বিএনপির ভিশন আওয়ামী লীগ থেকে চুরি করা: প্রধানমন্ত্রী

0
567
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির ভিশন ২০৩০ আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই চুরি করা- এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের কাছে শিখেই বিএনপি নেত্রী ভিশন ২০৩০ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের ভিশন মানেই জ্বালাও পোড়াও আর মানুষ হত্যার ভিশন। ‘জ্বালাও পোড়াও’ থেকে বেরিয়ে এসে, এ ধরনের ভিশন দেয়ায় তারপরও খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সরকার প্রধান। তিনি বলেছেন, বিএনপির পক্ষে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

শনিবার সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এসব বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়নের তথ্য তৃণমূলে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগের প্রথম বর্ধিত সভা ছিল এটি। যেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের জাতীয় ও নির্বাহী পরিষদ সদস্যরা ছাড়াও দলীয় সংসদ সদস্য ও জেলা ইউনিটের সংশ্লিষ্ট সদস্যরা।

বিএনপি চেয়ারপার্সন ঘোষিত ভিশন-২০৩০ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী একটি ভালো জিনিস শিখছেন বহু যুগ পরে। এত যুগ পরে তাদের মাথায় এলো, তারা ভিশন-২০৩০ দিয়েছে। যা-ই হোক, মানুষ মানুষের কাছে শেখে। তারা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছে। নকল করে হয়তো পাস করা যায়, কিন্তু দেশের জনগণের দায়িত্ব এটা বিবেচনা করার। চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি ধরা না পড়ে। তবু ভালো, তারা হত্যা-সহিংসতার পথ ছেড়ে জাতির সামনে একটা বিষয় তুলে ধরেছে।

শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার পর যারাই ক্ষমতায় ছিল, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিলো। তিনি বলেন, বিএনপি রাজনীতি লুটপাটের আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি উন্নয়নের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা ছাড়া দেশের মানুষের উন্নয়ন সম্ভব না, তাই জনগণেরে উন্নত জীবন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে যদি নিজ দলের কেউ জড়িত থাকে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। এর সবই আমরা বুকলেট আকারে তৈরি করেছি। এগুলো আপনাদের দেয়া হয়েছে। আপনারা পড়বেন এবং দেশের মানুষের কাছে প্রচার করবেন।

প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাদের গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা অর্থশালী আছেন সেখানে আর্থিক সহয়তা করবেন এবং সেটা যেন ভালভাবে চলে সহযোগিতা করবেন। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি। যেখানে ৩০ প্রকারের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। যার মাধ্যমে মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা পাচ্ছে।

সভায় বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির মধ্যে কোনো মানবতাবোধ নাই। তাদের রাজনীতি হচ্ছে লুটে খাওয়ার। ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল। সেটা আমরা ভুলে যাইনি। তারা (বিএনপি) কোনো প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠুভাবে চলতে দেয় নাই। সবক্ষেত্রে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ছিল তাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য বছরের পর বছর কারাগারে আটক ছিলেন। কিন্তু কখনো আপস করেন নাই। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দেশের জন্য দিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য একটাই, বঙ্গবন্ধু যে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন, উন্নত জীবন দিতে চেয়েছিলেন। তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, সেটাই আপনাদের দেখতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব নেতার আদর্শ বাস্তবায়ন করা। কী পেলাম, না পেলাম সেটা বড় কথা না। কতটুকু জাতিকে দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা।

দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির অবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেছিল। মানুষ খেতে পারত না। হাড্ডিসার দেহ। ছেঁড়া কাপড় পরত। কাপড় কেনার মতো অবস্থা ছিল না। বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় এনে দেশের মানুষের মাঝে বিতরণ করা হতো। খাদ্য, চিকিত্সা বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদার অভাব ছিল। সরকার গঠন করার পর আমাদের একটাই চিন্তা ছিলে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। এ জন্য আমরা বিভিন্ন কল্যাণমুখী কর্মসূচি নিয়েছি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের থ্রি-জি চালু হয়েছে। আগামীতে ফোর-জি চালু করে দেব। একটা মোবাইলের মাধ্যমে বিশ্ব এখন সবার হাতে। গ্রামের মহিলাদের সমস্যা থাকলে তা জানার জন্য ‘তথ্য-আপা’ আছে। তারা মেয়েদের কাছে ল্যাপটপ নিয়ে যায়, মেয়েদের সমস্যা শুনে এবং তা দূর করে দেয়। কমিউনিটি চিকিৎসার জন্য মেয়েদের এখন আর পরিবারের ওপর নির্ভর করে না।

তিনি বলেন, আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম, তখন বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা হাসাহাসি করত। কোনো সমস্যা হলেই তারা সমালোচনা করত। আজকে কি সেই তারাও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করছে না, তারা ব্যবহার করছে। এর সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। আমাদের উন্নয়নের সব থেকে বড় কথা হলো, আমরা তেলা মাথায় তেল দিব না। গ্রামের নিঃস্ব মানুষ যেন সরকারের সেবা পায় সেটাই আমাদের উন্নয়নের নীতিমালা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশাল জনসংখ্যাই জনশক্তি। সেই মানুষকে নিয়েই আমরা পথ চলব। সবকিছুতে মানুষের কাছে কেন আমরা হাত পাতব। আমরা যে নিজেরাই পারি তা প্রমাণ করেছি। যখন পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কথা বলে টাকা ফিরত নিয়েছিল, তখন আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে তাদের জবাব দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শিক্ষাকে বহুমুখীকরণ করেছি। দেশে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। নতুন মেয়াদে আমরা আরো দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন করেছি। কিন্তু খালেদা জিয়া সরকার ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করেছিলে। আমরা পুনরায় ক্ষমতায় এসে তা বাস্তবায়ন করছি। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রস্তুত করার জন্য নতুন প্রজন্মকে তৈরি করছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুলে বাচ্চাদের টিফিনের ব্যবস্থায়ও আপনারা অবদান রাখতে পারেন। বিত্তশালীরা সাহায্য করতে পারেন। কারণ, কবে কে আমাদের সাহায্য করবে তারপর আমরা শিশুদের খাওয়াব? আমাদের তা করতে হবে কেন? নিজেরাই, নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং স্কুল কমিটির সদস্যরাই টিফিনের ব্যবস্থা করে দিতে পারে।

দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন। বৈঠকের শুরুতে সংগঠনের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মোড়ক উম্মোচন করেন দলের সর্বশেষ ঘোষণাপত্র ও গঠণতন্ত্রের। জেলা ইউনিটের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দেয়া ল্যাপটপ।