মানুষ বেগম জিয়াকে কী বললেন?

0
832
blank

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক: চৌদ্দগ্রামের স্কুলশিক্ষক কাজী আবদুুল ওয়াহিদ আকুতি জানালেন দেশনেত্রী বরাবর : ‘অপশাসনের শৃঙ্খল থেকে আমরা মুক্তি চাই।’ সীতাকুণ্ডের একটি বাজারের দোকান মালিক সমিতির সেক্রেটারি কেরামত আলী জোরে জোরে ঘোষণা করলেন : ‘প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসান চাই।’ দোহাজারীর পোড়খাওয়া রাজনৈতিক কর্মী সুলতান উদ্দিন নিবেদন করলেন, ‘মাননীয় দেশনেত্রী, আমরা আপনার সাথে আছি, আপনি একলা নন।’ কক্সবাজার সদরের ভ্যানগাড়িচালক কালা মিয়া দেশনেত্রী বরাবর আবেদন করলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের সৈনিক, আমাদের ব্যবহার করুন।’ কথাগুলো ছিল গণমানুষের। কথাগুলো কখন বলা হলো? বেগম জিয়া যখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার গিয়েছেন এবং কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা ফেরত এসেছেন, পথের মধ্যে মানুষ এই কথাগুলো বলেছে। এই কথাগুলোর মূল্যায়ন সময়ের দাবি। আমি কথাসাহিত্যিক নই; রম্য রচনাও লিখতে পারি না। যেটা দেখি যেটা বুঝি, তা নিজের ভাষায় প্রকাশ করতে পারি; এটুকু সামর্থ্য মহান আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। শোকর আলহামদুলিল্লাহ।

খ্রিষ্টীয় বছর ২০১৭ শেষ হওয়ার পথে। আর মাত্র ৫৩ দিন বাকি। চলমান নভেম্বর মাসটি ঘটনাবহুল; গতকাল ৭ নভেম্বর ছিল সিপাহি জনতার বিপ্লব দিবস তথা জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস; এ প্রসঙ্গে বুধবার ১ নভেম্বর এই পত্রিকাতেই কলাম লিখেছি। আগে আগে লিখেছিলাম, যেন চিন্তার খোরাক হয়, আলোচনার খোরাক হয়, সমালোচনার খোরাক হয়। চিন্তার খোরাক হয়েছে, আলোচনার খোরাক হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে টেলিভিশন টকশোতে অংশগ্রহণ করেছি এবং জাতির সামনে এই তারিখটির গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্য তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভাতেও অংশ নিয়েছি; ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন ছিলেন প্রধান অতিথি, সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও শিরীন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও কথাগুলো বলেছি।

যেই বহুদলীয় গণতন্ত্র ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে নিহত হয়েছিল, সেটাকে পুনরুজ্জীবিত করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করেননি; সৈনিকেরা এবং জনগণই তাকে দেশের অভিভাবকের আসনে বসিয়েছিলেন। ওই সৈনিকরা সজাগ ছিলেন, সচেতন ছিলেন, দেশ নিয়ে ভাবতেন, বন্ধু চিনতেন শত্রু চিনতেন; তাদের বহুসংখ্যক এখন পৃথিবীতেই নেই; জীবিত এবং মৃত সবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা থাকল। আজ থেকে ১৩ দিন পর ২১ নভেম্বর হবে সশস্ত্রবাহিনী দিবস। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আসি আসি করছে। ডিসেম্বর আসা মাত্রই পুরো জাতির মনমানসিকতা উদ্বেলিত হয়ে উঠবে। কারণ, ডিসেম্বর মানেই বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালের স্মৃতি সব সময় মনের মধ্যে ভাস্বর থাকে; ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখ বিকেল সাড়ে ৪টার পরপরই হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী সারেন্ডার করেছিল; একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যেই আমরা ঢাকা মহানগরের তৎকালীন গুলিস্তান নামে পরিচিত এলাকায় একমাত্র স্টেডিয়ামে এসে উপস্থিত হয়েছিলাম।

যদি দেশনেত্রী আবার রাজপথে যান, কোনো সফরে যান ডিসেম্বর মাসে, তা হলে পথের পাশে দাঁড়ানো শত-সহস্র মানুষ বলবে একটি বেদনার কথা, একটি দুঃখের কথা, একটি আত্মঘাতের কথা। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখ কী রকম সুকৌশলে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল আতাউল গণি ওসমানীকে রেসকোর্সের সারেন্ডার অনুষ্ঠান থেকে দূরে রাখা হয়েছিল; কী রকম সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়কে বাংলাদেশের মানুষের বিজয়কে আরেকজনের নামে চালিয়ে দেয়ার প্রয়াস চলেছিল।

এখন আমরা আজকের আলোচনায় ফিরে যাই, যার সূত্রপাত এই কলামের প্রথম অনুচ্ছেদে করেছি। গত মাসের শেষ চারটি দিনে বাংলাদেশের বড় খবর ছিল, বেগম জিয়া সদলবলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গা অঞ্চল সফর; ঢাকা থেকে যাওয়া এবং ঢাকায় ফেরত আসা; পথিমধ্যের ঘটনাবলি। ১ নভেম্বর বড় খবর ছিল, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের উচ্চারিত একটি কথা। তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতার আগে জিয়াউর রহমানের নাম শুনি নাই।’ এসব নিয়ে দুই-চারটি কথা আজকে লিখব। যেমনটি বলেছিলাম, যতটুকু বুঝলাম, ততটুকুই প্রকাশ করতে চাই।

বেগম জিয়া ঢাকা থেকে বের হয়েছিলেন রোহিঙ্গা অঞ্চল সফর করার জন্য। আড়াই মাস আগের কথা; আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহের কথা। মিয়ানমারের বর্বর সামরিক বাহিনীর আচমকা আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে আসা শুরু করেছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তাদের বাংলাদেশ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে; তাদের অনুপ্রবেশকারী ঘোষণা করে; অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য কড়া নির্দেশ জারি করে। সেই সময় সুদূর লন্ডন থেকে বেগম জিয়া বিবৃতি দিয়েছেন, কথা বলেছেন এবং আহ্বান জানিয়েছেন আমরা বাংলাদেশীরা যেন ১৯৭১ সালকে স্মরণ করি এবং রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করার সুযোগ দেই যেন তাদের জীবন বাঁচে। রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়ে সেখানে তিনি সরকারকে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন; বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরালো এবং চোখালো করার তাগাদা দিয়েছেন এবং মিয়ানমারকে জানিয়ে দিয়েছেন, এসব বর্বরতার শাস্তি পেতে হবে।

বেগম জিয়া গিয়েছেন গাড়িবহরে করে। দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে থাকা কষ্টকর। বেগম জিয়া কষ্ট স্বীকার করেই কাজটি করেছেন; তাকে অভিনন্দন! তিন মাস দেশের বাইরে ছিলেন, এসেই জনগণের কাছে গেলেন; তাকে অভিনন্দন! বেগম জিয়াকে দেখার জন্য মানুষ উদগ্রীব ছিল; বেগম জিয়াকে সম্মান জানানোর জন্য মানুষ আগ্রহী ছিল। তাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার দুই দিনের ঘটনা, লাখ লাখ মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। সেই জনগণকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য যথেষ্ট ভাষা আমার জানা নেই। বিশেষ করে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলায় তিনি রাত কাটিয়েছেন; চট্টগ্রামবাসী ও কক্সবাজারবাসীর পক্ষ থেকে অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা ঐতিহাসিক ছিল। দুঃসংবাদ হলো, পথের মধ্যে বেগম জিয়ার গাড়িবহরে আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু গাড়িবহর বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েনি; রাস্তার পাশের জনগণও সাহস ও ধৈর্যহারা হননি। ২০ দলীয় জোটের একটি শরিক দলের প্রধান হিসেবে গত ছয় বছরে বহুবার দেশনেত্রী বেগম জিয়ার সাথে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে বিভিন্ন জেলায় গিয়েছি। রাস্তার পাশে মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। কিন্তু আমি এবার যেটা বুঝলাম, তা অভূতপূর্ব, তা অশ্রুতপূর্ব।

মানুষ বেগম জিয়াকে ভালোবাসেন। তাই মানুষ উদগ্রীব হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। লাখ লাখ মানুষ বেগম জিয়াকে দেখেছেন, কারণ বেগম জিয়া একজন। বেগম জিয়া লাখ লাখ মানুষকে আলাদা আলাদা দেখতে পারেননি। কারণ, তা সম্ভব নয়। কিন্তু সেই লাখো মানুষের চোখের ভাষা কী ছিল? সেই লাখো মানুষের মুখের ভাষা কী ছিল? সেই লাখো মানুষ বলতে চেয়েছেন যে, আমরা আপনার সাথে আছি। আপনার জন্য রাস্তার পাশে যেমন দাঁড়াতে পারি, রাস্তার মাঝখানেও দাঁড়াতে পারি। আপনি এসেছেন আপনাকে দেখলাম, নিজের চোখকে বিশ্বাস করলাম এবং নিজে এসে দাঁড়ালাম। আপনিই যদি বলেন, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াও তাহলে মাঝখানে দাঁড়াব। আপনি যদি বলেন, মাঝখানে বসে থাকো, তাহলে বসে থাকব। কিন্তু আপনাকে বলতে হবে। আপনি সরাসরি আমাদের সবাইকে বলতে পারবেন না, তাই বলার মতো করে বলতে হবে, কথা যেন আমাদের কাছে পৌঁছায় তেমন করে বলতে হবে।

মানুষ বলতে চায়, বেগম জিয়ার ওপর যে অত্যাচার রাজনৈতিক সরকার করছে, মানুষ তার প্রতিবাদ করে। মানুষ বলতে চায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে, মানুষ বেগম জিয়ার সাথে আছে। মানুষ বলতে চায়, তারা গণতন্ত্রের সৈনিক, তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সৈনিক, তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সৈনিক, তারা রাজপথের সৈনিক। অতএব, মানুষ বলতে চায়, মানুষকে রাজপথে নেতৃত্ব দিতে হবে। মানুষের চেহারায় ফুটে ওঠা অভিব্যক্তি ছিল এই- আমাদের ওপর ভরসা রাখুন, আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আমরা শুধু একটা দিন আর একটা রাত চাই। ভোট দেয়ার দিনটি এবং তার আগের রাতটি। আগের রাতে যেন শান্তিতে ঘরে থাকতে পারি এবং দিনে যেন লাইন ধরে আমার ভোট আমি দিতে পারি। তবে সেই ভোটের রাত এবং ভোটের দিন তো আসতে এখনো দেরি আছে। আমরা অপেক্ষা করব; আপনার নেতৃত্বের অপেক্ষা করব। আপনাকে নিয়ে তারা কী করে দেখব। মামলা হামলা দিয়ে তারা আমাদের নেত্রীকে কাবু করতে চায়; আমাদের নেত্রী কাবু হবে না, আমাদের নেত্রী আপসহীন।

আমাদের নেত্রী বন্ধুবিহীন নন। আমাদের নেত্রীর চতুর্পার্শ্বে জ্ঞানী বন্ধু আছে। আমাদের নেত্রী গভীরভাবে চিন্তা করবেন, বুদ্ধি নেবেন, পরামর্শ নেবেন অথবা নিজেই সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা তার অপেক্ষায় থাকব। আমাদের নেত্রী পোড়খাওয়া নেত্রী। আমাদের নেত্রী আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে এসেছেন। আমাদের নেত্রী পথের কাঁটা চেনেন। আমাদের নেত্রী মধুর মতো দেখতে লাল রঙের বিষ চেনেন। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস, আমাদের নেত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে হ্যাঁ, মাননীয় দেশনেত্রী, মাননীয় আপসহীন নেত্রী, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমরা আপনার সাথে আছি। আমাদের ব্যবহার করুন। আমরা বাংলাদেশের মানুষ। ৯ মাসের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করি, আমরা শহীদ জিয়াকে শ্রদ্ধা করি। শহীদ জিয়ার দল বিএনপি। সাথে আরো আছে, আপনার জোটে এবং আপনার দলে শহীদ জিয়াকে ভালোবাসেন এমন মানুষ হাজারো আছে, কোটি কোটি আছে।

মাননীয় নেত্রী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সৈনিক আমরা। আমরা আপনার থেকে শুনেছি, শিখেছি। অনুভব করছি। সেই স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে, বাংলাদেশবান্ধব সরকার লাগবে; বিদেশনির্ভর সরকার নয়। তাই লাগবে গণতন্ত্র; তাই লাগবে নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আমরা আপনার সাথে আছি। আপনি কিভাবে নির্বাচন চান, সেটি আমাদের লাখো কণ্ঠে, আমাদের কোটি কণ্ঠে উচ্চারিত হবে। টেলিভিশনের পর্দার উইপোকারা আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারবে না। আপনি শুধু জানুন যে, আমরা আপনার সাথে আছি। ৯ বছর প্রায় শেষ, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন বাড়ছে তো বাড়ছেই। হ্যাঁ, আমাদের উঠানেও ভুলভ্রান্তি ছিল, আমাদের দেউড়ি ঘরেও ভুলভ্রান্তি ছিল, আমাদের পত্রিকার কলামেও ভুলভ্রান্তি ছিল, আমাদের ঘোষণাতেও ভুলভ্রান্তি ছিল। এগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুলভ্রান্তি ছিল। সে জন্যই আবার নিবেদন করছি, আপনি জেনে রাখুন আমরা আপনার সাথে আছি; এবার আর কাউকে ছোট ভুলও করতে দেবো না, আমরা সজাগ আছি। যত দিন ভোটের রাত আর ভোটের দিন না আসছে, তত দিন কী করব? প্রশ্নটা এই কলামের লেখক ইবরাহিমের না। প্রশ্নটা জনগণের মনের। এর উত্তর আগামী দিনের জন্য থাক।

প্রত্যেক সপ্তাহের বুধবারে কলাম লিখি নয়া দিগন্ত পত্রিকায়। আজকের কলামটি অতীতের তুলনায় দৈর্ঘ্যে ছোট হবে। ইচ্ছাকৃতভাবেই ছোট রাখলাম। এটাই শেষ অনুচ্ছেদ। এই অনুচ্ছেদে ওই কথাটি আনতে চাই, যেটি বর্তমান সরকারের অন্যতম মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন। তিনি জিয়াউর রহমানের নাম শোনেননি, তিনি জিয়াউর রহমানকে চিনতেন না। জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পেয়েছিলেন ১৯৫৫ সালে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যত বাঙালি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান অবশ্যই জ্যেষ্ঠদের একজন। যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অবশ্যই তিনি জ্যেষ্ঠদের একজন ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো মানব জাতির ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে নিবন্ধন করেছে; এটি অত্যন্ত বড় মাপের একটি সুখবর; বাঙালি জাতির জন্য এটি গৌরব।

৭ মার্চের ভাষণকে ভিত্তিমূল ধরলেও যেকোনো চালাক করিৎকর্মা পরিকল্পনাকারী অবশ্যই চিন্তা করা উচিত ছিল ঘটনা কোন দিকে যেতে পারে? বঙ্গবন্ধুর চতুর্পাশের জ্ঞানী ব্যক্তিদের দায়িত্ব ছিল এটা। আপনি বঙ্গবন্ধুর আপনজন ছিলেন। ওই আমলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়নগুলোর মধ্যে মোট পাঁচটি পূর্ব পাকিস্তানে ছিল। আপনার যদি দূরদর্শিতা থাকত, আপনি চিন্তা করতেন বেঙ্গল রেজিমেন্টগুলোর নেতৃত্বে কে আছে, আমরা তাদের চিনি কি না, তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে কি না? না থাকলে কী করা উচিত? ইংরেজি ভাষায় একটি বাক্য আছে, ইগনোরেন্স ইজ এ ব্লিস; অর্থাৎ অজ্ঞতাই শান্তি। তবে সব অজ্ঞতা নয়; সব অজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয় না। যেই মাপের নেতৃত্বে আপনি প্রতিষ্ঠিত আছেন সেখানে কিছু অজ্ঞতা লুকানোই ভালো। নিঃসন্দেহে আমি আপনার তুলনায় অনেক ছোট। আপনি যখন লাখো ছাত্রের নেতা, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি তখন একজন নগণ্য ছাত্র। হ্যামিলনের বংশীবাদকের পেছনে বালকেরা দৌড়াত, সেই ১৯৬৮-৬৯ সালে আমরাও পিপীলিকার মতো সেই মিছিলে থাকতাম, যার নেতৃত্বে থাকতেন আপনারা। জনাব তোফায়েল আপনি তখন অবিসংবাদিত ছাত্র ও যুবনেতাদের একজন।

অতএব আপনার মধ্যে আর আমাদের মধ্যে তুলনা হবে না; আপনি শ্রদ্ধেয়, আপনি সম্মানিত এবং ইতিহাসের পাতায় আপনার নাম অঙ্কিত। কিন্তু তার মানে এই নয়, সেই দুষ্টু ক্যান্সারে আপনিও আক্রান্ত হবেন। ক্যান্সারটি কী, জিয়াউর রহমানের নাম শুনলেই কলিজার ভেতরে স্পট পড়া, রক্তের শিরাগুলোর মধ্যে রক্ত হিম হয়ে যাওয়া। জনাব তোফায়েল, আপনি নিজেই আমাদের দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধপূর্ব অতি গৌরবোজ্জ্বল রাজনৈতিক জাতীয় ইতিহাসের একজন প্রশংসনীয় নেতা; আমাদের কামনা আপনি সেখানে স্থিত থাকুন। জিয়াউর রহমান অন্য একটি অঙ্গনের নেতা, ইতিহাসের আরেক অধ্যায়ের নেতা; রণাঙ্গনের নেতা, রাষ্ট্রের নেতা, রাষ্ট্রনায়ক, আন্তর্জাতিক বিশ্বের সুপরিচিত প্রেসিডেন্ট। আমরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করার আহ্বান রাখি।

লেখক : মেজর জেনারেল (অব:); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি 

ই-মেইল : mgsmibrahim@gmail.com