ভিসা জটিলতায় ৮২ হজযাত্রীর ফ্লাইট মিস

0
542
blank

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনি তুলে যে সময়ে মক্কার কালো গিলাফের সামনে দাঁড়িয়ে হাজীদের চোখের পানি ফেলার কথা সেই সময়টাতে এখন ঢাকার আশকোনার হজ্জক্যাম্পে বসে রাত দিন কাঁদছেন ৮২ হজযাত্রী। দূতাবাসের সার্ভারে জটিলতার কারণে তারা সঠিক সময়ে ভিসা হাতে পাননি। ফলে বিমানের নির্ধারিত ফ্লাইট মিস করেছেন তিনটি এজেন্সির এই ৮২ হজযাত্রী। ফলে তাদের হজযাত্রাই এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

গত ১৪ এবং ১৫ জুলাই সৌদী দূতাবাসের অনলাইন সার্ভারের জটিলতায় সঠিক সময়ে ভিসা হাতে না পেয়ে বিমানের দুটি ফ্লাইট মিস করেছেন এই হজযাত্রীরা। দু’দিন পরে মঙ্গলবার ভিসা হাতে পাওয়ার পর এখন অন্য ফ্লাইটেও কোনো সিডিউল পাচ্ছেন না তারা। ফলে কবে বা কোন ফ্লাইটে এই ৮২ হজযাত্রী মক্কায় যেতে পারবেন সেটিও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই।

বুধবার আশকোনাস্থ হজক্যাম্পে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল তিনটি হজ এজেন্সির মোট ৮২ জন হজযাত্রী বিলম্বে ভিসা পাওয়ার কারণে তারা বিমানের ফ্লাইট মিস করেছেন। নির্ধারিত ফ্লাইটে তারা হজে যেতে পারেননি। এর মধ্যে মিনার এয়ার ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং ১০৩০) তাদের ৬৭ জন হজযাত্রীর ভিসা দূতাবাসের সার্ভারের সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে অর্থাৎ নির্ধারিত ফ্লাইটের আগে হাতে পাননি। এই ৬৭ জন হজযাত্রীর যাত্রার নির্ধারিত ফ্লাইট ছিল মঙ্গলবার বিজি ৩০৩৩ ফ্লাইটে।
এটি মঙ্গলবার সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটে ঢাকা ছেড়েছে; কিন্তু এজেন্সির পক্ষ থেকে দূতাবাসে হজযাত্রীদের সব ধরনের কাগজপত্র সাবমিট করার পরেও সার্ভারে সমস্যার কারণে ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ের আগে ভিসা পাওয়া যায়নি। এদিকে বিমানের টিকিট আগেই কনফার্ম করার কারণে বিমানকেও নির্দিষ্ট ঐ ৬৭ টি আসন খালি নিয়েই মক্কার উদ্দেশ্যে উড়াল দিতে হয়েছে। ফলে এই হজযাত্রীরা মঙ্গলবার দুপুরের পরে যখন ভিসা হাতে পেয়েছেন ততক্ষণে বিমানের নির্ধারতি ঐ ফ্লাইটটি ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে।

অন্যদিকে এফ এম ট্রাভেলস নামের (হজ লাইসেন্স নং ৭৭৫) আরেকটি এজেন্সির ১১ জন হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক সময়ে সৌদী দূতাবাসে জমা না দেয়ার কারণে ঐ ১১ জন হজযাত্রীও নির্ধারিত ফ্লাইটের আগে ভিসা পাননি। একই ভুলে সাবিব ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস নামের আরেকটি এজেন্সির (লাইসেন্স নং ১৩৮৪) মোট ৪ জন হজযাত্রী নির্ধারিত ফ্লাইটের আগে ভিসা হাতে পাননি। এই দুই এজেন্সির মোট ১৫ জন হজযাত্রীর যাত্রার তারিখ ছিল বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টায়; কিন্তু মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তারা ভিসা হাতে না পাওয়ায় বুধবার ভোরে বিমানের নির্দিষ্ট ফ্লাইটটি (বিজি ৩০৩৫) ঐ ১৫টি আসন খালি নিয়েই মক্কার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে।

ভিসা জটিলতায় বিমানের ফ্লাইট মিস করা তিনটি এজেন্সির এই ৮২ জন হজযাত্রী এখন আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পেই অবস্থান করছেন। অনেকেই কান্নাকাটিও করছেন বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। হজক্যাম্পের ডরমেটরিতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও দুশ্চিন্তায় অনেকে না খেয়েই সময় পার করছেন। অবশ্য তাদেরকে অন্য একটি বা দুটি ফ্লাইটে মক্কায় পাঠানোর চেষ্টা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ঢাকা হজ অফিস।

আশকোনা হজ ক্যাম্পের পরিচালক (হজ অফিসার) মো: সাইফুল ইসলাম বুধবার দুপুরে নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা ফ্লাইট মিস করা হজযাত্রীদের অন্য কোন ফ্লাইটে মক্কায় পাঠানোর ব্যবস্থা করবো; কিন্তু বিষয়টি একটু কঠিন ও জটিল। কেননা সব ফ্লাইটেরই তো হজযাত্রীকে আগে থেকেই কনফার্ম। সবাইকে টিকিট দেয়া হয়েছে। এখন দেখতে হবে যদি অন্য কোনো ফ্লাইটের কোনো সিট ফাঁকা থাকে তাহলে হয়তো পর্যায়ক্রমে এই ৮২ জন হজযাত্রীকে পাঠানো যেতে পারে। তবে হজ অফিস বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলেও তিনি জানান। কোন হজযাত্রীর যাকে কোনো প্রকার কষ্ট বা দুর্ভোগ না হয় সেই চেষ্টাই হজ অফিসের পক্ষ থেকে আমরা করছি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর ব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ জানান, হজযাত্রীরা ফ্লাইট মিস করলেও এখানে বিমানের কোনো কিছুই করার নেই। কেননা বিমানকে একটি সিডিউল মেনেই ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়। আর ফ্লাইট মিস করা হজযাত্রীদের টিকিটের মূল্যে বা আর্থিক বিষটি নিয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।

তিনটি হজ এজেন্সির মোট ৮২ জন হজযাত্রীর বিমানের ফ্লাইট মিস করা এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়ে বুধকার হজ এজেন্সি’জ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিমের সাথে যোগাযোগ করেও টেলিফোনে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে হাব এর নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা মাহবুবুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, প্রথম অবস্থায় সার্ভারের জটিলতার কারণে ৬৭ জন হজযাত্রীর ভিসা না পাওয়ার বিষয়ে কারো কোনো কিছুই করার ছিল না। এখন ভিসা হয় অনলাইনে। যেখানে কাগজপত্র সাবমিট করার পর মাত্র ১২ ঘন্টায় ভিসা প্রসেসিং হয়ে যায় সেখানে মিনার এয়ার ট্রাভেলস ৭২ ঘন্টা চেষ্টা করেও ভিসা প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। এখন বিমান যদি আর্থিক বিষয়ে একটু ছাড় দেয় তাহলে এই ৬৭ হজযাত্রী আর্থিক জরিমানা ছাড়াই হজে যেতে পারবেন।

এদিকে বুধবার বিকেলে মিনার এয়ার ট্রাভেলস এর মালিক আনোয়ার হোসেন, এফ এম ট্রাভেলস এর মালিক আরাফাত হোসেন ও সাবিব ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস এর মালিক হাফেজ ইমান আলীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে বার বার চেষ্টা করা হলেও তারা কেউই ফোন ধরেননি।