বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে রায় লিখে দিয়েছে সরকার: রিজভী

0
499
blank

ঢাকা: ‘বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে রায় লিখে দিয়েছে সরকার, যার প্রস্তুতি নিতেই সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে ডিএমপি’। এই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

এর আগে ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সন্ধান দাবি করেন রিজভী। তাকে আটক করা হলে বা না হলেও অবস্থান পরিষ্কার করতে বলেন তিনি।

রিজভী আরো বলেন, মঙ্গলবার ভোরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর থেকে মালিবাগের বাসায় ফেরার পথে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। সোহেল কোথায় আছে, কিভাবে আছে কেউ জানে না। কেউ বলছে তাকে মালিবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কেউ বলছে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে এখন পর্যন্ত বিএনপির ১১০০ শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অসত্য মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান রিজভী। সেই সঙ্গে পুলিশের হামলায় যেসব নেতাকর্মী আহত হয়েছেন তাদের সুস্থতাও কামনা করেন তিনি।

রিজভী আরো বলেন, গতকাল বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার জিয়ারতের জন্য সিলেটে যান। এটি ছিল তাঁর সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত সফর, মাজার জিয়ারত, যা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম জিয়া দেশের যে জেলাতেই যান না কেন, পথিমধ্যে হাজার মানুষ তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর সিলেট যাবার পথে অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষমাণ বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় অঙ্গসংগঠনের যৌথ আক্রমণে এক বিভিষিকাময় পরিস্থিতির সূচনা হয়। সরকারি বাহিনীগুলোর আক্রমণে বিএনপি নেতাকর্মীদের ক্ষমতবিক্ষত করা হয়, মৃত্যু ভয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে কেউ পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলে তাকে টেনে হিঁচড়ে আটক করে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণতন্ত্রশূন্য দেশে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনকে আটকিয়ে রাখতেই পুলিশকে ক্ষমতাবান করা হয়েছে। আর পুলিশ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে সরকারের নিষ্ঠুর শাসনের সঙ্গী হিসেবে অমানবিক নিপীড়ন যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন নৃশংসতা নয়, ৮ ফেব্রুয়ারিতে সরকারপ্রধানের ইচ্ছে পূরণ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেপরোয়া উন্মত্তায় বিএনপির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কিন্তু সরকার মনে হয় রায় নির্ধারণ করে রেখেছে বলেই প্রতিক্রিয়ার অজানা আতঙ্কে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর বুলডোজার চালাচ্ছে।

এর আগে সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর মালিবাগ গোলবাগ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। তবে গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ এলাকা থেকে বিএনপির এই নেতাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু।

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু আরো জানান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন সোহেল। পথে মালিবাগ থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে পরিবারের সদস্যরাও তার অবস্থান জানাতে পারছেন না। আমরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে: রিজভী
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেনে, গত ৫ দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে পাঁচ শতাধিক বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

তিনি বলেছেন, শ্রাবণের ধারার মতো গ্রেফতারের ধারা বয়ে যাচ্ছে, তৈরি করা হচ্ছে ভীতিকর পরিবেশ। গত পাঁচ দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার হয়েছে। সরকারের অংঙ্গসংগঠন হিসেবে কাজ করছে পুলিশ।

রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, সরকার দুরন্ত গতিতে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বেপরোয়া গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীদেরকে গোয়েন্দা পুলিশ আকষ্মিক ঝাপটা মেরে তাদের আটক করছে। গতকাল লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা চলাকালে ও সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পর রাস্তা থেকে প্রায় ৩৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে। গত ৫ দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় ৫০০’র অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন-গণগ্রেফতার নয় সন্ত্রাসী ধরা হচ্ছে, পুলিশের প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই-দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, ছাত্র, যুবক ও মহিলাসহ বিএনপি ও বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মীদেরকে ধরার জন্য চিরুনী অভিযান, আটক ও বাসায় বাসায় হামলার পরও ভালোবাসা বাড়ছে? গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার কথা না হয় বাদই দিলাম। হায় সেলুকাস! সরকারের অঙ্গ সংগঠনের ভূমিকা পালন করেছে বলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের প্রতি মানুষের ভালোবাসার কথা বলছেন।