড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অবদান রয়েছে।

শরীয়তপুরের এমপি বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, অর্থমন্ত্রী জাতির জন্য আশাজাগানীয়া বাজেট দিয়েছেন। বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার মানুষ নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়েছি খালেদা জিয়ার মন্তব্যে। তিনি বলেছেন এটা লুটপাটের বাজেট। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া ও তার পরিবার এই বাংলাদেশকে লুটপাটের রাজত্ব বানিয়েছিলো। তিনি বলেন, এসব কারণে খালেদা জিয়াকে জনগণ আজ আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্র করছেন। জাতিকে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাজেট দেখলে বোঝা যায় বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে। তারুন্যের স্ফুলিংয়ের জন্য বাজেটে তরুনদের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্ব ও পরামর্শে ডিজিটাল দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিনিয়োগ বান্ধব যে প্রতিশ্রুতি , তার যে নীতিমালা এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রীর যুগপোযোগী বাজেট উপস্থাপনা কারণে সারাবিশ্বের যতগুলো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি রয়েছে একের পর এক বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ছুটে আসছেন। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এই মুহুর্তে এত বিনিয়োগ বান্ধব নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

জাতীয় পার্টির অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় জাতীয় পার্টি এখন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দল। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে বলা হচ্ছে এজন্য অবদান রয়েছে জাতীয় পার্টির। বাজেট যত বড়ই হোক তা যদি বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে জনগন আস্থা হারাবে। ঘাটিত বাজেট বাস্তবায়ন করা তো আরও কঠিন। অর্থমন্ত্রী দেশের সব নাগরিকের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। আজ যে শিশুটি জন্ম নিলো তার মাথায়ও ঋণের বোঝা রয়েছে। এই বাজেটে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ খুশি হতে পারেনি বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে। আবগারি শুল্কের কারনে মানুষ আতংকে রয়েছে। কিছু বিষয ছাড়া বাজেটের অনেক ইতিবাচক দিক আলোচনার বাইরে চলে গেছে। অনেক কিছু করার পরও ভ্যাট আর আবগারি শুল্কের কারনে জনমনে বিরক্তি তৈরি হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের এমপি তানভীর ইমাম বলেন, বিগত দিনে যারা মানুষ হত্যা করেছে সেই বিএনপি-জামায়াত জোটই এবারের বাজেটের একমাত্র সমালোচক। বিভিন্ন পদক্ষেপে এবারের বাজেট জনমুখি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনেিত বরাদ্দ বাড়ায় সুবিদাবোগীর সংখ্যা বাড়বে। বাজেটের কারণে মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সামনে নির্বাচন। তাই নির্বাচনী আসন ভিত্তিক উন্নয়নে আরও ৫০ কোটি টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করছি। তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য অর্থ মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা গুরুত্তর সঙ্গে নিচ্ছেন কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন।

জাসদের বেগম শিরিন আখতার বলেন, ১৪ দল আর সরকার একসঙ্গে দুটি যুদ্ধ করছে। একটি সংবিধান সম্মত রাখার যুদ্ধ আরেকটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যুদ্ধ। আমরা মনে করি, এবারকার বাজেটকে অনেক ভালো বলা যায়। জাসদ বারবারই প্রগতিশীল কর নীতি কথা বলেছে। এবারের বাজেটে গরীবদের জন্য আরও সহনীয় করা যেতে পারে। কৃষিখাতে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন,এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি করা হচ্ছে। জাসদ আশা করে বাজেটের পরিমার্জন করা হবে।

সিলেটের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস এখনও দুই নম্বরে রয়েছে। কিন্তু আপনারা কি গার্মেন্টসের প্রকৃত অবস্থা জানেন। কোন পর্যায়ে যাচ্ছে সেটা জানেন? ইথিওপিয়া আজ আমাদের ব্যবসা নিয়ে যাচ্ছে। তাই এ শিল্প সম্পর্কে নতুন করে আমাদের ভাবতে হবে।

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের হাবিবে মিল্লাত বলেন, নির্বাচন দেড় বছর বাকি আছে কিছিু মিডিয়ায় এখন শুরু হয়েছে চরিত্র হননের কাজ। টাকা পয়সার মাধ্যমে এটা করা হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই সাবধান হতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করছি। গত কয়েক দিনে একটি পত্রিকায় টানা ৫ দিন এমপিদের চরিত্র হননের কাজ করা হচ্ছে।

নাটোর-২ আসনের শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা দরকার। প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজবি ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হচ্ছে। সবদিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবারের বাজেট গনমুখী ও জনকল্যাণমুখী হয়েছে।

সিলেট-২ আসনের জাতীয় পার্টি দলীয় এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন, বাজেট বড় হলেই কৃতিত্বেও কিছু নেই। বাজেটকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এবারের বাজেটে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। তাই এবারের বাজেট পুনর্বিবেচনা করা হোক। পরিমার্জন করা হোক।

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন-বরিশাল-২ এর তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, খুলনা-২এর মিজানুর রহমান ,যশোর-৫ এর স্বপন ভট্রাচার্য, এডভোকেট নাভানা আক্তার, নড়াইল-২ এর শেখ হাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া-১ মো. রেজাউল হক চৌধূরী, চট্রগ্রাম-১৪ এর মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী।