মৌলভীবাজার পৌর শহরের বড়হাটের কাছে বাড়ইকোনা নামক স্থানে মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গন (৪০ ফুট) দেখা দেয়ায় পৌর শহরের দুই ওয়ার্ড সম্পূর্ণ এবং একটি ওয়ার্ড আংশিক বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বড়হাট এলাকার বাসা-বাড়িতে কোমর পানি, বুক পানি। চারটি খাদ্য গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। সদর উপজেলা চত্তর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। লোকজন বাসার ছাদে, দোতলায় আশ্রয় নিয়েছে।
শহরের ভেতরে ঢাকা-সিলেট সড়কে নৌকা চলছে। পরিবার-পরিজনকে উ্দ্ধার করার জন্য বাইর থেকে কেউ কেউ ছোট ট্রাকে করে নৌকা নিয়ে সড়কে নামিয়েছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহরের পশ্চিম বাজারের বাটার কোম্পানির দোকান পর্যন্ত সড়কের উপর পানি ছিল। সময় বাড়ার সাথে সাথে পানি নতুন জায়গা দখল করছে। বস্তা ফেলার কিছু সময়ের মধ্যেই ভাঙ্গন দেখা দেয়।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এর আগেই সেনাবাহিনীসহ এই বাঁধ পর্যবেক্ষণ করা হয় কিন্তু কোনো আলামত মিলেনি। ভোরবেলা বড়হাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষজন ছাদের উপরে কেউ দু’তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। পৌর মেয়র ফজলুর রহমান কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড পরিশ্রম করছিলেন শহর রক্ষার জন্য। বড়হাটের তার নিজ বাসায় এখন পানি। জানালেন, পৌরসভার ৬, ৯ সম্পূর্ণ এবং ৮ নং ওয়ার্ড আংশিক এখন পর্যন্ত বন্যা কবলিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ, এলজিইডি জেলা কার্যালয়ে কোমর সমান পানি। কুসুমবাগ ও উপজেলায় অবস্থিত চারটি খাদ্য গুদামে পানি প্রবেশ করেছে।
বড়হাট এলাকার বাসিন্দা পৃত্তিরাজ দত্ত পরিবারের সদস্য দুজন নিয়ে পানি ভেঙ্গে শহরের দিকে আসছিলেন। জানান, ভাঙ্গনটি তার বাসার কিছু দুরে। বাসায় এখন বুক পানি। মালামাল কিছু সরানো যায়নি। খাট, পালং, ফ্রিজ, টিভি বাসার ভাসছে। কুশুমবাগে অবস্থিত পেট্রোলপাম্পে পানি উঠে যাওয়ায় রিজারভার থেকে লরিতে করে পেট্রোল সরাতে দেখা গেছে। আজ ভোরে গিয়ে দেখা যায় কুসুমবাগ শপিং সিটির সামনে রাস্তার পাশের নিচু জায়গায় কিছু বস্তা ফেলে বাঁধ দেয়া হয়েছে। শহরের পূর্ব-দিকে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে। কিছুক্ষণ পর একদল তরুণ এসেই এই বাঁধ তুলে দিলেন। মুহূর্তেও মধ্যে পানি চলে আসে পূর্বদিকে পশ্চিম বাজার পর্যন্ত। কয়েকজন পুলিশ তাদের বাধা দিতে চাইলে তারা মারমুখী হয়ে উঠে। বলতে থাকে, আমারা ক্ষতিগ্রস্ত হবো আর অন্যরা ভালে থাকবে তা হবে না। একজন সচেতন নাগরিক এই দৃশ্য দেখে মন্তব্য করেন হিংসা কাকে বলে।
এদিকে রাজনগর উপজেলার মনুনদীর বিভিন্ন ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এরাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে। মৌলভীবাজার কুলাউড়া সড়কে এখনো পানি। মানুষ পায়ে হেটে পার হতে ভয় পাচ্ছে । সড়ক উপছে প্রবল স্রোতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহি প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী (সকাল সাড়ে ৯টা) জানান সবচেষ্টা করেও ভাঙ্গন ঠেকানো গেল না। বাড়ইকোনার পয়েন্টটি পূর্বে চিহ্নিত করা যায়নি। সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দিব কোথা এমন অবস্থা হয়েছে। জানান এটি চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথে বস্তা নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু ফেলাও হয়। এই মধ্যেই রাত সাড়ে ১২টা বা ১ টার দিকে ভেঙ্গে যায় প্রায় ৪০ ফুটের মতো জায়গা। তিনি আরো জানান, নদীর পানি কিছু কমছে। মনু নদীর পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে এখন ১৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, মনু স্টেশনে ৪০ সেন্টিমিটার উপর এবং কুশিয়ারা শেরপুরে ৩৯ সেন্টিমিটার উপরদিয়ে এবং ধলাই ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.