ঢাকা: চূড়ান্ত করা হয়েছে মেট্রোরেলের বিধিমালা। গত ৩ নভেম্বর ‘মেট্রোরেল বিধিমালা, ২০১৬’ এর গেজেট জারি করেছে সরকার। বিধিমালা অনুযায়ী, মেট্রোরেল স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লাইসেন্স ফি বাবদ ২০০ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। মেট্রোরেল পরিচালনায় ২৫ বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হবে। ভাড়া নির্ধারণ কমিটি মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়ার হার নির্ধারণ করে সুপারিশ করবে। এক্ষেত্রে কমিটি রুট, আরোহণের দূরত্ব এবং প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিবেচনায় নেবে। একই সঙ্গে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয় এবং অন্যান্য গণপরিবহনের ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে ভাড়া নির্ধারণ করবে কমিটি। ‘মেট্রোরেল আইন, ২০১৫’ অনুযায়ী বিধিমালা করতে গত বছরের অক্টোবরে খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। খসড়া মেট্রোরেল বিধিমালার উপর ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মতামত নেওয়া হয়। বিধিমালায় বলা হয়েছে, মেট্রোরেল স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লাইসেন্স ফিস বাবদ ২০০ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। এ পরিমাণ টাকা ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে দিতে হবে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি বাছাই কমিটি লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন করবে। কমিটি আবেদন পাওয়ার ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে সবকিছু যাচাই-বাছাই এবং বিস্তারিত অনুসন্ধানের পর সরকারের কাছে লাইসেন্স দিতে বা না দিতে সুপারিশ করবে। আবেদনকারী মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সেবা দিতে এবং লাইসেন্সের শর্ত পূরণে সক্ষম হলে সরকার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে লাইসেন্স ইস্যু করবে। শর্তপূরণ না করায় লাইসেন্স ইস্যু না করলে ১৫ দিনের মধ্যে তা আবেদনকারীকে জানাবে। নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে কমপক্ষে ২ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে মুক্তি পাওয়ার পর ৫ বছর পার না হয় বা দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর কেউ ওই দায় থেকে মুক্তি না পায় তাহলে সেই ব্যক্তি মেট্রোরেল পরিচালনার লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য হবেন না বলে বিধিমালায় বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, লাইসেন্স হস্তান্তর করতে হলে কমপক্ষে ১০ বছর মেট্রোরেল পরিচালনার পর তা করতে হবে। গত ২৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬) প্রকল্পের নির্মাণ কাজ অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেলের রুট হবে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। লাইসেন্সধারী আইন বা এই আইনের অধীনে প্রণীত অন্য কোন বিধি বা প্রবিধানের বিধান লঙ্ঘন করলে, আইনানুগ আদেশ অমান্য করলে, লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করলে, অযোগ্যতার বিষয়গুলো গোপন করে লাইসেন্স গ্রহণ এবং লাইসেন্সে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেবা দিতে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। স্থগিত বা বাতিলের কারণ উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্য চেয়ে ৩০ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ লিখিত নোটিশ মেট্রোরেলের লাইসেন্সধারীকে দেবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে সরকার পুনরায় প্রস্তাব আহ্বান করতে পারবে। আবার পুরনো চুক্তি নবায়নও করতে পারে। এছাড়া সরকার চাইলে মেট্রোরেলের রুট পুনর্বিন্যাস করতে পারবে। এক্ষেত্রে রুট অনুসারে লাইসেন্সের শর্ত পরিবর্তন হতে পারে। মেট্রোরেল পরিচালনায় কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দিলে তা নিরসনে আপিল কর্তৃপক্ষ থাকবে। সরকারের সচিব পদমর্যাদার একজন ব্যক্তি আপিল কর্তৃপক্ষের প্রধান হবেন। ট্রেজারি চালানে এক হাজার টাকা ফি জমা দিয়ে এ কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করা যাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য ‘ঢাকা ম্যাস ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) গঠন করা হবে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) হবে ডিএমটিসিএল-এর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় পর্যায় থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হবে। ২০২০ সালে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। মেট্রোরেলের মাধ্যমে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত আসতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার। ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পে জাইকা প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে প্রায় ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মেট্রোরেলের রুট হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড (উপর দিয়ে)। থাকবে ১৬টি স্টেশন। প্রতিঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে এ রুটে। মেট্রোরেলের রুট হবে উত্তরা তৃতীয়পর্ব থেকে পল্লবী, বেগম রোকেয়া সরণি পশ্চিমপাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট, হোটেল সোনারগাঁও, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, তোপখানা রোড হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো হবে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সচিবালয় ও মতিঝিল।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.