সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের “কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের বিভিন্ন দাবী দাওয়ার ভিত্তিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ ২২ আগস্ট ২০১৮ ইং রোজ মঙ্গলবার দুপুর ১২ ঘটিকায় মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল।উক্ত মানববন্ধনে অনুষদের শিক্ষক,শিক্ষিকা এবং ১ম থেকে ৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন চাকুরির ক্ষেত্রে উক্ত অনুষদের স্নাতক ডিগ্রীধারীরা দীর্ঘদিন যাবত নানাভাবে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।তাদের এই সকল সমস্যা দূর করার লক্ষে বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের যাত্রা শুরু করেন।সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছারাও বাংলাদেশের অন্য তিনটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষী অর্থনীতি অনুষদের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের সাথে একাত্ততা ঘোষণা করেছেন।উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কৃষি অর্থনীতি অনুষদের শিক্ষক জনাব সুব্রত কৈরী এবং প্রথম ব্যাচে থেকে পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।বক্তব্য রাখেন অন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক রেজাউল কবির সাগর। মানববন্ধনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট সকল শিক্ষার্থীরা একটি স্মারকলিপি জমা দেন।স্মারকলিপিতে অন্তর্ভুক্ত দাবীসমুহ হল ঃ
১. বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অধীনে ‘সহকারী পরিচালক’ পদে স্বতন্ত্র ক্যাডার হিসেবে দেশের সকল উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে “কৃষি অর্থনীতিবিদদের” নিয়োগ প্রদানে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
২. বিসিএস “শিক্ষা ক্যাডারে” সরকারী কলেজের “অর্থনীতি প্রভাষক” পদে সাধারণ অর্থনীতি স্নাতকদের পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতির স্নাতকদেরও আবেদনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।
৩. বিসিএস “পরিসংখ্যান কর্মকর্তা পদে পিএসসি কর্তৃক চাওয়া যোগ্যতা সমূহগুলো হচ্ছে- “স্নাতক পর্যায়ে অর্থনীতি অথবা পরিসংখ্যানসহ অর্থনীতি অথবা বাণিজ্য বিভাগের যেকোন শাখায় অথবা সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে সমমানের ডিগ্রী।
৪. বিসিএস নন-ক্যাডার “পরিসংখ্যান কর্মকর্তা” পদের জন্যও উপরের ৩ নং অনুচ্ছেদের শর্ত গুলো প্রযোজ্য হলেও “কৃষি অর্থনীতি ” স্নাতকরা এক্ষেত্রেও চাকরির সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এই পদে কৃষি অর্থনীতির স্নাতকদেরও (পিএসসি)’ চাকরির জন্য সুপারিশের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।
৫. বিসিএস নন-ক্যাডার “সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কিত সকল বিষয়ের স্নাতকরা অথবা অর্থনীতি অথবা যারা স্নাতক শ্রেনীতে এক সেমিস্টারেও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন তারাও এই চাকরির জন্য সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন কিন্তু আমরা তথা কৃষি অর্থনীতির স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থীরা কয়েক সেমিস্টারে “গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান” বিষয়টি অধ্যয়ন করা সত্ত্বেও এবং বিসিএস ভাইভায় উত্তীর্ণ হলেও উক্ত পদের জন্য আমাদের বিবেচনা করা হয় না। এই পদে কৃষি অর্থনীতির স্নাতকদেরও ‘পিএসসি’ কর্তৃক চাকরির জন্য সুপারিশের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।
৬. আমরা কৃষি অর্থনীতিবিদরা আমাদের স্নাতক শ্রেনীতে কৃষি, ফিশারিজ এবং পশুপালন অনুষদের প্রাথমিক বিষয়াদি পড়াশোনা করলেও ‘কৃষি মন্ত্রণালয়’এবং ‘মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের’ অধীনে প্রথম শ্রেনীর পদমর্যাদার “গবেষণা ও মূল্যায়ন” কর্মকর্তা পদে আমাদের চাকরির জন্য ‘পিএসসি’ কর্তৃক সুপারিশ করা হয় না। একই সাথে আমাদের সুপারিশ করা হয় না ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের’ অধীন বিভিন্ন বোর্ড ও প্রতিষ্ঠানের ‘গবেষণা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ পদেও। যেমন- তুলা উন্নায়ন বোর্ডের কর্মকর্তা। এই পদে কৃষি অর্থনীতির স্নাতকদেরও ‘পিএসসি’ কর্তৃক চাকরির জন্য সুপারিশের জন্য সুপারিশের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।
৭. ইঅজও, ইজজও, ইওঘঅ, ইঝজও, ইঔজও, ইঅউঈ, ইঋজও, ইখজও সহ অন্যান্য ‘নার্স’ ভুক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ‘কৃষি অর্থনীতি বিভাগ থাকলেও “সাইন্টিফিক অফিসার” পদে নিয়মিতভাবে সেখানে আমাদের নিয়োগ করা হয় না। অনেক সময় বছরের পর বছরধরে শুধুমাত্র কৃষি অর্থনীতির “সাইন্টিফিক অফিসার” পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অজানা কোন কারণে বন্ধ হয়ে থাকে। এখানে একই সাথে আরো উল্লেখ যে, ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের শুধুমাত্র হেড কোয়ার্টারেই ‘কৃষি অর্থনীতি’ বিভাগটিকে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমাদের দাবী, ঐ সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সকল উপকেন্দ্র ‘কৃষি অর্থনীতির’ “সাইন্টিফিক অফিসার’ পদ সৃজন করে সেখানে আমাদের নিয়োগের ব্যাপারে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং একই সাথে নিয়োগ পরীক্ষার সময় আমাদের পদের জন্য ‘অর্থনীতি’ বিষয়ক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে আমাদের পরীক্ষা গ্রহণে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, গত ২৮ জুলাই, ২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত বিএডিসি’র সহকারী পরিচালক’ পদের নিয়োগ পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বর সাধারণ এবং বাকী ৪০ নম্বরের বিষয় ভিত্তিক অংশে শুধুমাত্র ‘এগ্রিকালচর’ অংশ থেকে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয় কিন্তু এখানে ‘কৃষি অর্থনীতি’ বিষয়ের জন্য আলাদা কোন প্রশ্ন অথবা একটি নম্বরও বরাদ্ধ ছিল না। আমরা মনে করি এই ভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে কৃষি অর্থনীতি স্নাতকদের সাথে প্রহসন করা হয়েছে এবং আমাদের মেধার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এখানে আরোও উল্লেখ্য যে, অন্যান্য ‘নার্স’ ভুক্ত প্রতিষ্ঠানেও লিখিত পরীক্ষায় সাধারণ অংশ বাদে বাকী অংশে ‘অর্থনীতির পাশাপাশি এগ্রিকালচারের’ প্রশ্নেরও উত্তর আমাদের করতে হয়। যেখানে কৃষি কিংবা অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র তাদের বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর করলেই চলে। তাই এই সকল জটিলতা দূরীকরণে অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮. বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (গবেষণা ও পরিসংখ্যান) পদে ‘অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান’ স্নাতকদেরর পাশাপাশি সার্কুলারে উল্লেখিত অন্যান্য বিষয়ের স্নাতক ডিগ্রীধারীদের বিবেচনা করা হলেও আমরা একই সাথে এই দুই বিষয়ে পড়াশোনা করলেও আমাদের এই পদের জন্য বিবেচনা করা হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে অতিদ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
৯. কিছু সরকারী ব্যাংক (যেমন- বেসিক ব্যাংক) ও ৫৬টি বেসরকারী ব্যাংকের হাতে গোনা চার-পাঁটটি ব্যাংক ব্যতিত অধিকাংশ বেসরকারী ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থনীতি, এমনকি পদার্থ, রসায়ন এর মত অন্যান্য অনেক বিষয়ের উল্লেখ থাকলেও কয়েক সেমিস্টারব্যাপী ‘ব্যাংক ও অর্থনীতি’ বিষয়ক বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করেও আমরা সেই সকল ব্যাংকে চাকরির আবেদন করার ন্যূনতম সুযোগটুকু পর্যন্ত পায় না। এই ব্যাপারে অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান আশা করছি।
১০. অত্যন্ত কষ্ট এবং লজ্জার সাথে বলতে হচ্ছে যে, ‘বিডি জবস ও চাকরী ডট কম’ এর মত সুপরিচিত চাকরির দুইটি ওয়েব সাইটে হাজার হাজার চাকরির বিজ্ঞপ্তির মাঝেও কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ চাহিদায় কৃষি অর্থনীতির ¯œাতকদের আবেদন চাওয়া হয় না। আমরা প্রত্যাশা করছি আমাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অতিদ্রুত অন্তত সুপরিচিত কিছু কৃষি ভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তাঁদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আমাদের ‘কৃষি অর্থনীতি’ বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করাতে সচেষ্ট হবেন। এই ব্যাপারে আপনারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে আশা প্রকাশ করছি।
১১. উপরে উল্লেখিত বিষয় সমূহ বাদে আরো যে সকল স্থানে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে চাকরির বিজ্ঞাপনে সাধারণ অর্থনীতির স্নাতক পাশ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন তার সকল ক্ষেত্রে অর্থনীতির পাশাপাশি আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে কৃষি অর্থনীতি উল্লেখ থাকতে হবে। যেমন- রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এর চলমান নিয়োগ বিজ্ঞাপনে “সহকারী পরিচালক” এবং “গবেষণা কর্মকর্তা” পদে অর্থনীতি / মার্কেটিং /পরিসংখ্যান / সমাজবিজ্ঞান/ ব্যবসা প্রশাসরে যেকোন বিষয়ে উত্তীর্ণ স্নাতকরা আবেদনের যোগ্য হলেও আমরা কৃষি অর্থনীতির স্নাতকরা কেন ঐ পদগুলির জন্য আবেদনের যোগ্য নই তা আমাদের জানা নেই। অথচ আমরা আমাদের স্নাতক শ্রেণিতে উপরে উল্লেখিত সকল বিষয়ে অধ্যয়ন করে থাকি। তাই সকল চাকরির ক্ষেত্রে যুগ যুগ ধরে চলে আসা “সাধারণ অর্থনীতি ও কৃষি অর্থনীতির” মধ্যকার এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
তবে কোন কারণে এই রকম কোন চাকরির বিজ্ঞাপনে কৃষি অর্থনীতি বিষয়টি আবেদনের যোগ্যতা হিসাবে যদি চাওয়া না হয় এবং পরে যেকোন উপায়ে যদি তা আমাদের নজরে আসে তবে সাথে সাথেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলীর সমন্বয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী “ডেলিগেশন টিম” সব সময়ের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।
১২. অতি দ্রুত স্নাতক পর্যায়ে সিলেবাসে “ইন্টার্নশীপ” সংযুক্ত করতে হবে। যাতে করে কৃষি অর্থনীতির ভবিষ্যৎ স্নাতক ডিগ্রীধারীরা নিজেদেরকে আরো বেশি দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন।
১৩. “বর্তমান ও সাবেক” শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের সাথে যথাযথ আলোচনা সাপেক্ষে অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ স্ব-স্ব ডিপার্টমেন্টের কোর্স কারিকুলাম সময়ের সাথে সাথে “আপগ্রেডেশন” করতে থাকবেন। সেই ব্যাপারে তাঁদের সহযোগিতা একান্তভাবে প্রত্যাশা করছি।
১৪. অতি দ্রুত অভিজ্ঞ একটি শক্তিশালী “ডেলিগেশন” টিম তৈরি করে বিভিন্ন সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার জন্য সেই টিমকে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
অতএব আপনার কাছে আমাদের আকুল আবেদন এই যে, উক্ত সমস্যা নিরসনে আপনি সর্বাত্মকভাবে আমাদের সাহায্য করবেন এবং সেই সাথে আপনার মাধ্যমে এই সংকট নিরসনে আমাদের অভিজ্ঞ “ডেলিগেশন” টিমের সুচিন্তিত মতামত আমাদের একান্ত কাম্য।