ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মঙ্গলবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ত্রুটিপূর্ণ বিচারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতার ফাঁসি অবশ্যই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে স্থগিত করতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক চম্পা প্যাটেল বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের ন্যায়বিচার দেশটির জনগণের প্রাপ্য। কিন্তু ক্রমাগত মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মাধ্যমে এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে না। এতে দেশের মধ্যে কেবল অস্থিরতা ও অসন্তোষ এবং সমাজিক বিভাজন সৃষ্টি করবে।
সংবাদে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রধান অর্থদাতা মীর কাশেম আলীর রিভিউ আপিল খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
এতে আরো বলা হয়, গত সপ্তাহে জাতিসংঘের কিছু বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি মীর কাশেম আলীর মামলাটি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া ছিল ‘ভুল’ এবং এতে ‘অনিয়ম’ ঘটেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) কাছে ন্যায় বিচারের দাবি জানায়। এতে আরো বলা হয়, বিচারে বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের মামলার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় দেয়া হয়নি এবং ইচ্ছামত সাক্ষীর সংখ্যাও কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
চম্পা প্যাটেল আরো বলেন, ‘আইসিটি প্রথম থেকেই বিচার প্রক্রিয়াকে কলঙ্কিত করে আসছে। মৃত্যুদণ্ড একটি নিষ্ঠুর এবং অপূরণীয় শাস্তি, যা কোনোভাবেই সুবিচার নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তারা সুবিচারের দাবিদার। মৃত্যুদণ্ড বিলোপের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এই মুহূর্তে এ ধরনের সকল মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।’
চম্পা প্যাটেল বলেন, ‘সংস্থাটি মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশেম আলী এবং বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের জন্যও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত ৯ আগস্ট মীর আহমেদ বিন কাশেমকে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই সাদা পোশাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এর পর থেকে তাকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।’
চম্পা প্যাটেল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গুম দিবসে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মীর আহমেদ বিন কাশেমের গুম রহস্যের বিষয়টি দ্রুত, যথাযথ এবং কার্যকরভাবে তদন্ত করতে হবে।’
এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বলা হয়, আইসিটি হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের তৈরি একটি আদালত, যা ২০১০ সালে গঠিত হয়। এই আদালতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও বিচার করা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল, অভিযুক্তরা যেন সুবিচার পায় এবং তাদের যেন মৃত্যুদণ্ড দেয়া না হয়। এই আদালতে অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী মামলাগুলোতেও অনিয়মের অভিযোগ ছিল।
এতে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে অ্যামনেস্টি মোট আটজনের শাস্তির তথ্য নথিভুক্ত করেছে। এরমধ্যে চলতি বছরের ১০ মে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা মতিউর রহমান নিজামীও রয়েছে।