মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

0
574
blank

ঢাকা : করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমদানি কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর ডলারের প্রয়োজনও কমে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা উদ্বৃত্ত ডলার কিনে বাজার স্বাভাবিক রাখার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত চার দিনে বাজার থেকে ২৫ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবারই কিনেছে প্রায় আট কোটি ডলার। জানা গেছে, প্রায় তিন বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে।

মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় হার বর্তমানে ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ হার স্থির রয়েছে। আগের মাস জানুয়ারিতে এ হার ছিল ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী কয়েক মাস টাকা ও ডলারের এ হার অপরিবর্তিত রাখতে চাইছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স উৎসাহিত করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো সাধারণত রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে বৈদেশিক মুদ্রা পায়। আমদানি ব্যয় কমার পাশাপাশি গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি আয়েও মন্দা চলছে। তবে রপ্তানি আয় কমার চেয়ে আমদানি ব্যয় কমেছে বেশি। এ ছাড়া রপ্তানি কমার কারণেও আমদানি কমছে। অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে চাঙ্গাভাব রয়েছে। এতে মুদ্রাবাজারে ডলারের সরবরাহ অনেকটাই বেড়েছে।

প্রতিটি ব্যাংকের ডলার ধারণের একটি সীমা দেয়া আছে। কোনো কারণে ওই সীমা অতিক্রম করলেই তা বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার সংবিধিবদ্ধ মূলধনের ২০ শতাংশের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা নিজের কাছে রাখতে পারে না। বৈদেশিক মুদ্রা রাখার এ সীমাকে বলা হয় নেট ওপেন পজিশন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রথম সাত মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশ। এর মধ্যে একক মাস হিসেবে জানুয়ারিতেই কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে আমদানি ব্যয় আরো কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ২২৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২০.২০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছর থেকে রেমিট্যান্সের বিপরীতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার ফলে রেমিট্যান্সের এই ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি বাজার থেকে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর প্রায় প্রতি মাসেই বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ১২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার, ২০১৮ সালে ২৩৭ কোটি ডলার এবং ২০১৯ সালে ১৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডলার বিক্রি করা হয়েছে আট কোটি ৩০ লাখ ডলার। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মার্চ থেকে ডলার বিক্রির বদলে উল্টো কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে গত ৯ মার্চ থেকে ১২ মার্চ চার দিনে কেনা হয়েছে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার।