বিশ্ব নারী দিবসে আমার ভাবনা!

0
1404
blank
blank

শিব্বির আহমদ ওসমানী : নারী শব্দটিতে একটা মায়া মায়া ভাব আছে। নারী’র প্রতি শব্দ আমার কাছে মায়া, মমতা ও ভালোবাসা মনে হয়। নারী বলতে হৃদয়ে একটা পরম অনুভূতি অভিভূত হয়। মানব জাতির বিস্তার ঘটে নারীকে দিয়েই। নারীর মাধ্যমে মানব সভ্যতার সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা যখন হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন তখন তাঁর একাকিত্ব দূর করতে ও মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটাতে একজন মহীয়সী নারী সৃষ্টি করেন। তিনিই হলেন আমাদের মা হযরত হাওয়া (আঃ)। তিনি হলেন প্রথম নারী ও প্রথম মা। তাদের থেকেই নারী-পুরুষে ভরপুর তামাম পৃথিবী।

১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৮ মার্চ-কে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তা পালন করা হচ্ছে ১৯৯১ সাল থেকে। নারী তার ন্যায্য অধিকার অর্জনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এ স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু এর প্রায় পনেরো শত বছর পূর্বেই ইসলাম নারী জাতীকে সম্মানিত করেছে। সমান মর্যাদা দিয়েছে।
জাহেলিয়াতের যুগে যখন কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়াকে অপমানের বলা হতো তাখন ইসলাম কন্যা সন্তানের জন্মকে বলল ‘সুসংবাদ’। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, “তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের ‘সুসংবাদ’ দেয়া হয় তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। সে এ সুসংবাদকে খারাপ মনে করে নিজ সম্প্রদায় থেকে লুকিয়ে বেড়ায় (এবং চিন্তা করে ) হীনতা স্বীকার করে তাকে নিজের কাছে রেখে দেবে,নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। কত নিকৃষ্ট ছিল তাদের সিদ্ধান্ত।” (সূরা নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)।
নারীদের প্রতি উত্তম আচরণের ব্যাপারে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতেন। তিনিই (সাঃ) পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নারীর উত্তরাধিকার কায়েম করেছেন। বস্তুত কুরআন করিমের মাঝেই ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদেরও সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। একইভাবে মায়েদের, স্ত্রীদের, কন্যাদের, স্বামীদের সম্পত্তির এবং বিশেষ অবস্থায় বোনদের-ভাইদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইসলামের পূর্বে পৃথিবীর বুকে আর কোন ধর্মই এভাবে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেনি।
নারী হলেন মায়ের জাতি। যে মায়ের গর্ভ থেকে আমাদের জন্ম সে মায়ের জাতিকে যদি মর্যাদা না দেয়া হয় তাহলে তা হবে কলঙ্কজনক। নারী ও পুরুষকে সমঅধিকার দিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। কোন সমাজ ও রাষ্ট্র কতটা সভ্য বা উদার তা নির্ভর করে সেখানকার নারীদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থানের উপর।
নারী আমার মা, আমার বোন, আমার স্ত্রী, আমার সহকর্মী। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মানে তাদের প্রত্যেককে যথাযথ সম্মান এবং মর্যাদা দিতে হবে। বিশ্ব নারী দিবসে সকল নারীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

(লেখক : শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।)