বেসরকারি হাসপাতাল, কতটুকু সেবা-কতটুকু ব্যবসা?

0
667
blank

গোলজার আহমদ হেলাল: অনেক আগেই বলা হয়েছিল,বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে এনে সেনাবাহিনীর উপর পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করতে। এখনো সময় আছে।ভেবে দেখুন।

দেশের সামরিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ তুলছে না।যত্তো সব অভিযোগ সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে।যাদের বড় কর্তা সবাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সরকারী হাসপাতাল গুলোর বিরুদ্ধে পেনিক তৈরী করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক আর হাসপাতালগুলো বরাবর ব্যবসা করে আসছিল।এই যাত্রায় মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে মুনাফালোভী মাড়োয়ারি গোষ্ঠীগুলো আর পেরে উঠতে পারে নি।তাই তারা চিকিৎসাই বন্ধ করে দিয়েছে।

সরকারী,বেসরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আর অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক অধ্যুষিত এই সিলেট নগরীতে ছয়টি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে যখন রোগীবাহী গাড়িতে প্রাণ হারাতে হয়,চারটি হাসপাতাল ঘুরে যখন চিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে পুত্রের কোলে পিতার মৃত্যু কিংবা স্ত্রীর কোলে স্বামীর মৃত্যু ঘটে।তখন চিকিৎসা সেবার নামে এ সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার অসারতাই প্রমাণিত হয়।

বাংলাদেশের চিকিৎসকরা মরণপণ সংগ্রাম করে মহামারীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনো রোগীর পাশে আছে।সন্দেহ নাই।কিন্তু রোগ ও রোগী
ব্যবসায়ীরা এখনোও তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে মানবতার পাশে দাঁড়ায় নি।এর দায় কি সবাস্থ্য সেবা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এড়াতে পারবে?

আমরা দেখেছি,সরকার প্রথম দিকে ব্যুরোক্র্যাটদের পরামর্শে হাসপাতাল ও চিকিৎসক দের জনগণ কে চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যাপারে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল,তা আবার খুব অল্প সময়েই বাতিল করতে হয়েছে।কেন? কারণ এই প্রজ্ঞাপন কিছুটা হলেও ছিল উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সরকার তা বুঝতে পেরেছিল।বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার এসোসিয়েশন ও বিএমএ র বিবৃতিতেই তা বাতিল করতে হয়েছে।
স্পষ্টত এখানে চিকিৎসকদের অবমুল্যায়ন ও আত্মসম্মানে আঘাত আনা হয়েছিল।তাদেরকে প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের লাঠির ভয় দেখানো হয়েছিল এবং চিকিৎসা না পেলে জনগণ কে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিতে এক ধরনের উস্কানি ছিল।এই যে সমন্বয়হীনতা এটা সবাস্থ্য সেবা খাতের ভগ্ন এবং রুগ্ন দশার খন্ডিত এক চিত্র।

প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে মানুষের মৌলিক চাহিদা(basic needs) গুলো নিয়ে ব্যবসা করতে নিষেধ আছে।এগুলো সেবাখাত।চিকিৎসা মানুষের মৌলিক চাহিদা।এটি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা উচিত নয়।সিলেটের তিনটি ঘটনা প্রমাণ করে এতগুলো মানুষের ভীড়ে অমানুষ গুলোই প্রাইভেট হাসপাতাল আর ক্লিনিকের মালিক সেজে বসে আছে শুধু মুনাফালাভের জন্য।সরকারের উচিত ঐ বাতিল করা প্রজ্ঞাপন পুনরায় জারী করা।তবে চিকিৎসকদের নয় চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের দন্ড আরোপ করা,কিংবা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা সহ কঠোর বিধিনিষেধ সম্বলিত নির্দেশনা জারী করা।
আসুন,আমরা মানুষ হই,মানবিকতা কে প্রাধান্য দেই।রোগাক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে কার্পণ্যতা যেন না করি।আর সেই সাথে মুনাফাখোরী অতিমাত্রায় ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি পরিহার করে সেবার পথকে সহজলভ্য ও সুগম করি। জনগণ ও প্রশাসন একসাথে এখন জিরো টলারেন্স গ্রহণ করি।
লেখকঃ সাংবাদিক।