যৌনদাসী এক কিশোরীর করুণ গল্প

0
860
blank
ফাইল ছবি
blank

অনলাইন ডেস্ক: কম বয়সে তার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মা-বাবা। এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি; শেষমেশ মা-বাবার সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া।

অভিমানী এই কিশোরীকে সাহায্য করার কথা বলে নিজের বাড়ি নিয়ে যেতে চান এক প্রতিবেশী নারী। মিষ্টি কথায় ভুলে ওই নারীর সঙ্গে তাঁর বাড়ি যান কিশোরী। আর তাতেই তার জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। ওই নারী অন্যকে দিয়ে ধর্ষণ করানোর চেষ্টা করেন কিশোরীকে। কিন্তু এতে ব্যর্থ হলে কিশোরীকে গত ছয় মাসে তিন দফা যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেন। এই ছয় মাসে ঘরবন্দী হয়ে অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের পর অবশেষে পালিয়ে যায় কিশোরী। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে।

আজ বুধবার ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ওই কিশোরী কারজাত জেলা থেকে অপহরণ হয়। পরে তাকে গুজরাটের আহমেদাবাদে তিন দফা যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ছয় মাস পর চলতি বছরের ১১ মার্চ সে পালিয়ে আসে। প্রতিবেশী ওই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিরে আসার পর কারজাত পুলিশের কাছে ওই কিশোরী অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তার অভিযোগ নেয়নি। উল্টো ওই কিশোরীকেই হেনস্তা করেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় কারজাত থানার সামনে বিক্ষোভ করে জনতা। পরে শিশু কল্যাণ কমিশনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কিশোরীকে প্রতিবেশী ওই নারী প্রথমে রায়গড় জেলার একটি বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর গুজরাটের এক নারী পাচারকারীর কাছে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানে চোখ বেঁধে তাকে একটি অন্ধকার ঘরে রাখা হয়। সেখানে তাকে ধর্ষণ করানোর চেষ্টা করা হয়। পরে ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ওই কিশোরীকে যৌনদাসী হিসেবে কিনে আহমেদাবাদের কোনো এক স্থানে নিয়ে যান। ওই ব্যক্তি তাকে জোর করে যৌন কাজে বাধ্য করতেন। একবার এর বিরোধিতা করায় তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। এমনকি তাকে খাবারও দেওয়া হতো না। এভাবে এক মাস ধর্ষণ করার পর কিশোরীকে আবার আগের পাচারকারী নারীর কাছে ফিরিয়ে দেন ওই ব্যক্তি। পাচারকারী নারী আবারও কিশোরীকে আরেক ব্যক্তির কাছে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেন। একই ভাবে তার ওপর চলে ধর্ষণসহ অসহ্য শারীরিক নির্যাতন। এখানে তাকে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে দেওয়া হতো। চলতি মাসের শুরুর দিকে সে খাবার না খেয়ে সাহায্য চেয়ে চিৎকার শুরু করে। এ সময় আশপাশের মানুষ ঘটনাস্থলে গিয়ে কিশোরীকে উদ্ধার করে। ১১ মার্চ বাড়ি ফিরে পরিবারের কাউকে না পেয়ে সে থানায় অভিযোগ করতে যায়। পুলিশ ওই কিশোরীর কথা শুনে অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং মেয়েটি মিথ্যে বলেছে বলে উল্টো অভিযোগ করে। এ ঘটনায় স্থানীয় জনতা থানার সামনে বিক্ষোভ করে। পরে রায়গড় জেলার নারী ও শিশু কল্যাণ অধিদপ্তর বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে।

রায়গড় জেলার নারী ও শিশু কল্যাণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ওই কিশোরী অধিদপ্তরের কাউন্সিলরকে ঘটনাটি খুলে বলে। অধিদপ্তর পুলিশকে অভিযোগ নিতে নির্দেশ দেয়। পরে পুলিশ শিশু পাচার আইনে মামলা দায়ের করে।

নারী ও শিশু কল্যাণ কর্মকর্তা মহেন্দ্র গায়কড় বলেন, কিশোরীকে নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাকে তিনবার যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল।

রায়গড় জেলার চাইল্ডলাইন কো-অর্ডিনেটর অশোক জাংলে বলেন, ‘কিশোরীর জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, কারজাত জেলাতেই যৌনদাসী ব্যবসার কেন্দ্রস্থল। পরে তাকে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। এখানে মূলত ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরীরাই অপহরণ হয়ে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি হয়। মামলাটি কারজাত জেলায় স্থানান্তরের জন্য দাবি জানানো হয়েছে। এতে অভিযুক্ত নারীর বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।’

কারজাত জেলার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক বিজয় চাওড়ে বলেন, কিশোরীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে।

আগে কেন কিশোরীর অভিযোগ নেওয়া হয়নি উল্টো তাকেই হেনস্তা করা হয়েছে—জানতে চাইলে বিজয় চাওড়ে বলেন, ‘এগুলো মিথ্যে কথা। ইতিমধ্যে আমরা কিশোরীকে অপহরণ করা প্রতিবেশী নারীকে গ্রেপ্তার করেছি।’