বিয়েবাড়িতে কান্না: সড়ক দুর্ঘটনায় বর ও তার বাবা-চাচাসহ নিহত ৮

0
463
blank
blank

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: বিয়েবাড়িতে ছিল সাজসাজ রব। সবাই প্রস্তুত নববধূকে বরণ করে নিতে। হঠাৎই একটি খবর সব কিছু ওলটপালট করে দিল। আনন্দমুখর বিয়েবাড়িতে নেমে এলো বিষাদের ছায়া। ওই বাড়ির বর, তার বাবাসহ আটজন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রূপসপুর গ্রামে এখন চলছে শোকের মাতম। নববধূকে বরণের পরিবর্তে বাড়ির সবাই এখন অপেক্ষায় স্বজনদের লাশের। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা-সিলেট

মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের শশই নামক স্থানে একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বরযাত্রী বহন করা মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রূপসপুর গ্রামের বর আবু সুফিয়ান, তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা ঢাকার মহাখালীর কনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের শশই নামক স্থানে সকাল ৯টার দিকে এনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আরও একজন। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- বর ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান (২৫), তার বাবা আদিউর রহমান (৬০), চাচা মতিউর রহমান মোর্শেদ (৪২), চাচাতো ভাই আলী হোসেন (১২), একই গ্রামের নিকটাত্মীয় মাওলানা সাইদুর রহমান (৫০), হাজি আবদুল হান্নান (৫৮), মুক্তার চৌধুরী ওরফে মুকিত (৬৫) ও দুরুদ মিয়া (৫৫)। দুর্ঘটনায় আহত জাকির হোসেন, সোহান মিয়া ও কামরান মিয়াকে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক কিশলয় সাহা জানান, জাকির হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বিশ্বরোড হাইওয়ে থানার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থেকে বরযাত্রীদের নিয়ে একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-৩১-৯২২৬) ঢাকার মহাখালী যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে সিলেটগামী এনা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের সাত যাত্রী নিহত হন। খবর পেয়ে স্থানীয় জনগণ, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল ও হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। বর আবু সুফিয়ানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বাসটিকে আটক করা হলেও এর চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছে।

গতকাল সন্ধ্যায় রূপসপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত আবু সুফিয়ানের মা জরিনা বেগম মাতম করতে করতে বলছেন, তিন ছেলের মাঝে সে ছিল সবার বড়। বিয়ে করে ঘরে ফিরে আনন্দ করার কথা ছিল। এ আনন্দ শোকে পরিণত হলো। জরিনা বেগমের মতো বাকি ৪ পরিবারের স্বজনদের কান্নায় উপস্থিত লোকজনরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

গ্রামবাসী একই কবরস্থানে একসঙ্গে আটটি কবর খুঁড়ে প্রস্তুত করে রেখেছেন। মাইকে প্রচার করা হচ্ছে জানাজার সময়ের ঘোষণা। ব্রা?হ্মণবাড়িয়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ৮টি মরদেহ নিয়ে রওনা দিয়েছেন স্বজনরা। এ দিকে গোটা কমলগঞ্জে এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে শত শত মানুষ ছুটে যাচ্ছেন শোকাহত রূপসপুর গ্রামে। মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে মোবাইল ফোনে মুন্সীবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় মেম্বার আবুল মিয়া বলেন, রাত সাড়ে ১০টায় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাসিখুশিতে ভরপুর গ্রাম একটি দুর্ঘটনায় এখন কান্নায় ভরে গেছে।