মসজিদ-জুমার খুৎবা ও ওয়াজ-মাহফিল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিতে বিপরীত হবে: হেফাজত

0
464
blank

ঢাকা: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের নামে মসজিদ, জুমার খুৎবা ও ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হলে ফলাফল হিতে বিপরীত হতে পারে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীসহ হেফাজত নেতৃবৃন্দ এ হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

বিবৃতিতে হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, যুগযুগ ধরে ওলামা-পীর-মাশায়েখগণ মসজিদে জুমার খুৎবায় এবং ওয়াজ মাহফিলে কুরআন-হাদিসের আলোকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার, সুদ-ঘুষ, ব্যভিচার-অনাচারসহ মানুষকে যাবতীয় সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তির পথনির্দেশনা দিয়ে আসছেন। এদেশের কোনো আলিম কোনোকালেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে উস্কানি তো দূরের কথা ন্যুনতম প্রশ্রয় দেননি। বিগত দিনে জেএমবি কর্তৃক সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে দেশের হক্কানী ওলামায়ে কেরাম যে সর্বাত্মক  ও যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের বয়ান, বক্তৃতা-ওয়াজের মাধ্যমে খুনী, সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত, মাস্তান ও বিপথগামী লোকেরা হেদায়েত পেয়েছে এবং তারা শান্তি, নৈতিকতা ও সৎচরিত্রে ফিরে এসেছেন। কাজেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের নামে মসজিদ, জুমার খুৎবা ও ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণের দূরবিসন্ধি দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করবে না বরং সরকার ধর্মপ্রাণ ও শান্তিপ্রিয় জনগণ থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিপনার প্রকৃত কারণ এবং দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করার মতো মৌলিক কাজের দিকে মনোযোগ না দিয়ে গতানুগতিক ভাবে ইসলাম, আলিম-ওলামা ও মাদরাসা-মসজিদের দিকে আঙুল তোলা হলে হিতে বিপরীত হবার আশঙ্কা রয়েছে।
হেফাজত নেতৃবৃন্দ পুলিশ প্রধানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে আপনাকে বলতে চাই, যারা মিডিয়ায়, টকশো’তে, রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, মাদরাসা শিক্ষাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, আলিমসমাজকে বিদ্রুপ করে উস্কানি দিয়ে দেশের পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর মতো কাজ করে চলেছেন; তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার মতো কোনো কথা আপনার মুখে শোনা যায়নি। এতে  প্রমাণ হয় যে, কাউকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে, কারো কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা কখনও ন্যায্য ও সংগত নয়।

তারা বলেন, খুৎবা কিংবা ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণ নয়; যেসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, চরিত্র নষ্ট হচ্ছে, পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়ছে, সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত হচ্ছে এবং ঐশীর মতো প্রজন্ম সৃষ্টি হচ্ছে সেসব সন্ত্রাসের নিয়ামক মাদক, নগ্নতা ও বেহায়াপনার আয়োজনগুলো বন্ধ করুন। বিশেষ করে, দেশের বিভিন্ন শহরে কনসার্টের নামে যেসব উদ্দাম নৃত্য, অশ্লীল গান-বাদ্য, সুন্দরী প্রতিযোগিতা, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অশালীন ড্রামা প্রদর্শন, বিভিন্ন হলে-অভিজাত হোটেলে নানা রকম শো’ বন্ধ করুন এবং পলিটিকেল টেররিস্টদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিন। এদেশের আলিমসমাজ এক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা করবে।

হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, জুমার নামাযের সময় মসজিদে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করার জন্য আইজিপি’র নির্দেশ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মসজিদে জামাআতে নামায আদায়ে বাধা সৃষ্টি ও ভীত-সন্ত্রস্ত্র করবে। নিরাপত্তার অজুহাতে এ ধরনের অযৌক্তিক ও হঠকারী পদক্ষেপ নামাযের মতো পবিত্র ইবাদত থেকে মুসলমানদের বিরত রাখার হীন চেষ্টামাত্র। যা দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে কখনও কাম্য নয়। এবং এরুপ পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে আর কওমী মাদরাসা, আলিম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের সঙ্গে সরকারকে মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দেবে।

তারা আরো বলেন, সেদিন উক্ত অনুষ্ঠানে অখ্যাত, অপরিচিত ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিতর্কিত ধর্মীয় লেবাসধারী কতিপয় ব্যক্তি সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হবার সুযোগে কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা তাদের এসব বিভ্রান্তিকর ও হীনউদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আমরা সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাবো, দেশের ক্রান্তিকালে বিভেদ সৃষ্টি না করে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় সংকট মোকাবেলা করি।

বিবৃতিদাতারা হলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও দারুল উলুম হাটহাজারীর মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী, সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা শামসুল আলম, মাওলানা আবদুল মালেক হালিম, মাওলানা তাফাজ্জল হক হবিগঞ্জী, মুফতি মোজাফফর আহমদ, আল্লামা মুফতি আহমদুল্লাহ, মাওলানা আবদুল হামিদ পীর, মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, মাওলানা সালাহুদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ ইদরিস, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা মুহিবুল হক গাছবাড়ি ও মাওলানা নুরুল হক প্রমুখ।