বিভেদ নয়, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি: মির্জা ফখরুল

0
482
blank

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন আর বিভেদ নয়Ñ গণতন্ত্র ও দেশ রক্ষায় আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের বুকের ওপর যে দুঃশাসন চেপে বসেছে তাদেরকে পরাজিত করতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করে জাতিকে মুক্তি দিতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সবাইকে আহ্বান জানাব, গণতন্ত্রকামী সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হোন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করুন। কারণ দেশনেত্রী কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন এ সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য। সেই জাতীয় ঐক্য তৈরি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা স্বাগত জানাই যারা আজকে ঐক্য করছে। আমরা তাদের আহ্বান জানাই আসুন আরো বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি। আসুন সবাই ভেদাভেদ ভুলে একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করে এ অবৈধ দানবকে পরাজিত করি।

একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তফসিল ঘোষণার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। এছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রাতে ঘুমাতে পারেন না। এই বুঝি খালেদা এলো, এই বুঝি তারেক রহমান এলো। ২৪ ঘণ্টাই তারা এমন বিএনপি-ভীতির কারণে ঘুমাতে পারেন না। শুক্রবার রাতে সারা দেশে বিএনপির প্রতিটা নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ রেইড দিয়েছে। আজ সারা দেশে বিএনপির এই সমাবেশে বাধা দিয়েছে। মির্জা আলমগীর বলেন, সরকারের মধ্যে এখন যে বিএনপি-ভীতি কাজ করছে সে ভীতি থেকে রক্ষা পেতে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ভাবছে ইভিএম তাদের রক্ষা করে নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছে দেবে, কিন্তু জনগণ তাদের রক্ষা করবে না। মির্জা আলমগীর বলেন, আগে আওয়ামী লীগ দাবি করতো তাদের সঙ্গে তরুণ সমাজ আছে। কিন্তু এখন এই তরুণ-যুবকরা চায় এই দুঃশাসনের পাথর যেন তাদের বুকের ওপর থেকে সরে যায়। আর আজ শিশু-কিশোররাও দিন গোনে কখন সরকারের পতন হবে। আওয়ামী লীগ এমনই একটি দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে মানুষ দূরে সরে গেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নেমেছিল। আপনারা দেখেছেন কীভাবে তাদের হেলমেট পরা বাহিনী দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করে মারতে মারতে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

মির্জা আলমগীর বলেন, দেশে একদলীয় বাকশাল থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে বিএনপি গঠন করেছেন জিয়াউর রহমান। যেভাবে ১৯৭১ সালে জাতির ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনের কারণে আজ আবার সেই গণতন্ত্র সংকটের মুখে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মহাসচিব বলেন, আমাদের আজ বুকে সাহস নিয়ে, বুকে বল নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বুকের রক্ত দিতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকের জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়–ন। বুকে হাত দিয়ে বলুন, বাংলাদেশকে মুক্ত করবোই, গণতন্ত্রকে মুক্ত করবোই। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছেÑ অবৈধ সরকারের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। আমি জনগণের কাছে ফরিয়াদ করতে চাই, দেশনেত্রী আজ গণতন্ত্রের জন্য কারাগারে রয়েছেন। স্বামী হারিয়েছেন, পুত্র হারিয়েছেন, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন। তার এক পুত্র নির্বাসিত। তার কী এটা প্রাপ্য এই জাতির কাছে? আমাদের মাতা, গণতন্ত্রের মাতাকে আর কারাগারে দেখতে চাই না। তিনি বলেন, যারা দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিতে হবে আমরা দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করবো, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। দেশের মানুষ গণতন্ত্রের মা’কে আর কারাগারে দেখতে চায় না।

মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদের নেত্রীকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা বাতিল করতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি বলেন, এখন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে সাজা দিতে চাইছে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই মামলার তদন্তকে প্রভাবিত করেছে। তিনজন আইও পরিবর্তন হওয়ার পরে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরে নতুন করে তদন্ত করিয়েছেন। মুফতি হান্নানকে দিয়ে ১৬৪ ধারায় একটা মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করে তারেক রহমানকে আসামি করেছে। রায়ের আগে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিচ্ছেন, এ মামলায় খালেদা ও তারেক রহমানের সাজা হবে। তাহলে কি আপনারা আগেই গণভবনে রায় লিখে রেখেছেন। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই এই ধরনের ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। দেশের মানুষ এর দাঁতভাঙা জবাব দেবে। তাই সরকারের উদ্দেশে মির্জা আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় আপনাদের নিতে হবে। দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আমাদের কথা পরিষ্কারÑ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে। বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্যের সমাপ্তিতে ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দাও, মুক্তি দাও’; ‘সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, করতে হবে’; সরকারের পদত্যাগ করতে হবে, করতে হবে’; ‘নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে, করতে হবে’Ñ এসব সেøাগান ধরে নেতাকর্মীদের সেøাগান দিতে বলেন।