মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বাড়ছে

0
521
blank
blank

মহিউদ্দিন অদুল: মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বাড়ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে। কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষ মানবাধিকারের বিষয়ে সচেতন হচ্ছে অভিযোগ বাড়া এটিও ইঙ্গিত করে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ) মো. শরীফ উদ্দীন বলেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়ছে। সাধারণ মানুষ
প্রায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে। কেউ খুন হলে তো পরিবার তা নিশ্চিত হতে পারে। কিন্তু কেউ গুম হলে তার পরিবারের সদস্যরা যে কী চরম অনিশ্চয়তার কষ্টে নিপতিত হয়, তা বলে বোঝানোর নয়।
তিনি বলেন, অনেক ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ আমাদের কাছে আসে না। তেমনি খুন-গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারাধীন ঘটনা বা বিষয়গুলোও আমরা আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে এখতিয়ারে নিতে পারি না। তারপরও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অতীতের তুলনায় সম্প্রতি বেড়েই চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেশে প্রশংসিত আইনি বিধান থাকা সত্ত্বেও আইনের শাসনের অভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতার জন্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (জামাকন) সূত্রে জানা যায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় তদন্ত ও প্রতিকারের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি এ সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় স্বপ্রণোদিত হয়েও অভিযোগ গ্রহণ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ওই সংস্থার কার্যালয়ে আসা অভিযোগের সংখ্যা এর আগের বছরগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাসহ প্রকাশিত পূর্ববর্তী বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনগুলোর তুলনামূলক চিত্রে দেখা গেছে, গত বছর সংস্থাটির অভিযোগ গ্রহণের সংখ্যা এর আগের ৫ বছরের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৫ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ৫২৪টি অভিযোগ গৃহীত হয়েছিল। এর মধ্যে ওই বছর ২৪১টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়। সে বছর অনিষ্পন্ন রয়ে যায় ২৮৩টি অভিযোগ। ২০১৪ সালে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৬৩৫টি। যার মধ্যে ২৭২টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছিল। আর অনিষ্পন্ন ছিল ৩৬৩টি অভিযোগ। ২০১৩ সালে গৃহীত হয়েছিল ৪৩৩টি অভিযোগ। যার মধ্যে ৩২৫টি নিষ্পত্তি হয় ও ১০৮টি অনিষ্পন্ন রয়ে যায়। ২০১২ সালেও অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৬৩৫টি। তবে ওই বার নিষ্পত্তির সংখ্যা ছিল বেশি। ৩৯২টি। আর অনিষ্পন্ন ছিল ২৩৬টি। তার আগের বছর অভিযোগের সংখ্যা ছিল এর অর্ধেকের কম। ২৩৩টি। এর মধ্যে ২১১টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছিল। অনিষ্পন্ন থাকে ২২টি অভিযোগের।
জামাকন সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে এর আগের ৫ বছরের অভিযোগের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। ওই বছর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ৬৬৫টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে। অভিযোগের মধ্যে ৫টি গুম, ২টি বাড়ি থেকে নিখোঁজ, ২০টি হত্যা, ২টি বিচারবহির্ভূত হত্যা, ৮টি ধর্ষণ, ১২২টি নির্যাতন, ২টি শিশু নির্যাতন, ৫টি যৌন হয়রানি, ২২টি পারিবারিক সহিংসতা, ২টি বাল্যবিবাহ, ৪টি নির্বিচারে আটক, ১০টি কর্তব্যে অবহেলা, ৯টি শারীরিক শাস্তি, ৫টি হেফাজতে নির্যাতন ও ১টি মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া মানবপাচারে ৭, প্রবাসী শ্রমিকদের বঞ্চনায় ৩, চাকরি সংক্রান্ত ৫৬, যৌতুকে ২১, অপহরণে ১০ ও অন্যান্য ৩৪৫টি অভিযোগ গৃহীত হয়। গত বছর গৃহীত ৬৬৫টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮৬টির। আর অনিষ্পন্ন ছিল ৪৭৯টি অভিযোগ। এর বাইরে মানবাধিকার কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে গ্রহণ করে ২৭টি অভিযোগ। এ সংখ্যাও আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি। তবে ওই বছর অভিযোগের সিংহভাগই অনিষ্পন্ন ছিল।
মানবাধিকার কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাস্তব পরিস্থিতি এর চেয়ে ভয়াবহ। প্রকৃতপক্ষে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ভিকটিমদের অতি অল্প কিছু অভিযোগ কমিশনে আসে। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হওয়ার পর প্রথমেই ভিকটিমরা থানা-কোর্টে গিয়ে মামলা করে। আর আইনি বাধ্যবাধকতায় বিচারাধীন কোনো বিষয় বা ঘটনার অভিযোগ মানবাধিকার কমিশনে গৃহীত হয় না। এখতিয়ারবহির্ভূত হওয়ায় মানবাধিকার কমিশনও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু ঘটনার অভিযোগ গ্রহণ করে না। এর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আসা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও। অসচেতনতার কারণেও প্রায় ঘটনা কমিশনে আসে না।