ব্যাংকের রিজার্ভ সরাতে এক বছর ধরে পরিকল্পনা

0
483
blank

নিউজ ডেস্ক: এক বছর ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সরানোর পরিকল্পনা চলছিল। এমনই সন্দেহ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গোয়েন্দাদের। তারা বলেছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই ব্যাংকের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শাখার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়া হয় বছরখানেক আগে। একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ওই দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ওই শাখায় কর্মরত থাকলে এই বিপর্যয় থেকে হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংক রক্ষা পেতো। এ দিকে সিআইডি গতকাল সরকারি ছুটির দিনেও বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন এবং কিছু আলামত জব্দ করেন বলে জানা গেছে। এ দিকে ঘটনা তদন্তে আজ শুক্রবার এফবিআই ঢাকায় আসছে বলে জানা গেছে।
ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্ট। ফরেক্স বিভাগটিই হলো রিজার্ভের রক্ষক। কোথায়, কোন ব্যাংকে কত টাকা রিজার্ভ রাখা হবে, কোত্থেকে টাকা আসবে, কোথায় যাবেÑ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে এই বিভাগ। এই বিভাগই জানে কোন ব্যাংকে কত টাকা রিজার্ভ রাখা আছে। এদের দায়িত্বও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ব্যাংকের প্রভাবশালীরাই শুধু এসব বিভাগের দায়িত্বে থাকেন। আর অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগটি অনেকটা ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ দু’টি বিভাগই অর্থ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক সূত্র জানায়, এই বিভাগ দু’টির সহায়তা ছাড়া কোনোভাবেই রিজার্ভ চুরি সম্ভব নয়। বছরখানেক ধরেই এই বিভাগ দু’টি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাদের একজনের অনুগত কিছু লোক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কাদের কাদের গুরুত্বপূর্ণ ডেস্ক থেকে বদলি করা হয়েছে, সেখানে কাদের বসানো হয়েছে এসব খতিয়ে দেখলেই রিজার্ভ চুরির বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ওই কর্তারা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই ওই ব্যক্তিদের ফরেক্স রিজার্ভ ও অ্যাকাউন্টস বিভাগ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এই সরিয়ে দেয়ার পেছনে কার বা কাদের হাত রয়েছে তা-ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে ব্যাংকের ওই কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্দেহ, ব্যাংকের রিজার্ভ সরানোর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ওই কর্মকর্তাদের পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে দেয়া হয়।
এ দিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারীরা গতকাল ছুটির দিনেও বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছিলেন। গতকাল দুপুরের দিকে সিআইডির একটি টিম বাংলাদেশ ব্যাংকে যান। সেখানে তারা কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন এবং কয়েকটি কক্ষ ঘুরে দেখেন। তারা কিছু আলামতও জব্দ করেছেন। সিআইডির ডিআইজি সাইফুল আলম গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ ও সিকিউরিটি সার্ভিল্যান্স ইকুইপমেন্ট জব্দ করা হয়েছে।
এ দিকে এই ঘটনা তদন্তে আজ শুক্রবার এফবিআই সদস্যরা ঢাকায় আসছেন বলে জানিয়েছে সিআইডির একটি সূত্র। তারা দুপুরের দিকে সিআইডির তদন্ত টিমের সাথে কথা বলবেন। মূলত এই ঘটনা তদন্তে সিআইডিকে সহায়তা করবে এফবিআই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের ঘটনা জানাজানির এক সপ্তাহ পর গত ১৫ মার্চ ঢাকা মেট্রোপলিটনের মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো: জোবায়ের বিন হুদা বাদি হয়ে মানিলন্ডারিং আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর-১৩। মামলায় আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ জানায়, মানিলন্ডারিং আইনের মামলাগুলোর তদন্ত সাধারণত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) করে থাকে। ওই দিনই মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ৪সহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৪ ধারায় ও ৩৭৯ ধারায় এ মামলা গ্রহণ করা হয়। লোপাট যাওয়া অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১০১ মিলিয়ন ডলার।